লোকসান হচ্ছে হোক !
জীবন হারালে তো পাওয়া যাবে না
রাজশাহী : টানা অবরোধে দেশের উত্তরাঞ্চলের মৎস্য আড়ৎগুলোর (বিক্রয় কেন্দ্র) কেনাবেচায় ধস নেমেছে। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন মৎস্য চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
২০ দলের ডাকা টানা অনির্দিষ্টকালের হরতাল-অবরোধের কারণে পরিবহন সংকট চরমে উঠেছে। এ অবস্থায় আড়ৎগুলোতে মাছ থাকলেও বেচাকেনা নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে। এই অঞ্চলের মাছের সবচেয়ে বড় বিক্রয় কেন্দ্র হলো ঢাকা আড়ৎ। কিন্তু হরতাল অবরোধের কারণে যেতে না পাড়ায় অনেক পুকুরে মাছ ছাড়তে পাড়ছে না খামারিরা।
মাছ ব্যবসায়ী রহমত আলী জানান, সালবাগান মাছের আড়ৎ স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন কমপক্ষে আশি থেকে নব্বই মণ মাছ কেনা-বেচা হয়ে থাকে এখানে। আড়ৎ থেকে মাছ সরবরাহ করা হয় সাহেব বাজার, নিউ মার্কট, লক্ষীপুর, বিনোদপুর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ কিনে নিয়ে যায়।
কিন্তু অবরোধে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঝুঁকি থাকায় অনেক ক্ষেত্রে পরিবহন মালিকরা রাস্তায় গাড়ি বের করতে চান না। ফলে অনেক ব্যবসায়ী মাছ একস্থান থেকে অন্যস্থানে সরবরাহ করতে পরছেন না। ফলে কমে গেছে মাছের দাম। এতে মাছ চাষি ও ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
মাছ চাষি সমসের আলী বলেন, আমি আমার পুকুরের মাছ ঢাকায় পাঠাই। ব্যবসায়ীদের কাছে মাছ সরবরাহ করি। কিন্তু অবরোধের কারণে নিয়মিত গাড়ি না চলাচল করায় মাছ বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না।
রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল অবরোধ দিলেই আমাদের দারুন সমস্যায় পড়তে হয়। ধার দেনা করে মাছ চাষ করেছি। আমার পুকুর একটার জলকর আট বিঘা আর একটা দুই বিঘা। আমি প্রতি চার মাস পর পর মাছ বিক্রি করি।
কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে প্রায় সাড়ে সাত মাস হয়ে গেলো মাছ বিক্রি করতে পারি নি। পুকুরে এ বছর ১১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে মাছ চাষে।
সময় মত মাছ বিক্রি না করতে পারায় মাছ অনেক বড় হয়ে গেছে। আর মাছ বড় হলে তার খাবারও বেশি লাগে। এখন কি করবো কিছু কিছু করে মাছ বিক্রি করছি আর মাছের খাবার জোগাচ্ছি। আর নিজে চলছি।
কয়েক দিন আগে কিছু মাছ তুলে বিক্রি করে দিলাম টাকার জন্য। যাদের কাছে ধার করে ছিলাম তাদের অল্প অল্প করে টাকা দিয়ে থামিয়ে রাখলাম।
আবার ঢাকায় যে মাছ পাঠাবো রাস্তায় ঠিক মত যেতে পারবে কি না এ বিষয়ে শঙ্কা থেকে যায়। যদি রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তখন কি হবে। পুকুরে আছে থাক ঝুকি নিয়ে মাছ বিক্রি করতে যাবনা।
এমনিতে ব্যবসাতে লোকসান হচ্ছে। লোকসান হোক মাছ হারালে পাওয়া যাবে। কিন্তু জীবন হরালে তো পওয়া যাবেনা। যদি হরতাল অবরোধ কারিরা এক পেট্রোল বোমা মারে তাহলে কি হবে। কি করবো কষ্ট করে জীবন চালাচ্ছি। দেখি কবে এই অচল অবস্থা ঠিক হয়।
মন্তব্য চালু নেই