রাজশাহীতে লাঠি নিয়ে ভূমিহীনদের মানববন্ধন

রাজশাহীর পবার দারুশা কর্ণহার বড়বিলে সরকারি খাস জমিতে বোরো রোপনের দাবিতে এলাকার ভূমিহীনরা মানববন্ধন করেছেন। বুধবার সকালে বিলপাড়ের ভুমিহীনরা লাঠি হাতে নিয়ে এই মানববন্ধন করেন। এদিকে মানববন্ধনের পরেই প্রতিপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান রেজাউল করিমের লোকজনের মারপিটে এক মাংস ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। এ নিয়ে ভূমিহীনদের দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, হুজুরীপাড়া ইউনিয়নের সাবেক সদস্য মগরেব আলী, কৃষক মাইনুল ইসলাম, আব্দুর রহিম চান্দু, মিজানুর রহমান, মেছের উদ্দিন, সাবেক ইউপির সদস্য মাসুদ রানা ও ভূমিহীন সংগঠনের সভাপতি কাউসার আলী, আব্দুল আজিজ, শহিদুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিন, সাদিয়ার হোসেন, নবীউল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, বেনু কুমার মন্ডল, আবুল কালাম, মেছের আলী, বাদশা হোসেন, মাইনুল ইসলামসহ এলাকার ২০০ জনের বেশি ভূমিহীন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ভূমিহীনরা ১৭ বছর ধরে বিনা লীজে এই জমিগুলো চাষাবাদ করে আসছে। পাশাপাশি তারা আরও বলেন দুই একদিনের মধ্যে জমি চাষের কাজ না করলে বোরো রোপন অনিশ্চিত হয়ে যাবে। জমি লাগাতে না পারলে ভূমিহীনরা চরম বিপদে পড়বে।
বক্তারা আরও বলেন, এলাকার প্রতিপক্ষরা প্রকৃত ভূমিহীনদের ঠকিয়ে সরকারি জমি নিজেরাই ভোগদখলে রেখেছে। প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের কাছে থাকা জমি উদ্ধার করে প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে দ্রুত বন্টনের দাবি জানান। তা না হলে সরকারি দাগ প্রমান ছাড়া আগে যেভাবে চাষাবাদ চলছিল এবারো তাই করা হবে বলে তারা জানান।

এ সময় তারা দাবি করেন, দ্রুত উদ্ভূত সমস্যার সমাধান না হলে বিলের নীচের জমিতে বোরো ধান রোপন সম্ভব হবে না। উপরে জমার জমিতে সেচ দেয়ার কারণে নীচের জমিতে পানি জমে যাবে। সে কারণে নীচু জমিগুলোতে বোরো রোপন করা সম্ভব হবে না। প্রেক্ষিতে অনেক ভূমিহীন, গরীব-দুঃখীকে না খেয়ে থাকতে হবে।

এদিকে মানববন্ধনের পরে এরাকার সাইরপুকুরের মোড়ে সরিশাকুড়ি গ্রামের মাংস ব্যবসায়ী তমির উদ্দিনের ছেলে জয়নালকে প্রতিপক্ষ রেজাউল বাহিনীর লোকজনের মারপিট করে। এতে তিনি আহত হন। এসব তার কাছে থাকা ১৫ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানান তারা। আহতকে উদ্ধার করে পবা সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা গেছে, বড়বিলকে কেন্দ্র করে ভূমিহীনের ব্যানারে এলাকার দুইটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই বিবদমান পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য এরই মধ্যে সরকারিভাবে রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত এই বিলের বরাদ্দের জমি লীজ বা দাবিকৃতদের না দেয়ায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। একদিকে বোরো রোপনের সময় পেরিয়ে যাওয়া এবং অন্যদিকে বোরোর চারার বয়স বেড়ে যাওয়ায় জমিতে বোরো রোপনের দাবিতে এক গ্রুপের ভূমিহীনরা মানববন্ধন করেন।

এরআগে এই বিলের জমি নিয়ে ২৭ জানুয়ারি তারা দারুশা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রকৃত ভূমিহীনের মাঝে জমি বন্টনের দাবিতে সমাবেশ করেন। তার আগের দিন ২৬ জানুয়ারি একই স্থানে দারুশা বহুমূখী ভুমিহীন সমবায় সমিতির উদ্যোগে জমি লীজের দাবিতে সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ভূমিহীন সংগঠনের অনেকেই অভিযোগ করেন, সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান রেজাউল করিম দারুশা বহুমূখী ভূমিহীন সমবায় সমিতি গঠন করলেও তিনিই হয়েছেন কোটিপতি। একে একে তিনি ভূমিহীনদের বঞ্চিত করে ভুয়া দলিল করে নিজেই দখলে রেখেছেন অনেক জমি। এসব কারণে ভূমিহীনরা তার কাছে থেকে সরে এসেছে।

এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময়ে দু’গ্রুপের মধ্যে সহিংস ও অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা করছেন এলাকাবাসি।



মন্তব্য চালু নেই