ধর্মঘটে বেকার হয়ে পড়েছে রাজশাহীর ২০ লাখ পরিবহন শ্রমিক

ধর্মঘটে থমকে গেছে রাজশাহী অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা। গড়ে প্রতিদিন প্রায় কয়েক কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। এর মধ্যে পরিবহন সংশ্লিষ্টদেরই অন্তত দুই কোটি টাকা। এছাড়া ব্যবসায়ীদেরও মোটা অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ব্যাংক ঋণে চলা এ কারবারে তাই শঙ্কিত সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহীর পরিবহন মালিকদের ভাষ্য, রাজশাহীতে পরিবহন ধর্মঘটে দিনে অন্তত দুই কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে তাদের। বেকার হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের ২০ লাখ পরিবহন শ্রমিক। তারপরও ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে এ ধর্মঘট।

এর আগে রাজনৈতিক হরতাল-অবরোধেও চাকা গড়িয়েছেন চালকরা। এখন উল্টো তারাই বন্ধ করে রেখেছেন। এতে জিম্মি এ অঞ্চলের পুরো অর্থনীতি। গণপরিবন সঙ্কটে দুর্ভোগের অন্ত নেই এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষেরও।

ধর্মঘটে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে রাজশাহী থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষি পণ্যের সরবরাহ। বিশেষ করে প্রতিদিনই রাজশাহী থেকে অন্তত দুই কোটি টাকার ১০০ ট্রাক তাজা মাছ পৌঁছে দেয় রাজধানীতে। এখন তা পুরোপুরি বন্ধ। এতে লোকসান বাড়ছে তাদের।

রাজশাহীর পবা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, বাগমারা, মোহনপুর এবং নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া উপজেলার চাষিরা এই মাছ ঢাকাসহ সারাদেশে পাঠায়। শুধু রাজশাহী জেলার চাষিরাই প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি টাকার ১০০ ট্রাক মাছ ঢাকায় পাঠান। এতে চাষিরা বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা আয় করেন। এখানকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে মাছ চাষ করে।

পবা উপজেলার চিটের মোড় এলাকার মৎস্যচাষি মোজাফফর আলী জানান, তাজা মাছ বিক্রি করলে চারভাগের একভাগ দাম বেশি পাওয়া যায়। পবা উপজেলার অনেক মাছচাষির ভাগ্য বদলে গেছে এই মাছ বিক্রি করে। তবে ধর্মঘটে থমকে গেছে তাদের এ কার্যক্রম। বন্ধ রয়েছে মাছ বিক্রি।

একই অবস্থা পবার পারিলা এলাকার ফুলকপি চাষি ওবাইদুল ইসলামের। তিনি বলেন, জমির ফসল জমিতেই বুড়ো হয়ে যাচ্ছে, পঁচে যাচ্ছে। জমিতে ফসল পেকে যাওয়ার পর যেগুলো জমি থেকে তোলা হয় ও তার জন্য যে পরিশ্রম দেয়া হয় তার দামই ওঠে না।

ওই এলাকার কয়েকজন সবজি চাষি জানান, ধর্মঘটে তাদের সবারই সর্বনাশ হচ্ছে। সবজিতে পয়সা উঠে আসছে না। পণ্য পরিবহন না করতে পারায় শাক-সবজির দামও সারাদেশে কম নয়। তাই কৃষির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত লাখ লাখ মানুষ এখন দিশেহারা। বিশেষ করে এ সব পণ্যের বাজার নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে হওয়ার কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তারা জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন গণপরিবহনে রাজশাহীর আলু, বেগুন, পেঁয়াজ, সিম, কপিসহ নানা সবজি রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। সবজির মৌসুম হওয়ায় এ কারবার চলছিল জমজমাট।

কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটে চাষি ও ব্যবসায়ীদের পড়তে হয়েছে লোকসানের মুখে। থমকে গেছে এ অঞ্চলের চালকল মালিকদেরও কার্যক্রম। বন্ধ রয়েছে দেশজুড়ে চাল সরবরাহ। এর বাইরেও অন্যান্য কৃষি পণ্য সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

বন্ধ রয়েছে সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে আমদানি পণ্য পরিবহন। বর্তমানে বন্দরের পানামা ইয়ার্ডের ভেতরে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যভর্তি ৫ শতাধিক ভারতীয় ট্রাক আটকে রয়েছে। সেই সঙ্গে শতাধিক বাংলাদেশি পণ্যভর্তি ট্রাকও বন্ধ।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দর খোলা রয়েছে, ভারত থেকে পণ্য আমদানিও অব্যহত রয়েছে। কিন্তু বাংলা ট্রাকের অভাবে দেশের অভ্যন্তরের এসব আমদানিকৃত পণ্য যেতে পারছে না।

পানামার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকতা জানান, ইয়ার্ডের ভেতরে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যভর্তি ট্রাক গুলোতে রয়েছে ফল, পিয়াজ, ছাই ও পাথরসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। কিন্তু সোনামসজিদ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ।



মন্তব্য চালু নেই