রাজশাহীতে জুলাই মাসে ৪৬ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা

সরকার দুলাল মাহবুব, রাজশাহী থেকে: রাজশাহী মহানগর ও জেলার নয়টি থানায় জুলাই মাসে মোট ৪৬টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ৩০টি ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ১৬টি। স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদপত্রসমূহ এবং এসিডি’র নিজস্ব প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই জরিপ পরিচালিত হয়েছে।

রাজশাহী জেলায় এই মাসে নারী নির্যাতনের বেশ কিছু আলোচিত ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যে গত ১১ জুলাই তিন লাখ টাকা যৌতুকের জন্য রাজশাহী নগরীর ডিঙ্গাডোবা ব্যাংক কলোনির ফজলুল হকের ছেলে শামিউল হক সোহাগ ও তার বাবা-মা, ভাই মিলে লোহার পাইপ দিয়ে স্ত্রী রিফাহ্ তাসফিয়া সালামকে (২১) বেধড়ক মারপিট ও নির্যাতন করে। তাদের নির্মম নির্যাতনে তাসফিয়ার বাম হাত দুই জায়গায় ও ডান হাতের এক জায়গায়, বাম পায়ের দুই জায়গায় এবং বুকের পাজঁরের দুইটি হাড় ভেঙ্গে যায়।

এছাড়াও মাথার আঘাতে ১৭টি সেলাই পড়ে। বর্তমানে তাসফিয়া রামেক হাসপাতালে চিকৎসাধীন আছে। ঘটনার পরের দিন মঙ্গল বার ভিকটিমের মা হেসনে আরা পারভীন বাদী হয়ে রাজপাড়া থানায় একটি মামলা করে। ঘটনার দিনই স্বামী সোহাগকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন আছে।

রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে গত ২৭ জুলাই সকাল ১১টায় ৮ নং ওয়ার্ড ইন্ডোর মেডিকেল অফিসার মোজাম্মেল হক এক ইন্টার্ন নারী চিকিৎসকের যৌন হয়রানি করে । এ খবর জানাজানি হলে অন্য ইন্টার্ন চিকিৎস্রা এসে অভিযুক্তকে গণধোলাই দেয়। এর আগেও অভিযুক্ত ৪-৫ জন নারীকে যৌন হয়রানি করে বলে অভিযোগ আছে। পরে এক জরুরী বৈঠকে কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ডাক্তারকে অন্যত্র বদলির সিদ্ধান্ত নেয়।

গত ২৯ জুলাই শুক্রবার রাতে গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী এলাকার সাড়ইল গ্রামের মেহের আলীর স্ত্রী আঙ্গুরা বেগমকে (৫৮) জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রাতে বারান্দায় ঘুমানোর পর সকালে তার মৃত দেহ দেখতে পেয়ে পরিবারের সদস্যরা পুলিশে খবর দেয়।

জেলায় এই মাসে ৩০টি নারী নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মহানগরীর চারটি থানায় সংগঠিত হয়েছে ২৪টি। মহানগরীর বাইরের ৯টি থানায় সংঘটিত হয়েছে ৬টি নির্যাতনের ঘটনা। এর মধ্যে গোদাগাড়ীতে ৩টি, পুুঠিয়া, চারঘাট ও দুর্গাপুরে ১টি করে মোট ৩টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে হত্যা ২টি, হত্যা চেষ্টা ১টি, আত্মহত্যা ৪টি, আত্মহত্যার চেষ্টা ১টি, যৌন হয়রানী ১৭টি এবং অন্যান্য ৫টি ঘটনা ঘটেছে ।

জেলায় এ মাসে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ১৬টি। এর মধ্যে মহানগরীতে সংগঠিত হয়েছে ৬টি এবং মহানগরীর বাইরের নয়টি থানায় সংঘটিত হয়েছে ১০টি। এর মধ্যে বাঘায় ৪টি, বাগমারা ও পুঠিয়ায় ২টি করে মোট ৪টি, তানোর ও দুর্গাপুরে ১টি করে মোট ২টি শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণ ১টি, ধর্ষণের চেষ্টা ১টি, আত্মহত্যা ৪টি, আত্মহত্যার চেষ্টা ১টি, যৌন হয়রানী ৬টি , অপহরণ ২টি ও অন্যান্য ১টি ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়াতে এসিডি’র নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানান।



মন্তব্য চালু নেই