ধানে গোলা ভোরলেও মন ভোরলো না

রাজশাহী: রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কালবৈশাখীর দুর্যোগ, শ্রমিক সঙ্কট। তার পরে আবার দাম না থাকায় বেশি হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। প্রতি বছরই ধান চাষে বাড়ছে খরচ। বিপরীত দিকে কমছে চাষের পরিধি। সোনালী ফসল ঘরে উঠতে শুরু করলেও তৃপ্তি নেই কৃষকের। বোরো আবাদ সেচ নির্ভর হওয়ায় এবং শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই কমছে এর পরিধি। এবারেও রাজশাহী অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার হেক্টর কম জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে।

রাজশাহীর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় তিন লাখ ৪০ হাজার ৪৪ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তিন লাখ ৭৪ হাজার ৬৬১ হেক্টর। এ অঞ্চলের মধ্যে বেশী জমিতে বোরো আবাদের চাষ হয় নওগাঁ জেলায়। এ জেলায় এক লাখ ৭৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এছাড়া রাজশাহীতে ৫৭ হাজার ৮৮৫ হেক্টর, নাটোরে ৫৬ হাজার ৮০৮ হেক্টর, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪৭ হাজার ৫২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে।

বিগত বছরগুলোতে আবাদের শুরুতেই বীজের তীব্র সঙ্কট, বীজতলা নষ্ট হওয়া, প্রয়োজনীয় ধানের বীজ না পাওয়া এবং লোডশেডিং থাকলেও এবার তার কোনটিই ছিল না। খুব ভালোভাবেই আবাদ হয়েছে।

বোরো চাষী আবদুল জব্বার জানান, এবার শ্রমিক খরচ বেশী, খরা ও লোডসেডিং আতঙ্ক, পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং সর্বোপরি বাজারে ধানের দাম না থাকাসহ বিভিন্ন প্রতিকুলতার জন্য লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। পাশাপাশি চাষীরা কম সেচের আবাদ গম, ভুট্টা ও ডাল জাতীয় আবাদে ঝুঁকেছেন।

কাঁকন হাট হুজরাপুর কৃষক মুঞ্জুর রহমান জানান, তিনি এ বছর প্রায় ২০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ধান ঝরে গেলেও শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে প্রায় দিগুণ। তার ওপরে বাজারে দাম কম থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন কারণে এখন আর জমির মালিকরা তেমন একটা চাষাবাদ করেন না। তাদের বেশীরভাগ জমিই লিজ দিয়ে দেন। আর লিজের জমিতে এবার বোরো আবাদে ১৬-১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিবিঘা জমিতে ২০ মণের বেশী ফলন হবে না। আবার এ সময়ে ধানের খড় বা আউড় তৈরি করা যায় না। বৃষ্টিতে পঁচে যায়। খড়েরও দাম থাকে না। তাই ধানের ওপরই লাভ-লোকসান নির্ভর করছে।

মহনপুর উপজেলার কৃষক রমজান আলী জানান, তবে ধানের বাজার দর নিয়ে চিন্তিত কৃষক। রাজশাহী অঞ্চলে নতুন ধানের দাম প্রতি মণ ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। আর নওগাঁয় বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫৫০ টাকা। বর্তমান বাজার দর কম হওয়ার কারণ হিসেবে কেউ ভারত থেকে চাল আমদানিকে দায়ী করছে। আবার কেউ জানান, বর্তমানে সরকারের কাছে প্রচুর চাল মজুদ আছে। সে কারণে ধান কেনার প্রতি চাহিদা না থাকায় এমন অবস্থা।

কৃষক ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজশাহী অঞ্চলের বাজারগুলোতে ধানের দাম কম থাকায় কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। একইসঙ্গে সার, ডিজেল, বিদ্যুৎ এবং বালাইনাশকের দাম বৃদ্ধিতে প্রতি বছরই লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই ঝুঁকছেন বিকল্প ফসল চাষে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হযরত আলী জানান, এবার বোরোতে সময় মত সেচ সুবিধা পাওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই