সৈয়দপুরে অবৈধ ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারে রোগ নির্ণয়ের নামে রোগীদের জিম্মি
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরে সরকারী অনুমোদনহীন একাধিক অবৈধ ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে । সাধারণ রোগীদের সাথে প্রতারণার এই ব্যবসাও চলছে জমজমাট ভাবে ।
সরকারী হাসপাতালের এক শ্রেণীর অর্থলোভী-স্বার্থাণ্বেষী চিকিৎসকের সহযোগিতায় এসব গড়ে উঠেছে ।
এসব ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং টেকনিশিয়ান না থাকায় রোগীরা অনেক সময় সঠিক রিপোর্ট পান না । ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিকদের নিজস্ব দালাল ও কমিশনভোগী কিছু অসাধু ডাক্তার রোগীকে মল-মূত্র, অালট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, এক্স-রে পরীক্ষার জন্য এসব ল্যাবরেটরীতে পাঠান ।
বিভিন্ন ভাবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, সৈয়দপুর শহরের এসব অবৈধ ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে সরকার নির্ধারিত ফি অনুসরণ করা হচ্ছে না । প্যাথলজিক্যাল টেস্টে যারা যেভাবে পারছে ইচ্ছেমত হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা । অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, গ্রামের অসহায় রোগীরা এসব চক্রের ফাদে পড়ে তাদের প্রিয় পোষা গরু বিক্রি করে কিংবা জমি বন্ধক রাখে অার যাদের গরু-জমি কিছুই নেই তারা সুদের উপর টাকা নেয় । ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিকদের এমন অমানবিক শোষণ নীল চাষীদের ওপর ইংরেজদের শোষণ কেও হার মানিয়েছে ।
এদিকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সৈয়দপুরে কতগুলো ডায়াগনোস্টিক সেন্টার রয়েছে এ সংক্রান্ত কোন সঠিক তথ্য তার কাছে নেই । এমনকি এখন পর্যন্ত কোন ভুয়া ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না – এমন তথ্যও নেই সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে ।
বেসরকারী এক পরিসংখ্যান মতে, সৈয়দপুরে প্রায় অর্ধশতাধিক ডায়াগনোস্টিক সেন্টার রয়েছে । গড়ে ওঠা এসব ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট , মাইক্রোস্কোপ টেকনিশিয়ান , রি- এজেন্ট ফ্রিজ এবং প্রয়োজনীয় স্পেস থাকার নিয়ম থাকলেও ৮০ ভাগ ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে এগুলোর ঘাটতি রয়েছে ।
সবচেয়ে অবাক করার বিষয়, অধিকাংশ ল্যাবে প্যাথলজিষ্টই নেই । তাতে কি! ব্যবসা কিন্তু দিব্যি চলছে ।
অাবার নাম সর্বস্ব এসব ডায়াগনোস্টিক সেন্টার গুলোর সাইনবোর্ড ও প্যাডে ডাক্তারদের নাম-ডিগ্রীও ব্যবহার করা হয় । ফলে ঐ সমস্ত বড়-বড় ডিগ্রী ধারী ডাক্তারদের প্রকৃত যোগ্যতা নিয়ে সাধারণ মানুষদের প্রশ্ন উঠেছে ।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, একজন প্যাথলজিষ্ট ৭/৮ টি ল্যাবরেটরীর সাথে যুক্ত থাকেন ।
তিনি কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন না । ল্যাবরেটরীতে নিযুক্ত স্বঘোষিত টেকনিশিয়ান রোগী প্রদত্ত মল-মূত্র সহ বিভিন্ন টেস্ট প্রসেস করেন, অার ওই প্যাথলজিস্ট কমিশনের ভিত্তিতে রিপোর্টের প্যাডে দস্তখত করেন । শহরের ডায়াগনোস্টিক সেন্টার গুলোতে কমিশনের প্রতিযোগিতা এখন সবচেয়ে বেশী ।
নাম ও সাইনবোর্ড সর্বস্ব এসব ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিকরা ডাক্তারদের রোগী সরবরাহের ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৬০ ভাগ কমিশন দিচ্ছে বলে জানা গেছে ।
এ যেন সাধারণ মানুষদের রক্ত চুষে এমবিবিএস ডাক্তারদের ৫-৬ তলা বাড়ি করা অার গাড়ির তেল কিনে বিলাসিতা করার মহৌসব !!
মন্তব্য চালু নেই