বনানীর ধর্ষণ মামলার আসামিদের দেশত্যাগে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা

রাজধানীর বনানীতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে সে ব্যাপারে ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি।

সোমবার বিকেল থেকে ডিএমপির নির্দেশনায় বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীতে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় গত ৬ মার্চ দুই তরুণী বনানী থানায় মামলা করেন। বনানী থানার পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে।

ইমিগ্রেশন পুলিশের এএসপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ধর্ষণের ওই ঘটনায় কোনো আসামি যাতে পালাতে না পারে সেজন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে লিখিত ও মৌখিক নির্দেশনা পেয়েছি। কেউ যাতে পালাতে না পারে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনারের কক্ষে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি, উত্তর) উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বনানীতে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করা গেছে। আসামিরা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন তাদের গ্রেফতার করা হবে, ছাড় দেয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ধর্ষণে অভিযুক্তরা প্রভাবশালী পরিবারের। তাদের প্রভাবে মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে পারে বলে অভিযোগ ভিকটিম পরিবারের। এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি উত্তরের এ ডিসি বলেন, মামলা হয়েছে। অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ ছায়া তদন্ত করছে। থানা পুলিশ তাদের মতো করে তদন্ত করবে। ডিবি পুলিশও আইন অনুযায়ী আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা করছে। প্রক্রিয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ পালিয়ে গেছে কিনা সে রকম কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। কেউ পালিয়ে যেতে পারবে না। তারা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে গত ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাত আহমেদ নামে বন্ধুর জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়েই বন্ধুদের যোগসাজশে ধর্ষণের শিকার হন দুই তরুণী। ওই ঘটনায় ৪০ দিন পর শনিবার সন্ধ্যায় বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন ওই তরুণীরা। মামলা নং ৮।

মামলার আসামিরা হলেন সাদনান সাকিফ, তার বন্ধু সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী (নাম পাওয়া যায়নি)।

তবে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের ঘটনায় দুই তরুণীর ওপর দায় চাপিয়েছেন অভিযুক্ত সাফাত আহমেদের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ।

তিনি দাবি করেছেন, তার ছেলের সঙ্গে পূর্বশত্রুতার জের ধরে এমন কাজ করেছেন তার সাবেক স্ত্রী।

দিলদার আহমেদ বলেন, ‘আমার ছেলে (সাফাত) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকাকে বিয়ে করে। তবে আমি সেই বিয়ে মেনে নেইনি। বিয়ের পর সেই মেয়ের নানা ধরনের অসৎ উদ্দেশ্য দেখে আমার ছেলে তাকে তালাক দেয়। সাফাতের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী তাদের দিয়ে এমনটি করিয়েছে। কারণ মামলা করার জন্য ওই মেয়েই দুই তরুণীকে থানায় নিয়ে যায়।’

সেদিন রাতে রেইন ট্রি হোটেলে সাফাতের ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেই রাতে যদি কিছু হয়ে থাকে সেটা আপসেও হতে পারে। ধর্ষণ হলে নিশ্চই ৪০ দিন মামলা করার অপেক্ষা করত না তারা। পুলিশের রিপোর্ট পেলে দুই তরুণীর বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করা হবে বলেও হুমকি দেন দিলদার আহমেদ।

অন্যদিকে মামলা দায়েরের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ওই দুই তরুণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ধর্ষণের আলমত সংগ্রহ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ। তিনি জানান, সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণের আলামত মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। যেহেতু তারা বলছে ধর্ষণের ঘটনাটি প্রায় দেড় মাস আগের, সেজন্য আদৌ কোনো আলামত পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

সোহেল মাহমুদ ছাড়া কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন কবির সোহেল, মমতাজ আরা, নিলুফার ইয়াসমিন ও কবিতা সাহা। বোর্ডের অধীনে দুই তরুণীর মাইক্রোবায়োলজি, রেডিওলজি ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানান বোর্ডপ্রধান।

এ বিষয়ে দুই তরুণীর পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তারা কয়েকদিন ধরে ওই দুই তরুণীকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছিল। তাই তারা মামলা করেছে।

এদিকে মামলার দুদিন পরও ধর্ষক কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে বনানী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আব্দুল মতিন বলেন, ‘আসামিদের ধরতে আমাদের অভিযান চলমান। তবে এ পর্যন্ত কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি।’



মন্তব্য চালু নেই