মডেল রাউধার মরদেহ পুনঃময়নাতদন্তের নির্দেশ

রাজশাহী ইসলামি ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী ও মালদ্বীপের মডেলকন্যা রাউধা আথিফের মরদেহের দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের করা আবেদনের শুনানি শেষে নগর মুখ্য হাকিম আদালত-১ এর বিচারক মাহাবুর রহমান এ আদেশ দেন।

রাজশাহীর আদালত পরিদর্শক আবুল হাশেম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে মরদেহ উত্তোলনের আদেশ দেয়া হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

আদালত পরিদর্শক আবুল হাসেম বলেন, সোমবার বিকেলে রাউধা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহী সিআইডির পরিদর্শক আসমাউল হক রাউধার মরদেহ উত্তোলন করে পুনরায় ময়নাতদন্তের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। মঙ্গলবার দুপুরে সে আবেদনের শুনানি হয় বলেন তিনি।

গত ২৯ মার্চ রাজশাহী নগরের নওদাপাড়ায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেল থেকে মালদ্বীপের নাগরিক মডেলকন্যা রাউধা আতিফের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

রাউধা ওই কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ওইদিন কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানায়, রাউধা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় ওইদিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে নগরীর শাহ মখদুম থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করে।

গত ৩০ মার্চ তিন সদস্যের বোর্ড গঠন করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাউধার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। আর পরের দিন ১ এপ্রিল পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাজশাহীর হেতেমখাঁ গোরস্তানে রাউধাকে দাফন করা হয়।

ওইদিন রাউধা আত্মহত্যা করেছে বলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেয়া হয়। এরপর মালদ্বীপের দুই পুলিশ কর্মকর্তা রাজশাহীতে এসে রাউধার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করেন।

গত ১০ এপ্রিল রাউধার চিকিৎসক বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ রাজশাহীর আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, রাউধাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

এর আগে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাকে খাওয়ানো হয়েছিল। মামলায় রাউধার সহপাঠী সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়। সিরাতের বাড়ি ভারতের কাশ্মিরে।

গত ১৩ এপ্রিল রাউধার বাবার দায়ের করা হত্যা মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি হস্তান্তরের পর ১৫ এপ্রিল থেকে সিআইডি পুলিশ মামলাটি তদন্ত শুরু করে।

গত ২৯ মার্চ বেলা ১১টার দিকে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ ছাত্রীনিবাসের দ্বিতীয় তলার ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধা আথিফের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

রাউধার বাড়ি মালদ্বীপের মালেতে। তার বাবা মোহাম্মদ আতিফ পেশায় একজন চিকিৎসক। ২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি ওই কক্ষে ওঠেন এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রাউধা। এ নিয়ে ওইদিনই হাসপাতালের সচিব আব্দুল আজিজ রিয়াজ থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।

খবর পেয়ে ৩০ মার্চ রাজশাহী আসেন রাউধার স্বজনসহ মালদ্বীপের প্রতিনিধি দল। পরিবারের সিদ্ধান্তে ২১ মার্চ দুপুরের পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়।

রামেক হাসপাতাল ফরেনসিক বিভাগের সাবেক বিভাগী প্রধান অধ্যাপক মুনসুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দল ময়নাতদন্ত করেন। রাউধা আথিফ আত্মহত্যা করেছেন এই মর্মে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। পরদিন নগরীর হেঁতেমখা গোরস্থানে দাফন করা হয় মরদেহ।

রাউধার মৃত্যুর তদন্তে গত ৩ এপ্রিল মালদ্বীপের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রিয়াজ ও জ্যেষ্ঠ পরিদর্শক আলী আহমেদ রাজশাহী আসেন।

তারা রাউধার মরদেহ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক, রাজশাহী পুলিশ, রাউধার সহপাঠী, শিক্ষক এবং হোস্টেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। চারদিনের মাথায় ৭ এপ্রিল দেশে ফেরেন তারা।

এর তিনদিন পর ১০ এপ্রিল রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ রাজশাহীর আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরদিন সেটি রেকর্ড করে শাহমখদুম থানা পুলিশ। মামলার এজাহারে বলা হয়, রাউধাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

মামলায় ভারতের কাশ্মিরের বাসিন্দা ও রাউধার সহপাঠী সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২১) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডিকে। এরপর ১৫ এপ্রিল থেকে সিআইডি আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করে।

বিখ্যাত সাময়িকী ‘ভোগ ইন্ডিয়া’ ২০১৬ সালের অক্টোবরে তাদের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা প্রকাশ করে। তাতে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হয় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মডেলদের নিয়ে।

‘বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য উদযাপন’ (সেলিব্রেটিং বিউটি ইন ডাইভার্সিটি) শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছিলেন মালদ্বীপের এই মডেল।

ভোগ ইন্ডিয়ার ওই প্রতিবেদনের জন্য দেয়া সাক্ষাৎকারে রাউধা বলেছিলেন, মডেলিং আমার কাছে পেশা নয়; শখই বেশি। পড়াশোনা শেষ করে চিকিৎসক হয়ে মানুষকে সাহায্য করা আমার কাছে সব সময়ের জন্য স্বপ্ন।



মন্তব্য চালু নেই