কিশোরগঞ্জে টর্নেডোতে ৪শতাধিক বাড়ীঘর বিধ্বস্ত॥ আহত শতাধিক

শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ৮টার সময় কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া ও গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের অন্তত ৪শতাধিক বাড়ীঘর বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের নতুন টেপারহাটের পাশ থেকে গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের পিছনের দিক থেকে কয়েকটি বাড়ী গাছপালা ও কিছূ মৌসুমী ফসলের ক্ষেত লক্ষ্য করা গেছে।

তবে মাগুড়া ইউনিয়নের পাটোয়ারী পাড়া,মিয়াপাড়া ,কুটিপাড়া,বানিয়াপাড়া,খামাত পাড়া, তেলিপাড়া,কাজিপাড়া,ঠাটারী পাড়া,কলেজ পাড়া,দর্জিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাড়ীঘর গাছপালা,গরু ছাগল,হাসঁ মুরগি,আম কাঠালের গাছ,বাঁশঝাড়,ভুট্রা বিদ্যুতের তাঁর খুঁটি ও ডিস লাইনের তাঁর ও বেশ কিছু জমির ফসলসহ ৪শতাধিক পরিবার লন্ডভন্ড হয়েছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্দিকুর রহমান,উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, থানা অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমানসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের পিছন থেকে হঠাৎ করে একটি ধুলোর কুন্ডরির মতো হয়ে খুব দ্রুত বেগে গাছপালা বাড়ীঘরকে বিধ্বস্ত করে দিয়ে মাগুড়া ইউনিয়নের দিকে চলে যায়। কিছূক্ষন পরে হালকা বৃষ্টি হলেও তা বেশিক্ষন স্থায়ীত্ব ছিলনা। গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য “মিঠু জানান,টর্নেডোর স্থায়ীত্ব ছিল ৮/১০ মিনিটের মত। আর এ সময়ের মধ্যে মাগুড়া ও গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের ৮/১০টি গাম ও ফসলি জমির ক্ষেতকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে”। রাতের বেলা এ টর্নেডো হওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার লোকজন ভয়ে ছুটাছুটি করতে গিয়ে অনেকে আহত হয়ে পড়েছে। আবার অনেকের মধ্যে ঘরে আসবাবপত্র ও ঘরের টিন উড়িয়ে এবং গাছপালার ডালের আঘাতে আহত হয়ে পড়েছে।

আহতরা স্থানীয় চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ী ফিরেছেন এবং বেশী আহত হওয়া ব্যাক্তিরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। টর্নেডোতে বাড়ীঘর ও ঘরের ব্যাড়া বিছানা,লেপ তোশক এবং অন্যান্য তৈজসপত্র কোথায় উড়িয়ে গেছে তা জানে না অনেক পরিবারের লোকজন। আবার যার পরিবারের কোন কিছূ উড়িয়ে না গেলেও বাড়ীঘর বিধ্বস্ত হয়ে পড়ায় না খেয়ে না পড়ে আছে অনেক পরিবার।

অন্যদিকে রংপুর অঞ্চলের জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রেমিক মানুষের প্রিয় লাঙ্গল অফিসের চেয়ার টেবিল,ফ্রিজ,টিভি,ফ্যান ও ৭০হাজার টাকায় তৈরী সিলভার প্লেনসিট দিয়ে লাঙ্গল টর্নেডোর আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়ায় সংসদ সদস্যকে জানার পরও ক্ষতিগ্রস্থ অফিসের ব্যাপারে লাঙ্গল কমিটির নেতা কমীদের কোন আশ্বস্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লাঙ্গল সমর্থক গোষ্ঠির নেতারা। অনেক অসহায় দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো খাদ্যের অভাবে কান্নাকাটি করছে।

সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে অনেক গরীব অসহায় মানুষ রাতে রান্না করা খাবার পর্যন্ত খাইতে পারে নাই। পাটোয়ারী পাড়া গ্রামের “মোসলেমা খাতুন জানান,রাতে রান্না করছি পানি আনি ভাত খামো তার আগে ঘরসহ ভাত তরকাই সব উড়িয়া গেইছে” বলে হাউ মাউ করে কান্নাকাটি করছে। আবার কেই কেই সংবাদ কর্মীদের কাছ থেকে কিছু খাবার চাচ্ছে। রাতের টর্নেডোর আঘাতে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে যাওয়ায় এলাকায় অনেক বাড়ীতে বিদ্যুতের সংযোগ কবে সচল হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। তবে টর্নেডোতে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় রবিবার বিকাল পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন খাবার না পৌছায় অনেক লোক না খেয়ে দূর্বল হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্দিকুর রহমানের সাথে কথা হলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান,উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং প্রত্যেক পরিবারকে ১০কেজি করে চাল দেয়া হবে। তিনি জানান,সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে এবং সরকারের পাশাপাশি এনজি ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থাগুলোকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদেরকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার আহবান জানান।



মন্তব্য চালু নেই