পাট কাটা শুরু, ভাল দামের আশায় কৃষকেরা
সরকার দুলাল মাহবুব : রাজশাহীর মাঠে মাঠে এখন আগাম পাট কাটা ও জাগ দেয়া শুরু হয়েছে। নতুন পাটও বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তবে জেলায় পুরোদমে পাট কাটা এখানো শুরু হয়নি। পুরোদমে কাটতে আরো দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন কয়েকদিন আগের বৃষ্টিতে পাট জাগ দেয়ার মত পানি ডোবা নালায় আছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ জানায় এবার রাজশাহীতে পাটের আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমিতে। আবাদের লক্ষমাত্রা ছিল ১১ হাজার ৩১৬ হেক্টর। দাম ভাল থাকায় এবং অনুকুল আবহাওয়ার কারনে এবার লক্ষমাত্রার চেয়ে আবাদ বেশি হয়েছে। গত বছর পাটের আবাদ হয়েছিল ১১ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের চেয়ে এবং লক্ষমাত্রার চেয়ে এবার প্রায় ১ হাজার ৩৪৬ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবারও ভাল ফলনের আশা করছেন কৃষক ও পাট সংশ্লিষ্টরা।
দেশে আদমজি জুটমিলসহ বড় বড় জুটমিলগুলো বন্ধ হয়ে যাবার পরে চাষিরা কয়েক বছর শুধুমাত্র শাক ও গৃহস্থালী কাজের জন্য পাটচাষ করতেন। জেলায় ২০০১ সালে প্রায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। বিভিন্ন জেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে ছোট ছোট পাটকল স্থাপনের পরে আবারো পাটচাষের পরিধি বাড়তে থাকে। ২০১১ সালে সেখানে জেলায় ১৪ হাজার ২০২ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। পাটের দাম পড়ে যাওয়ায় এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আবারো পাট চাষ কমতে থাকে। ২০১২ সালে পাটচাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৫১৪ হেক্টর। ২০১৩ সালে ১২ হাজার ১০১ হেক্টর এবং চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমিতে।
পাট চাষিদের এক বছর সুদিন আবার অন্য বছরে দুর্দিন অবস্থান করে। কিন্তু এবারে কি দাঁড়াবে সেটা নিয়ে বিড়ম্বনায় কৃষকেরা। নতুন পাটের দাম বর্তমানে ১৯শ’ টাকা থেকে ২১শ’ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। তবে পাটের সার্বিক ভবিষ্যৎ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চাষিরা। পবার তেঘর গ্রামের কৃষক আফাজ উদ্দিন সরকার বলেন, এবারে শ্রমিক, চাষ, নিড়ানি, জাগ ও ধুয়া এবং বাজারজাত করণে প্রায় ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিমণ (৪ কেজি) পাটের দাম ২ হাজারের নীচে হলে চাষিরা লোকসানে পড়বে। কয়েক বছর আগে পাটের দাম ছিল প্রতি মণ ২ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে ২ হাজার ৭শ’ টাকা। সেই আশায় চাষিরা এখনো পাটচাষ করছেন বলে অনেক চাষি জানান।
জেলায় এবারে প্রথম থেকেই পাট চাষে অনুকুল আবহাওয়া বিরাজ করছে। কিছুদিন পরপর বৃষ্টি হওয়ায় আবাদের জন্য খুবই উপকার হয়েছে। আবার আবাদও ভাল হয়েছে। পরিপক্কের পর এখন কাটার পালা। জেলার কোনো কোনো উপজেলায় পাট কাটা হচ্ছে।
মোহনপুরের বেড়াবাড়ি গ্রামের ইয়াদ আলী, বাগমারার কাবাড়িপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, পবার বিলনেপালপাড়া গ্রামের আলতাব হোসেন বলেন, পুরোদমে পাটকাটা শুরু হতে আরো কিছুদিন লাগবে। পাট জাগ দিতে বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন আছে। বৃষ্টি না হলে জাগ নিয়ে চাষিরা বিপাকে পড়তে পারে। তবে কাটা, জাগ দেয়া ও ধুয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে চাষিরা। পাবনা থেকে শ্রমিক এসে কাটা ও জাগ দেয়ার করছে। এ কাজে স্থানীয় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। আর এ সুযোগে শ্রমিকরা বেশী টাকা চাইছে। এবারে বেশীরভাগ জমির পাটই ভাল হয়েছে। গত কয়েক বছর আগে পাটের দাম ভাল থাকায় জেলার পাট চাষিদের মনে এক সোনালি ঝিলিক দেখা দেয়। সেই ঝিলিকের স্বপ্ন ও লাভের আশায় এবারো অনেকে পাট চাষ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাটকলের ব্যবস্থাপক বলেন, বর্তমান বাজারে নতুন পাটের দাম প্রতিমণ ১৯শ’ থেকে ২১শ’ টাকা। তবে পুরোদমে পাট বাজারে আসলে এই দাম নাও থাকতে পারে। নতুন পাট দুই হাজার টাকার বেশি না হলে লোকসানে পড়রে কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, এবারে পাটচাষের অনুকুল আবহাওয়া বিরাজ করায় আবাদ ভাল হয়েছে। উৎপাদনও ভাল হবে। দাম ভাল পেলে আবারো পাটের সুদিন ফিরবে ও সোনালী আঁশের মর্যদা বাড়বে। লাভবান হবেন চাষিরা। আগামীতে চাষ হবে আরো বেশী।
মন্তব্য চালু নেই