অসুস্থ্য বাবাকে নিয়েই ভিক্ষা করছে পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী শিশু শিমু
হামিদা আক্তার : বাবা বড় ধন রক্তের বাঁধন, কখনও সে হয় না পর জনমও জনম। বাবার মত আর কেউ হবে না সন্তানের দরদী। বাবাই তো ভ্যান চালিয়ে আমাগো সংসার চালাতো। আমার জামাকাপড় কিনে দিতো, খাতা ও কলম কিনে দিতো। বাবা অসুস্থ্য, স্কুল যামু ক্যামনে ? বাবা অসুস্থ্য হয়ে পড়লে মা ও আমি বাবার সাথেই থাকি। কি খামু ? বাবাকে কিভাবে সুস্থ্য করম ? টাকা নাই।
তাই লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে এহন বাবার ভ্যান নিয়ে বাবা ও মাকে সাথে নিয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করছি। কথাগুলি বলছিলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী শিশু কন্যা আফরোজা আক্তার শিমু। সে তার অসুস্থ্য বাবার চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে অসুস্থ্য বাবাকে ভ্যানে বসিয়ে নিজে ভ্যান চালিয়ে পথে পথে টাকা সংগ্রহ করছে এ দৃশ্য দেখে বাবা-মায়ের সাথে ভ্যানচালক শিশু কন্যা শিমুর ছবি ক্যামেরায় বন্দি করে ফেলেন স্থানীয় সংবাদকর্মী দোলোয়ার হোসেন।
সংবাদকর্মীর মাধ্যমে জানা যায়, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বেলতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী এই শিশু কন্যা আফরুজা আক্তার শিমু। ভ্যান চালক দিনমুজুর হতদরিদ্র অসহায় সিরাজুল ইসলামের সংসার জীবন ভালোই চলছিলো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস অভাব আর অটনের সংসারে যা উপার্জন করত তা স্ত্রী পুত্র ও সংসারে ঘানি টানতেই শেষ। যেন নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। এ অবস্থায় হঠাৎ ভ্যান চালক সিরাজুল শরীরের দুর্বলতা নিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পরে। অভাবী সংসারে বন্ধ হয়ে যায় উপার্জনের পথ। একদিকে নেই কোন উপার্জন।
অন্যদিকে অসুস্থ্য দরিদ্র অসহায় সিরাজুল অসুস্থ্যতা বাড়তে থাকে। এক সময় প্রায় এক বছর পূর্বে সিরাজুল প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে পরে। একবারেই অচল হয়ে যায় তার ডান হাত ও পা। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকায় সংসারের সব কিছু শেষ করে ফেলেছে স্ত্রী। এরপর আর কোন উপায়ন্তর না পেয়ে লেখাপড়া ছেড়ে বাবা-মায়ের দু;খের সাথী হয়ে অসুস্থ্য বাবার পাশে দাঁড়াতেই এই শিশু কন্যা পথে পথে ঘুরছে। হাত পেতেছে বিত্তশালীদের কাছে। এর শেষটা কোথায় এই ছোট্ট শিশুটি বুঝতে পারছে না। কিন্তু তারপরও অবুঝ শিশুটি বাবাকে সুস্থ্য রাখতে ও মায়ের মুখে দু মুঠো অন্ন তুলে দিতেই হয়ত চেষ্টা তার নিরন্তন। হযত তার ভাগ্যেটাই এরকম। তাই এই বয়সে ধরতে হলো বাবা-মায়ের সংসারের হাল। খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে, অসুস্থ্য সিরাজুলের পরিবারে ২ মেয়ে ও এক ছেলে। সে অসুস্থ্য হওয়ার পূবেই তার বড় ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে পৃথক হয়ে গেছে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে বিয়েও দিয়েছে সিরাজুল ইসলাম। সংসারে এখন শুধু তার এই ছোট্ট মেয়ে শিমু আর তারা স্বামী-স্ত্রী। বাধ্য হয়েই শিশু কন্যা শিমু বাবা-মাকে নিয়ে ভ্যান চালিয়ে রাস্তায় নেমেছে। ভ্যানে শুয়ে থাকা শিশু কন্যার বাবা সিরাজুলের সাথে কথা হলে দু’চোখের অশ্রু ছেড়ে দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, সংসারে আয় করার মতো কেউ নেই তাই সংসারের খরচ ও চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে বাধ্য হয়ে স্কুলের ক্লাশ নষ্ট করে আমার আদরের শিশু কন্যা শিমুই তার মাকে নিয়ে আমাকে ভ্যানে শুয়ে রেখে ভিক্ষা করছে।
এ দৃশ্য দেখার আগেই কেন সৃষ্টিকর্তা আমাকে নিয়ে গেলো না। এ বিষয়ে আব্দুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়েন উদ্দীন শাহ বলেন, আগামী অর্থ বছরে প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকায় সিরাজুলকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কথা হয় বেলতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খালেদা রোকেয়া সাথে তিনি বলেন, আফরুজা আক্তার শিমু ছাত্রী হিসেবে মেধাবী কিন্তু বাবা অসুস্থ্য হওয়ার পর সে আর নিয়মিত স্কুলে আসে না।
মন্তব্য চালু নেই