বদলে যাবে চাষির ভাগ্য : রাজশাহীতেও চাষ হচ্ছে গলদা চিংড়ি
সরকার দুলাল মাহবুব, রাজশাহী থেকে : রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের গোদাগাড়ি ও পবা উপজেলায় মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষের বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে জেলার অনেক চাষি পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষ শুরু করেছেন। লাভের মুখও দেখেছেন তাঁরা। আরো বেশী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে স্বাদু পানিতে চিংড়ি চাষ বাড়বে। খুলে যাবে এ অঞ্চলের মৎস্যচাষীদের ভাগ্য। জেলার অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা।
জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ২০ জন মৎস্য চাষি চলতি সালে জেলায় প্রথম পরীক্ষামূলক গলদা চিংড়ির চাষ শুরু করেছেন। লাভ আহামরি না হলেও আশানুরুপ পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। গোদাগাড়ি ও পবা উপজেলার বরেন্দ্রভূমির স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ করে ব্যাপক সফলতার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
গলদা চিংড়ি চাষে বিশেষ কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য কার্পজাতীয় মাছের সঙ্গেই চিংড়ি সহজে চাষ করা যায়। তবে আলাদা চাষ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। খাদ্যের ক্ষেত্রেও বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। গলদা চিংড়ি পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যেই পরিপক্ব হয়ে ওঠে। ছয় মাসের মধ্যে এদের ওজন ১২০ থেকে ১৪০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। মাছের বৃদ্ধি ভালো। লাভও প্রচুর। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই মাছ চাষে চাষি ও সরকার এগিয়ে আসলে এ অঞ্চলে ভাগ্য বদলাবে।
স্বাদু পানিতে চিংড়ি চাষ সম্ভব কিনা এ নিয়ে চাষিরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন এবং এখনো আছেন। এলাকার অন্যান্য মৎস্যচাষীও চিংড়ি চাষে লোকসানের ভয় দেখিয়ে নিরুৎসাহিত করছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু গত বছর স্থানীয় মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উৎসাহে তিনি চিংড়ি চাষের উপর প্রশিক্ষণ নেন পবার কর্ণহারের শহিদুল ইসলাম ও হরিয়ানের আলী আকবর। পরীক্ষামূলকভাবে তারা পৃথক পৃথক পুকুরে চিংড়ি চাষ শুরু করেন। সকল আশংকা ভয়ভীতিকে পিছনে ফেলে এখন মিঠা পানির গলদা চিংড়ি আশার সঞ্চার করেছে।
পবা উপজেলার কর্ণহারের চিংড়ি চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি নাটোর থেকে পিএল ( পোস্ট লার্ভি বা পোনা চিংড়ি) সংগ্রহ করেন। আগে থেকে চিংড়ি চাষে উপযোগী করে রাখা পুকুরে ওইসব পিএল ছেড়ে দেন। পিএলগুলো মাত্র ২০-৪৫ দিনে সুষ্ঠুভাবেই বেড়ে উঠে কিশোর চিংড়িতে পরিণত হয়। তিনি সাধারনত এই কিশোর চিংড়িই বিক্রি করেন।
হরিয়ানের আলী আকবর বলেন, তিনি শহিদুলের কাছে থেকে কিশোর চিংড়ি সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়েন। তিনি মিশ্র হিসেবে চাষ করেই ভাল লাভ পান। মাত্র ৫-৭ মাসেই এসব চিংড়ি বাজারে বিক্রি করা যায়। তিনি বলেন জেলায় মোটামুটি ২০-২৫ জন চাষি চিংড়ি চাষ করেছন। তারাও চিংড়ি চাষে সফলতা পেয়েছেন। অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এ অঞ্চলে এখনও চিংড়ি চাষ ব্যাপকভাবে হয়ে উঠেনি।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সভাষ চন্দ্র সাহা জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলসহ জেলায় স্বাদু বা মিঠা পানিতে মূলত গলদা চিংড়ির চাষ সম্ভব। কারণ গলদা চিংড়ি স্বাদু পানিতেই বেড়ে ওঠে। তবে বাজারজাত করণে এখনো অসুবিধা আছে। জেলাতে এখনো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তাজামাছ বাজার দখল করে আছে। নতুন কিছু স্থায়ী করতে কিছুটা সময় লাগবে। মৎস্যচাষীদের সহযোগিতা দেয়ার জন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতিও আছে। তিনি জানান চিংড়িচাষে চাষীদের উৎসাহী করতে পারলেই এবং দক্ষিণাঞ্চলের মতো বরেন্দ্র অঞ্চলও চিংড়ি চাষের উৎকৃষ্ট ক্ষেত্র হয়ে উঠবে। খুলে যাবে এ অঞ্চলের মৎস্যচাষীদের ভাগ্য। জেলার অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা।
মন্তব্য চালু নেই