অন্ত:সত্তা স্কুলছাত্রীকে হত্যারদায়ে যাবজ্জীবন
রাজশাহী ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী : ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার অন্ত:সত্তা স্কুলছাত্রী পুতুল বালা হত্যা মামলায় একমাত্র আসামীকে ওই স্কুলের পিয়নকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম আহমেদ খলিলুর রহমান এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী হলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ভণ্ডগ্রাম মধ্যপাড়া গ্রামের আবদুস সোবহানের ছেলে আমিরুল ইসলাম (৩৪)। তিনি স্থানীয় একটি স্কুলের পিয়ন পদে চাকরি করতেন।
রাণীশংকৈলের নারায়ণপুর গ্রামের গনেস চন্দ্র বর্মনের মেয়ে পুতুল বালাকে (১৮) হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে এ দণ্ড দেয়া হলো। মামলায় মোট ১২ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এন্তাজুল হক বাবু। আর আসামী পক্ষে মামলায় লড়েন এ্যাড. আবদুর রাজ্জাক।
আদালত উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে আসামী আমিরুল ইসলামকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন। অনাদায়ে আরো এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয় তাকে। রায় ঘোষণার সময় আসামী আমিরুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এন্তাজুল হক বাবু জানান, পুতুল বালা ২০০৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় ওই বছর পরীক্ষা দিতে পারেনি। ওই সময় তার স্কুলের পিয়ন আমিরুল ইসলাম তাকে পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার সঙ্গে অবৈধ শারিরীক সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
এক পর্যায়ে পুতুল বালা অন্তসত্তা হয়ে পড়লে সে আমিরুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু আমিরুল তাতে সাঁয় না দিয়ে উল্টো তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরে ২০০৬ সালের ৬ মে রাতে আমিরুল পুতুল বালাকে সবার অগোচরে বাড়ি থেকে ডেকে বাড়ির পাশের একটি ধানক্ষেতের ভেতর নিয়ে গিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
পরদিন সকালে স্থানীয়রা ধানক্ষেতের ভেতর পুতুল বালার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। এ ঘটনার পর দিন ৮ মে পুতুল বালার বাবা গনেস বর্মন অজ্ঞাতনামা আসামী করে রাণীশংকৈল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে স্কুল পিয়ন আমিরুল ইসলামই অন্তসত্তা অবস্থায় পুতুল বালাকে হত্যা করেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে ২০০৯ সালের ৩০ জুন তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মামলাটি ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা জজ আদালতে চলমান থাকায় বিচার কাজ শেষ হচ্ছিল না। পরে গত বছরের ডিসেম্বরে মামলাটি রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এর পর হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১০ বছর পর ঠাকুরগাঁওয়ের চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ সাঁজা আশা করেছিলাম। কিন্তু আদালত যাবজ্জীবন দিয়েছেন। তারপরেও আমরা সন্তুষ্ট।’
তবে এ রায়ে অসন্তোষ প্রকার করে আসামীপক্ষের আইনজীবি আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘আমার মক্কেল ন্যায় বিচার পাননি। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করা হবে।’
মন্তব্য চালু নেই