দহগ্রাম সীমান্তে কিশোরীকে পাচারের চেষ্টা ব্যর্থ : অবশেষে বাবার কাছে কিশোরী

হামিদা আক্তার, নীলফামারী থেকে : রুমানা আক্তার ১৪ বছর বযসী কিশোরী। দুই বছর পূর্বে ৭ম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে আর করতে পারেনি সে। কিশোরী রুমানা সিলেট জেলার বিয়নী বাজার উপজেলার খাড়াপাড়া গ্রামের আছদর আলীর কন্যা। অভাব আর অনটনের মধ্যে বাবা-মায়ের সংসারে বড় হতে থাকে কিশোরী কন্য রুমানা। এরই মধ্যে একই জেলার জাকিগঞ্জ উপজেলার ফরচুয়া গ্রামের সফিক উদ্দিনের পুত্র পাচার কারী দলের সদস্য লায়েক আলী (২৮)’র চোখ পড়ে এই কিশোরীর দিকে। লায়েক আলী ঘোরা ফেরা করতে থাকে রুমানাদের বাড়ীর আশে পাশে। এক পর্যায় সে রুমানার বাবার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিতে থাকে ঐ কিশোরীকে। মোবাইলে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে কথা অল্প কিছুদিন। এরপর কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ফুঁলিয়ে ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে পাচারকারীর সদস্য লায়েক তাকে নিয়ে গত ১১ এপ্রিল সন্ধায় মেয়েটিকে বাড়ী থেকে গোপনে অপহরণ করে এনে লায়েক তার খালাতো ভাই সুমনকে সাথে নিয়ে পাড়িজমায় উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামের আঙ্গোরপোতা গ্রামে। লায়েক ও সুমন দুজন মিলেই ঐ কিশোরীকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় রাত্রী যাপন করে। কিশোরীটিকে অমানবিক শারীরিক নির্যাতন করে তাদের দুজনের সাথেই শারীরিক সম্পর্কেরন জন্য চাপ দিয়ে প্রায় ৫দিন ধরে জোর পূর্বক ধর্ষন করতে থাকে পাচারকারী দলের সদস্যরা। এসময় ভূল বুঝিয়ে কিশোরীকে বিয়ে করবে করবে বলে আশ্বাস দিয়ে সময় কাটাতে থাকে তারা। এদিকে কিশোররী বাবা আছদর আলী মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে বিয়ানী বাজার থানায় নিখোঁজের বিবরণ দিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যার নম্বর-৬৭১ তাং ১৬ এপ্রিল/১৭। অপরদিকে গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে ভারত সীমান্তের কাছাকাছি দহগ্রাম আঙ্গরপোতা সীমান্তে কিশোরীর গলায় ও মুখে ওড়না পেঁচিয়ে ভারতের অভ্যান্তরে পাচারের সময় টের পেয়ে কিশোরী রুমানা। তাাকে পাচার করা হচ্ছে অন্যের হাতে বিষয়টি টের পেয়ে কিশোরী মেয়ে রুমানা জীবনের শেষ চেষ্টা চেষ্টা করে তাদের হাত থেকে ছুটে পালিয়ে আসে। এ সময় ভারত সীমান্তে পাশেই দহগ্রাম গ্রামের নাসির উদ্দিনের পুত্র জাহিদুল ইসলামের বাড়ীতে এসে মাটিতে লুটিয়ে পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। হটাৎ মুখ ওড়না বাঁধা অবস্থায় একটি ছোট্ট মেয়েকে বাড়ীতে দেখে বাড়ীর মালিক ও এলাকাবাসী আতংকিত হয়ে পড়ে। কিছু সময় পর কিশোরী রুমানার জ্ঞান ফিরে আসলে তাকে জিজ্ঞাসা বাদে মেয়েটির সিলেট অঞ্চলের ভাষা কেহই বুঝতে পারছিলো না। ফলে পরের দিন ১৬ এপ্রিল জাহিদুল তার ভগ্নিপতির বাড়ী নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ের দ: খড়িবাড়ী গ্রামে মৃত জবেদ আলীর পুত্র শাহিন ইসলামের বাড়ীতে নিয়ে আসে অপহৃত মেয়েটিকে। কিশোরী মেয়েটিকে নিয়ে উক্ত গ্রামে এসে আশ্রয় নেওয়ায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। শুরু আালোচনা সমালোচনার ঝড়। এ ঘটনায় গত ১৭ এপ্রিল বিকেলে সরজমিনে দ: খড়িবাড়ী গ্রামে গিয়ে কথা হয় অপহৃত কিশোরী রুমানার সাথে। সে সংবাদকর্মীদের কাছে কান্নাজড়িত কন্ঠে উল্লেখিত ঘটনার বিবরণ তুলে বলে, আমি আমার বাবা-মায়ের কাছে যেতে চাই। এ ব্যাপারে টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়াররম্যান রবিউল ইসলাম শাহিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মেয়েটির সাথে কথা বলে তার বাবার ঠিকানায় যোগাযোগ করা হয়েছে। খবর পেয়ে কিশোরী মেয়েটি বাবা মামা ও আত্বীয় স্বজনেরা গত ১৭ এপ্রিল দিন গত গভীর রাতে এসে পৌছান। আজ ১৮ এপ্রিল সকালে স্থানীয় সাধারণ ও বার্নিরহাট ক্যাম্পের বিজি সদস্যদের উপস্থিতিতে মেয়েটি তার বাবার হাতে তুলে দেওয়া হযেছে। তবে তিনি আরো জানান,মেয়েটিকে তার বাবা কাছে জিম্মায় হস্তান্তর করা হলেও আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই মেয়েটিকে নিয়ে যেতে পারবে তার বাবা। এ ঘটনায় কিশোরী মেয়েটিকে নিয়ে থানার হাট কোম্পানী কমান্ডার মোঃ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সঙ্গীয় বিজিবি সদস্যরা ডিমলা থানায় হস্তান্তর করেন। এ ব্যাপারে ডিমলা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিজিবি’র পক্ষ থেকে মেয়েটিকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু মেয়েটির মিসিং ডায়েরী সিলেটের বিয়ানী বাজার থানায় করা হয়েছে সেহেতু মেয়েটিকে সেখানেই পাঠানো হচ্ছে। এ ঘটনায় বিয়ানীবাজার থানায় মামলা করতে পারবেন মেয়েটি পরিবার।



মন্তব্য চালু নেই