“স্বাচ্ছন্দে নয়, একটু ভালোভাবে চলতে চেয়েছিলাম”
রাজশাহী : প্রিয় মানুষটির পাশে বসে আছে স্ত্রী, সারা শরীর সাদা ব্যান্ডেজে মোড়া। ঝলসে যাওয়া বিবর্ণ মুখ, অসহ যন্ত্রণায় চোখ দুটোতে তীব্র কষ্টের চাহনি। সুস্থ, সুন্দর, কর্মঠ মানুষটি হাসপাতালে মরণ যন্ত্রনায় ছটফট করছেন। এমন যন্ত্রণা দেখে মনে হতে পারে যারা মারা গিয়েছেন তারাই বুঝি মুক্তি পেয়ে গেছেন।
আলু ব্যবসায়ী সাহেব আলী বলেন, স্বাচ্ছন্দে নয়, একটু ভালো ভাবে চলতে চেয়ে ছিলাম। আলুর ব্যাবসা করার জন্য ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন নেয় সাহেব। মঙ্গলবার টাকা তুলে বুধবার আলু কিনতে যায় নওগাঁর মহাদেবপুরে।
বাড়ির জমানো আর লোন তোলা নিয়ে ৭৩ হাজার টাকার আলু কিনেছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া পেট্রল বোমায় দগ্ধ হয়ে এখন পড়ে আছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে।
হাসপাতালে প্রায় আধা পোড়া মানুষটির পাশে বসে অসহায় ভাবে চোখের পানি ফেলছেন স্বজনরা। আহতদের ব্যথাভরা আর্তনাদে ক্ষণে ক্ষণে ভারী হয়ে উঠছে রামেক হাসপাতালের পরিবেশ।
আলু ব্যবসায়ী সাহেব আলীর শরীরের ৪৬ শতাংশ এবং হেলপার ফিরোজের শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। পরিবারের সবচেয়ে আপন মানুষটির এমন দুঃসহ অবস্থা দেখে অসহায় শিশুর মত কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন স্বজনরা।
আলু ব্যবসায়ী সাহেব আলীর স্ত্রী মৌসুমী বলেন, সাহেব আলীর স্ত্রী ছেলে মেয়ে মিলে চার জনের পরিবার। সব টাকা জলে চলে গেলো। এখন কিরবো টাকা নিয়েছি কিস্তি তো দিতে হবে। প্রতি সপ্তাহে ১২শ টাকা কিস্তি টাকা দিতে হবে।
আমার দেড় বছরের ছোট মেয়েটি বাবাকে দেখে চিনতেই পারছেনা। কথা শুনলে বুঝতে পারছে বাবা। কিন্তু চিনতে পারছেনা বাবাকে।
গত বুধবার ৫ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর মাদ্রাসা এলাকায় গভীর রাতে একটি আলু ভর্তি ট্রাকে পেট্রল বোমা মেরেছে দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রাকের ড্রাইভার, হেলপারসহ এক ব্যবসায়ী দগ্ধ হয়েছেন। তাদের রাতেই আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এর মধ্যে টানা ২১ ঘন্টা চিকিৎসার পরে সেলিম মারা যায়। এ ঘটনায় বাকিরা এখনো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ রামেক হাসপাতালে মৃত্যুর দিন গুনছে।
মন্তব্য চালু নেই