রাউধার মৃত্যুর সাথে কোন সম্পর্ক নেই দাবি বান্ধবী সিরাতের

আন্তর্জাতিক মডেল কন্যা রাউধা আতিফের মৃত্যুতে তার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফের দায়ের করা মামলার একমাত্র আসামি সিরাত পারভীন মাহমুদ। তিনি রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার বাড়ি ভারতের কাশ্মীরে । বিদেশী কোটায় সিরাত এই মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। নীল নয়না কন্যার সহপাঠি ও ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিলেন এই কাশ্মিরি কন্যা।

তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মামলার বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সাংবাদিকদের তা জানিয়েছেন রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের সেক্রেটারি আব্দুল আজিজ রিয়াদ।

রাউধার বাবার মামলা দায়ের প্রসঙ্গে তিনি সিরাতের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘সিরাত এখন পড়ালেখা নিয়ে ক্যাম্পাসে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মামলার বিষয়টি সে গণমাধ্যমের মাধ্যমেই জেনেছে। এই নিয়ে মঙ্গলবার সকালে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাও বলেছেন। তবে সে গণমাধ্যমে কথা বলবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

আব্দুল আজিজ রিয়াদ আরো বলেন, সিরাত মামলার কোনও কপি এখনও পাননি। পেলে তার অভিভাবকদের অবহিত করে আইনিভাবে বিষয়টির মোকাবিলা করবেন। সিরাত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, তাঁকে জড়িয়ে রাউধার বাবা যে মামলা করেছেন তা অপ্রত্যাশিত। ঘটনার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্কের লেশমাত্র নেই। সেসহ অন্যরা মিলে দরজা খুলে ঝুলন্ত অবস্থায় রাউধাকে পায়। এটা ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপপ্রয়াস বলে দাবি সিরাতের।

রাউধা ও সিরাতের সম্পর্কের বিষয়ে আব্দুল আজিজ রিয়াদ বলেন, তারা দুজনই কলেজের বিদেশি ছাত্রী। তারা একসঙ্গে ভর্তি হয়েছিলেন। কলেজের সকলেই জানেন তাদের সম্পর্ক খুব ভালো। রাউধাকে হারিয়েছি। আর সিরাত কলেজের বর্তমান ছাত্রী। কলেজ কর্তৃপক্ষ চান না কেউ এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হোক।

এদিকে রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাউধা আতিফ ‘আত্মহত্যা’ করেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে ও লিখিত জবানবন্দি নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলেও জানানো কমিটির পক্ষ থেকে।

মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আব্দুল মুকিত সরকারকে আহ্বায়ক করে ৩০ মার্চ এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার কথা বলা হলেও ১২ দিনের মাথায় মঙ্গলবার কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের কাছে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেন।

তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক ডা. মামুন-উর-রশীদ, বায়োকেমিস্ট্র বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল্লাহ, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও ময়নাতদন্তকারী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এমদাদুর রহমান এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হোস্টেল ইনচার্জ ডা. লায়লা আখতার।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও কলেজ উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল মুকিত সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাউধা আত্মহত্যা করেছে বলে উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন অধ্যক্ষকে জমা দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে মেডিকেল কমিটির ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন, শিক্ষার্থীসহ রাউধার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলে ও লিখিত জবানবন্দি নিয়ে সে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে বলে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

রাউধা কেন আত্মহত্যা করেছেন এ বিষয়ে কিছু জানা গেছে কী সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা বলা মুশকিল। তার আইফোনটা লক আছে। লক খুলে পরীক্ষা করা গেলে অনেকটা বোঝা যাবে।

গত ২৯ মার্চ দুপুরে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ দিন রাতে কলেজ কর্তৃপক্ষ শাহমুখদুম থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। ৩১ মার্চ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। রাউধা আত্মহত্যা করেছে উল্লেখ করে বোর্ড পরের দিন ১ এপ্রিল শনিবার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। প্রাথমিক প্রতিবেদনে আত্মহত্যা করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ দিন মহানগরীর হেতেমখাঁ কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। এ সময় রাউধার বাবা, মা, ভাই, বোনসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ ১০ এপ্রিল সোমবার রাজশাহী মহানগর মূখ্য হাকিম আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এজাহারটি ১১ এপ্রিল মঙ্গলবার শাহমুখদুম থানায় মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই