অভিজিৎ হত্যা : প্রথম যে পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় এবং তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা আক্রান্ত হওয়ার পর খবর পেয়ে শাহবাগ থানা থেকে থেকে যে পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন, তিনি হলেন শাহবাগ থানার সাব ইন্সপেক্টর(এসআই) সোহেল রানা। তবে তিনি যখন যান ততক্ষণে আহত অবস্থায় দু’জনকেই ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হয়। এসআই সোহেল রানা তখনো জানতে না কাদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। তাদের পরিচয়ইবা কী। তাই তিনি আর হাসপাতালে না গিয়ে থানায় ফিরে যান।

এসআই সোহেল রানার জবানবন্দি নিয়েছেন ঢাকায় তদন্ত সহয়াতায় আসা এফবিআই সদস্যরা। তাঁরা সোহেল রানার সঙ্গে প্রায় দু’ঘন্টা কথা বলেছেন। জানতে চেষ্টা করেছেন সোহেল রানা ঘটনাস্থল টিএসসির উল্টো দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে গিয়ে কী দেখেছেন তা।

এসই আই সোহেল রানা  জানান, ‘খবর পাওয়ার পর আমি শাহবাগ থানা থেকে রাত ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে জানতে পারি আহত দু’জনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আর ঘটনার সময় আশপাশে কয়েকজন পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন।’ তিনি জানান, ‘আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি অভিজিৎ রায় নামে একজন এবং তার স্ত্রীকে দুবৃত্তরা কুপিয়েছে। তবে অভিজিৎ রায় কে বা তার বিস্তারিত পরিচয় কী তা আমি তখনো জানি না।’

সোহেল রানা জানান,তিনি প্রথমেই ঘটনাস্থল কর্ডন করে আলামাত ঠিক রাখার চেষ্টা করেন। এরপর তিনি ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেন। আলামতের মধ্যে তিনি বাটে কাগজ দিয়ে মোড়ান দুটি রক্তমাখা চাপাতি, একটি ব্যাগ, ব্যাাগের মধ্যে দু’টি পুরনো প্যান্ট, কিছু ওষুধ(ট্যাবলেট), খবরের কাগজ, একাটি চশমা এবং কাটা একটি আঙ্গুল উদ্ধার করেন। পরে তিনি নিশ্চিত হন আঙ্গুলটি অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী বন্যার।

এসআই সোহেল রানা জানান,‘ আমি ঘটনাস্থলে আনুমানিক ৫০ বছরের এক নারীকে পড়ে থাকতে দেখি। তিনি ভয় পেয়ে কিছুটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তাঁকে দেখে আমার নিম্নবিত্ত নারীই মনে হয়েছে।’

সোহেল রানা পরে ওই নারীকে তুলে কথা বলেন। নারী সোহেল রনাকে জানান, ‘দু’জন লোক যখন আক্রমন করে তখন আক্রান্তদের চিৎকারে তিনি তাদের সহায়তা করতে এগিয়ে যান। তখন দুর্বৃত্তরা তাকে ভয় দেখায়। তিনি ভয়ে রাস্তার ওপরে পড়ে যান। সোহেল রানা বলেন, এই নারী দু’জন আক্রমনকারীর কথা বললেও তাদের চেহারা এবং অবয়বের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে পারেনি।

তিনি দু:খ করে বলেন,‘ ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে না পেরে আমি ওই নারীর নাম ঠিকানা রাখিনি। জানতে চাইনি পরে তার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করব। ওই নারী ছাড়া আর তেমন কোন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে আমি কথা বলিনি। আর তাকেও এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

আলামত সংগ্রহ শেষ করে এবং ঘটনাস্থল কর্ডন করে সোহেল রানা রাত ১০টার পর শাহবাগ থানায় ফিরে যান। তিনি আর হাসপাতালে যাননি। সোহেল রানার কথায়,‘থানায় গিয়ে পরে জানতে পারি হাসপাতালে অভিজিৎ মারা গেছেন। এবং তিনি লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়। তাঁর বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অজয় রায়।’



মন্তব্য চালু নেই