হুমকির মুখে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ

রাজশাহী : আবারও রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে। পদ্মা ভাঙ্গনের আগে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নগরীর পশ্চিম বুলুনপুর, জিয়ানগর বসরি, নবগংগা, ও পবার সোনাইকান্দি এলাকার মানুষ। এর মধ্যে আসতে শুরু করেছে পদ্মার প্রবাহ সেই সঙ্গে বাড়ছে শহর রক্ষাবাঁধ ভাঙ্গনের আশঙ্কা।

এর পরও চলছে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন। গত বছরও পদ্মা ভাঙ্গনের ফলে দুই পাড়ের মানুষ হয়েছিল ভিটে ছাড়া। এছাড়াও ক্ষেতের জমি, ফলের বাগান পদ্মার গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এবার বর্ষার আগে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ব্যপক ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার হবে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর বসরি এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে অবৈধ ভাবে বালু উত্তলোন। বসরি এলাকার রাহিদ হাসান রুমন বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার কারণেই এলাকায় ভাঙন আরও বাড়তে পারে।

স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহী শহর রক্ষার জন্য ১৮৫৫ সালে বুলনপুর এলাকায় নির্মাণ করা হয় বাঁধ। রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ ভালো রাখার জন্য ওপর দিয়ে সাইকেল পর্যন্ত চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসক।

কিন্তু বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিদিন অনেক ট্রাক শহর রক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে চলাচল করায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বাঁধ। এছাড়ও বাঁধের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন দলীয় কার্যালয়, ক্লাব এমনকি পাকা বসতবাড়িও। শহর রক্ষা বাঁধ ও তার পাশের খাস জমি যে যেভাবে পারছে দখল করছে। প্রভাবশালীদের ভয়ে দখলের বিষয়ে কেউ কিছু বলতে নারাজ।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রভাবশালীরা যেভাবে দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলছে, তাতে বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নগরীর জিয়ানগর এলাকার আবুল হোসেন বলেন, কিছু দিন আগে আমরা বাঁধ রক্ষার জন্য রাজশাহী ডিসি কার্যালয় ঘেরাও করি তারপরও এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি।

পবার সোনাইকান্দি এলাকার আবদুল হকিম নামের এক কৃষক বলেন, আমার বেশ কিছু ফলের বাগান আছে যদি এগুলো পদ্মার ভাঙ্গনে যদি বিলিন হয়ে যায় তাহলে আমি কি করবো, কি খাবো কোথায় যাবো? এই সোনাইকান্দি বাঁধ সংরক্ষণ করার জন্য কর্র্তৃপক্ষের কাছে তিনি জোর দাবী জানান।

পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম নজু জানান, পবার সোনাইকান্দি, বাঁধগুলো রক্ষার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দলোন করে আসছি। বেশ কিছুদিন আগে আমরা নগরীর জিরোপয়ন্টে এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করি তারপরও এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে ভাবছে না।

তিনি আরো বলেন, পবার সোনাইকান্দি, বুলনপুর ও নবগঙ্গা এলাকাজুড়ে যদি ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে গ্রামগুলোকে এবার রক্ষা করা যাবে না। বর্ষার শুরু হওয়ার আগে পদ্মা ভাঙ্গনের আশঙ্কায় নিরাপদ স্থানে পাড়ি জমানোর কথা ভাবছে এই এলাকার মানুষ। তিনি এ সম্যসা সমাধানের জন্য পানিউন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান ।

রাজশাহী সদর-১ আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে শহর রক্ষাবাঁধ সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন যারা অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছেন তাদের সকলকে আইনের আওতায় আনা উচিত।

এ ব্যপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন আর-রশিদ বলেন, বুলুনপুর থেকে সোনাইকান্দি পর্যন্ত পনিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ২৩৪ কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ পেলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাঁধ সংরক্ষণের কাজ শুরু করা হবে।

তিনি আরো বলেন, বাঁধের আশেপাশে অবৈধ স্থাপনাগুলোর তালিকা তৈরী করে পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। খুব দ্রুত এ অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।



মন্তব্য চালু নেই