কিশোরগঞ্জে স্কুলের বাউন্ডারী ওয়াল ও কক্ষ সংকটে শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়েছে

খাদেমুল মোরসালিন শাকীর, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি॥ নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের সিঙ্গেরগাড়ী জহুরিয়া শরীফ উচ্চ বিদ্যালয়ের বাউন্ডারী ওয়াল প্রয়োজনীয় শ্রেনী কক্ষ না থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীরা নানাবিধ সমস্যায় পড়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে শাহ মোঃ আবু রায়হান তাদের পারিবারিক ভাবে আলোচনা করে ১একর ৪ শতাংশ বেশী জমিতে সিঙ্গেরগাড়ী জহুরিয়া শরীফ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুল প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে শুরু করে অদ্যাবধি সকল পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে শিক্ষার্থীরা প্রায় শতভাগ সফলতা অর্জন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনামকে অক্ষুন্ন রেখেছেন।

১৯৯৪ সালে প্রধান শিক্ষক হিসাবে শাহ মোঃ গোলাম মোস্তফা যোগদান করেন। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ আরও ৭জন শিক্ষকসহ মোট ৮জন শিক্ষক মিলে স্কুল প্রতিষ্ঠার হাল ধরেন। প্রায় ৭ বছর পর স্কুলটি নানান চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে ২০০১ সালে মান্থলি পেমেন্ড অর্ডার (এমপিও) লাভ করেন। দীর্ঘদিন স্কুলটি সু-নামের সাথে বালিকা বিদ্যালয় হিসাবে শিক্ষার বিস্তার লাভ করায় পরবর্তীতে ২০১৪ সালে স্কুল পরিচালনা কমিটির পরামর্শে ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অনুমতিতে বালক ও বালিকা সমন্বয় স্কুলে রূপ নেয়। বর্তমানে ৫১৩ জন শিক্ষার্থী ও ২১জন শিক্ষক কর্মচারী ও ৯টি কক্ষ বিশিষ্ট স্কুলের ৩টি বিল্ডিং ও ৬টি আধাপাকা কক্ষ নিয়ে স্কুলটির শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১১ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে ৩ কক্ষ বিশিষ্ট বিল্ডিং নির্মান করা হলেও মোট ৯টি কক্ষে সংকীর্ণ জায়গাতেই ৫১৩ জন শিক্ষার্থী কষ্টে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে প্রায় দু’শতাধিক শিক্ষার্থী সিঙ্গেরগাড়ী জহুরিয়া শরীফ উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শাহ মোঃ আবু রায়হান। এমতাবস্থায় সরকারী ভাবে পাঠদানের জন্য কমপক্ষে ৫/৬টি কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন জরুরী। তা না হলে প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত ছাত্র ছাত্রীরা নানান জটিলতায় পড়বে।

স্কুলটির সাথেই বাজার ও ব্যস্ততম সড়ক থাকায় এবং স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছে। দুপুরের পরে স্কুলের পাশে বাজার লাগলে শিক্ষার্থীদের মন ক্লাশ থেকে বাজারের দিকে চলে যায়। আবার কিশোরগঞ্জ-রংপুর সড়কের সাথে স্কুলটি হওয়ায় রাস্তার উপর দিয়ে চলাচলকারী কিছু বখাটে পথচারীদের উত্যক্তের শিকার হয় মেয়ে শিক্ষার্থীরা। স্কলের টিফিন সময়ে মেয়ে শিক্ষার্থীরা মাঠে কোন ভাবেই খেলাধুলা ও অন্যান্য বিনোদন মূলক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্কুলের চারদিকে বাউন্ডারী ওয়াল না থাকায় মাঝে মধ্যে বখাটে যুবকরাও স্কুলের মাঠে বসে নির্ধিদায় মাদক সেবন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করছে। স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র নাহিদ জানান, অনেক সময়ে বহিরাগতরা রাতের আধারে স্কুলের ভিতরে এসে অবাধে নেশা করে স্কুলের সিগারেটের মুড়া (মোড়ক) ও মাদক সেবনের পর কাছের বোতল যত্রতত্র মাঠে ক্লাশ রুমের ভিতরে ফেলে দিয়ে যায়। স্কুলের বাউন্ডারী ওয়াল এবং গেট থাকলে এসবের হাত থেকে প্রতিষ্ঠান রেহাই পেত। দশম শ্রেণীর ছাত্রী ইশা,৭ম শ্রেণীর ছাত্রী দৃষ্টি ও ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ঐতিহ্য বলেন,আমরা স্কুলের মাঠে কোন ধরণের খেলা খেলতে পারিনা বা কোন বিনোদনমূর্খী কোন চর্চা করতে পারি না। মাঠে খেলাধুলা ও বিনোদন চর্চা করলে রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী সাধারণ মানুষের তা চোখে পড়ে। অনেক সময় মেয়েদের খেলাধুলা করার সময় রাস্তার পথচারী বখাটেদের দ্বারা উত্ত্যক্তের শিকার হয় মেয়েরা। তাদের দাবী সরকারী ভাবে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের পাঠদানের জন্য ক্লাশ রুম, ছাত্র ছাত্রীদের জন্য পৃথক পৃথক ভাবে কমন রুম ও জরুরী ভাবে স্কুলের বাউন্ডারী ওয়াল নির্মান করা হলে স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ উন্নত হবে এবং শিক্ষার পরিবেশ পেয়ে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করে দেশ সেবায় এগিয়ে আসবে। এ ব্যপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহ মোঃ গোলাম মোস্তফা রুনু বলেন,২০১১ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে একতলা ভবন (তিন কক্ষ বিশিষ্ট) পেয়েছি।

কিন্তু শিক্ষার্থী ২০১৪ সালে বালিকা থেকে স্কুলকে উন্নতীকরণের পর কক্ষ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আর স্কুলের বাউন্ডারী ওয়াল না থাকায় ও টিন দিয়ে ঘিরে স্কুলের পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারী ভাবে সহায়তা পেলে স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ ফিরে পাওয়া যাবে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তারিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান,২০১১ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি ভবন দেয়া হয়েছে এবং আরও কক্ষের প্রয়োজন হলে দ্বিতল ভবনের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বরাবর ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে আবেদন করলে ব্যবস্থা হতে পারে। তবে তিনি বলেন উপজেলা পরিষদের কাছে বাউন্ডারী ওয়ালের জন্য আবেদন করলে আমি সুপারিশ করে পরিষদ থেকে দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে দেয়ার চেষ্ঠা করবো। নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরী সাথে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আমার জানা আছে স্কুলের ভবন ও বাউন্ডারী ওয়ালের ব্যবস্থা খুব তারাতারি করে দিব।



মন্তব্য চালু নেই