শেখ হাসিনাকে নিয়ে আপত্তিকর কবিতার লেখক এখন ছাত্রলীগ নেতা

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়া একজনকে ইতালি শাখার সহসভাপতি এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগের ছাত্র বিষয়ক সংগঠন ছাত্রলীগ। রবিবার সাত দেশের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বাছাই করে গণমাধ্যমে যে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় তাতে ইতালি শাখার সহসভাপতি হিসেবে আতিকুল ইসলামের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। একই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে বেঝে নেয়া হয়েছে শাহিন শাহরিয়ারকে।খবর ঢাকাটাইমসের।

এই নেতৃত্ব বাছাইয়ের পর পরই বিষয়টি ধরা পড়ে। এ নিয়ে ছাত্রলীগে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান রনি তার ফেসবুক পেজে লিখেন, “এটা দেখে একজনে লিখছে, ‘আমদানি করে নেতা বানালে এমনই হয়। খোঁজ নিলে এমন নাকি ভুরি ভুরি পাওয়া যাবে।’ আর একজন মন্তব্য করছে, ‘টাকা আর স্বজনপ্রীতির কাছে আদর্শ জলাঞ্জলি। যারা নেতা বানাইছে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড খোঁজার সময় এসেছে। এটা একবার ঘটেনি। বারবার ঘটছে, এর পিছনে বড় কোন চক্র কাজ করছে।’

রনি লেখেন, ‘যারা এটা নিয়ে ভাইরাল বানিয়ে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে তাদেরকে বলছি, এটা ইতিবাচকভাবে দেখার চেষ্টা করুন। জানেন তো, কমিটিটা করেছে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তারা করেছে মানে এটা সহি ও শুদ্ধ। এই সংগঠনে আর যে কেউ টাকা দ্বারা লালায়িত হতে পারে, যে কেউ স্বজনপ্রীতি করতে পারে কিন্তু কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সেটা করে না। সুতরাং তাদের বচনই ছাত্রলীগের অনুশাসন।’
ছাত্রলীগের নেতারা জানান, ইতালি শাখা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সহসভাপতি আতিকুল ইসলাম ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর তার ফেসবুক পেজে একটি কবিতা পোস্ট করেন। এতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী সাহারা খাতুনকে কটাক্ষ করেন।

এই কবিতার নিচে আবার কমেন্ট করেন ইতালি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন শাহরিয়ার। এতে তিনি আতিকুল ইসলামের কবিতার প্রশংসা করেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতিকে কটাক্ষকারী ও তার বক্তব্যের প্রশংসাকারীকে ছাত্রলীগের নেতা বানানোর বিষয়টি নিয়ে জানতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

একই কাজ করেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।

তবে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম খান এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটিতে আমরা আছি পুতুলের মত। কোনো সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিই নেয়, আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। একেকটা কাজ তারা হুটহাট করে করে ফেলে।’

ছাত্রলীতে অন্য দলের বা আওয়ামী লীগবিরোধীদের নেতৃত্ব পাওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। মুন্সীগঞ্জের এক ছাত্রদল নেতাকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে সম্প্রতি।

গণমাধ্যমে নাম আসার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের একাধিক অনুষ্ঠানে নিয়ে তাদের শাসিয়েছেন। সবশেষ গত রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা দল ভারী করার জন্য দলের কমিটির মধ্যে অনেক আগাছা-পরগাছা ঢুকান, যা সরকারের এত অর্জন ও এত উন্নয়নকে ম্লান করে দেয়।’ তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের প্রধান কাজ হল ছাত্রলীগকে পেরাসাইট (পরজীবী)মুক্তকরা এবং দলের মধ্যে শৃংঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।’

ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেদেহী হাসান রণিও বলেন, ‘যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি দুঃখজনক। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি অন্য দল থেকে লোক ঢুকাচ্ছে, তাদের পুনর্বাসন চলছে।’

ইতালি ছাত্রলীগের কমিটিতে জায়গা পাওয়া দুই নেতার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’

যাদেরকে নিয়ে এত কথা সেই আতিকুল ইসলাম ও শাহিন শাহরিয়ার তাদেরকে নিয়ে সমালোচনা উঠার পর তার ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে তাদের সেই বক্তব্যের স্ক্রিনশট দিয়ে ছাত্রলীগ নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দা জানাচ্ছেন।



মন্তব্য চালু নেই