অবশেষে বাদীই হচ্ছেন আসামি !

রাজধানীর গুলশানে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ফাহিমা সুলতানা ইয়ন (২৫) নামে এক নারী খুন হন। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত হন ইয়নের গৃহকর্মী বীনা।

সে সময় ওই ঘটনায় ইয়নের স্বামী মবিন খান বাদী হয়ে ডাকাতির ঘটনা দেখিয়ে গুলশান থানায় তাদের গাড়িচালক মন্টু পেদাকে আসামি করে মামলা করেন।

মামলায় পুলিশ তাদের গাড়িচালক মন্টু পেদা ও তার স্ত্রী পান্না বেগমকে অভিযুক্ত করে ঢাকা সিএমএম আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল করে। মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর আসে সাক্ষীর পর্যায়ে।

২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি স্বামী মবিন খান সাক্ষ্য দিতে ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় ওঠেন। এ সময় আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা আসামি মন্টু পেদা চিৎকার করে বলে ওঠেন মবিন খানও এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। মবিন খানের নির্দেশে এবং মবিন খানের উপস্থিতিতে ও সহায়তায় ইয়নকে হত্যা করা হয়। ইয়নকে হত্যার আগে গৃহকর্মী বীনাকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বীনা বেঁচে যাওয়ায় মবিন খান নিজে বাঁচতে তাদের নামে মামলা করেছেন। তাকে (মন্টু পেদা) মামলায় খালাস করিয়ে আনবেন বলে প্রলোভন দিয়ে নিজে (মবিন খান) বাঁচতে চেয়েছেন। আর এখন তাদের (মন্টু পেদা ও তার স্ত্রী) বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে এসেছেন।

বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর ও আইনজীবীদের সামনে আসামি মন্টু পেদার এ বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি পুনঃতদন্ত বা অধিকতর তদন্তের আবেদন না করায় ইয়নের মা দিল আফরোজ বেগম ঢাকা সিএমএম আদালতে ঘটনাটি উল্লেখ করে ২০১৩ সালে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা সিআইডি পুলিশ তদন্ত করে। তদন্তের পর সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট দাখিল করা ওই প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে ইয়নের প্রকৃত খুনি তার স্বামী মবিন খান। আর তার সহায়তাকারী হিসেবে আসে চালক মন্টু পেদা, জনৈক মাহমুদুল হাসান খান ও মুকুলের নাম।

অভিযুক্ত মবিন খান ইএটিএল নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। ওই প্রতিষ্ঠানের অর্ধেক শেয়ারের মালিক ছিলেন তার স্ত্রী ফাহিমা সুলতানা ইয়ন। স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে এবং ইয়নের নামে থাকা সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ইয়নকে হত্যা করা হয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

সিআইডি ওই প্রতিবেদন দাখিল করলেও তা সিএমএম আদালত ও মহানগর দায়রা জজ আদালত আমলে না নেওয়ায় পরবর্তী সময়ে ইয়নের মা দিল আফরোজ বেগম হাইকোর্টে ২০১৪ সালে একটি বিবিধ মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ২০১৫ সালের ৩০ আগস্ট বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি আবদুর রব অভিযোগ আমলে নেওয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালকে উক্ত মামলা একই সঙ্গে বিচারের নির্দেশ দেন।

সম্প্রতি হাইকোর্টের রায় নিম্ন আদালতে পৌঁছানোর পর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত নথিটি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে পাঠান।

মঙ্গলবার প্রতিবেদন আমলে নেওয়ার ওপর শুনানি হয়। ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মাদ মাজহারুল ইসলাম শুনানি শেষে আগামী ৫ মে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।

বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজল ও মোহাম্মাদ শাহাবুদ্দিন এবং মবিন খানের পক্ষে অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন শুনানি করেন।

ইয়নের মা দিল আফরোজ বেগম বলেন, ‘জামাতা মবিন এমন অভিনয় করেছে যে, আমরা ডাকাতির ঘটনাই প্রথমে বিশ্বাস করেছিলাম। সত্য চাপা থাকে না, বেরিয়ে আসে। আমরা আশা করি ন্যায়বিচার পাব।’



মন্তব্য চালু নেই