স্ট্যান্টবাজিতে মেতে ওঠা তরুণদের গল্প

রাজশাহী মহানগরীতে রাস্তায় চলতে চলতে পথিকরা থমকে দাঁড়ান। অবাক হন, একদল তরুণের সাইকেল কসরৎ দেখে। কেউবা দুহাত ছেড়ে দিয়ে, আবার কেউবা সাইকেলের সামনের হাতলে পা রেখে আড়াআড়িভাবে শুয়ে এমনি নানা স্টাইলে সাইকেল চালাচ্ছেন। ওদের ভাষায় ‘স্ট্যান্ট’। খুবই আকর্ষণীয় তরুণদের এই সাইক্লিং স্ট্যান্ট।

দলবেঁধে ৩০-৩৫ তরুণের সাইক্লিং স্ট্যান্ট রাজশাহীর রাস্তায় হরহামেশাই দেখতে পাওয়া যায়। কখনো রাস্তার একদিকে বন্ধ করে, কখনো বা পাড়ার কোনো একটা রাস্তা আটকে রেখে চলে তাদের এই সাইকেল স্ট্যান্টবাজি। ঠিক তেমনই এই স্ট্যান্টবাজি দেখতে ভিড় জমে যাওয়ার দৃশ্যটির সঙ্গেও পরিচিত রাজশাহীর মানুষ।

তাদের এই কসরৎ দেখতে ভিড় জমায় পথচলা শিশুসহ সকল বয়সি মানুষ। যারা স্ট্যান্ট করেন তাদের মধ্যে আছেন বিভিন্ন বয়সি স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীরা। সাধারণত ৫ম থেকে শুরু করে ইন্টারমিডিয়েট পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যেও রয়েছে সাইকেলে স্ট্যান্ট প্রদর্শনের ব্যাপক আগ্রহ।

তরুণরা এই স্ট্যান্ট শেখার আগ্রহে কিংবা স্ট্যান্ট করার জন্য সাইকেল কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন মহানগরীর বিভিন্ন সাইকেলের দোকানে। উঠতি বয়সি তরুণদের সাইকেল চাই-ই চাই। বাবা-মায়ের কাছে আবদার ধরে কিংবা নিজেরা টাকা জমিয়ে তারা কিনছেন সাইকেল।

রাজশাহী মহানগরীতে সাইকেল নিয়ে স্ট্যান্টের আগ্রহ তরুণদের মধ্যে প্রথম চোখে পড়ে দুবছর আগে। তখন অল্প দুএকজন তরুণ সাইকেলে স্ট্যান্ট করতেন। এখন তা অনেক বেড়ে গেছে। তরুণদের সাইক্লিং স্টান্টের জন্য গড়ে উঠেছে রয়েল রেঞ্জারস। এর সদস্য সংখ্যা ৭০’র অধিক। রিয়েল স্ট্যান্টদের মধ্যে আছেন, সিয়াম, মাহমুদ, বিজয়, রবি, জনি, তাজু, অনিক, ফাহিম, রীব, পরাগ, রুদ্র, আহমেদ, অনিক ও ডিউকসহ অনেকেই।

তারা এটাকে স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনই মনে করেন। নিজেরা নিজেরাই শেখেন। একজন প্রশিক্ষক আছেন বটে। তবে তারা মনে করেন, চর্চার মধ্য দিয়েই এটা শেখা সম্ভব। যে যত বেশি চর্চা, তত বেশি ভালো।

এরা বিভিন্ন জায়গায় স্ট্যান্ট করে পুরস্কারও ঘরে এনেছে।

অলি আহমেদ পরাগ দুবছর ধরে শিখছে স্ট্যান্ট। সে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে ৭ম শ্রেণিতে পড়ে। পরাগ জানায়, এটা নিয়ম মেনে চর্চা করতে হয়। যারা যত ভালোভাবে চর্চা করবে, তারা তত বেশি দক্ষতা অর্জন করবে।

স্ট্যান্টরা যে সব কৌশল শিখেন- তার মধ্যে আছে রোলিং স্ট্রপি, রোলিং এনডো, হাই চেয়ার হুইলি, হাই চেয়ার এনডো, হাফ ক্রস হ্যান্ড সার্কেল, ক্রস অ্যান্ড সার্কেল, হ্যান্ড বার ক্রিস্ট, সুইচ ব্যাক সাসপেনশন ক্রিস্ট, ফ্লেমিঙ্গ, সুইসাইড বানি হপ, নো ফ্রন্ট হাই চেয়ার হুইলি ও ফ্রি হ্যান্ড হুইলি প্রমুখ।index

স্ট্যান্টরা সবচেয়ে বেশি সমস্যার মধ্যে পড়েন স্থান নিয়ে। মেট্রোপলিটন টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম ইনস্টিটিউটের ছাত্র সিয়াম মাহমুদ বলেন, স্ট্যান্ট করতে গিয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি জায়গা সংকটে পড়ি। প্রধান সড়কের একপাশে রাস্তা বন্ধ করে খেললে পুলিশ এসে তাড়িয়ে দেয়। ভালো জায়গা পেলে আমরা আরো অনেক ভালো করতাম।

এরা সাধারণত রাণীবাজার এলাকার প্রধান সড়কের একধার বন্ধ করে স্ট্যান্ট করে থাকেন। এ ছাড়া সিটি বাইপাস, স্টেশন এলাকা, উপশহর, কলাবাগানে তারা প্র্যাকটিস করে।

আদিব বলেন, ২০১৩ সালে প্রথম শুরু করি। এটা প্রধানত বিনোদনের জন্য করি, পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে করি। এতে পড়ালেখার কোনো ক্ষতি হয় না। মা-বাবাকে বুঝিয়ে ও অনুমতি নিয়ে আমরা এ স্ট্যান্ট করি।

তবে স্ট্যান্ট করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন এরা। এজন্য বাবা-মা ভয়ে থাকেন। শাহরিয়ার কবির বিজয় নামের একজন স্ট্যান্ট এ বছরের জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। জেএসসির দ্বিতীয় পরীক্ষার দিনে তিনি রাইড করতে গিয়ে ডান হাত ভেঙে ফেলেন।



মন্তব্য চালু নেই