আটটি অফিসে তালা , আটক চার , গ্রাহকদের মাথায় হাত
সাতক্ষীরায় ২০ হাজার গ্রাহকের ৪৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও বেসরকারি বিনিয়োগ সংস্থা আরডিপি
অধিক মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাতক্ষীরার ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ৪৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আরডিপি ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট নামের একটি বেসরকারি বিনিয়োগ ও ঋণ দান সংস্থা ।গ্রাহকদের তোপের মুখে জেলার অফিসগুলিতে তালা ঝুলছে ।
বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফার মাসিক কিস্তি ও মুল টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় বুধবার সাতক্ষীরার অফিস ঘেরাও করেন শত শত গ্রাহক । তাদের সাথে প্রতারনার অভিযোগে পুলিশ সাতক্ষীরা অফিসের চারজনকে গ্রেফতার করে অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে । গ্রেফতারকৃতরা হলেন আবদুল হান্নান , সফিকুল ইসলাম , মো. রোকনুজ্জামান ও নাসিমা খাতুন ।
অপরদিকে জেলার অন্যান্য অফিস থেকে গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দিয়ে কর্মকর্তারা পালিয়ে গেছেন । এছাড়া কালিগঞ্জ অফিস ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে । যারা আরডিপির হয়ে গ্রাহক তৈরি ও তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তাদের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে । এদিকে গ্রাহকরা তাদের টাকা না পেয়ে এখন হায় হায় করছেন । তারা জানান তাদের স্বল্প আয় থেকে নিয়মিতভাবে সঞ্চয় করে তা আরডিপিতে বিনিয়োগ করে এখন পথে উঠেছেন ।
সাতক্ষীরা আরডিপি অফিসের ইনভেস্টমেন্ট কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান জানান তারা স্বাবলম্বী , প্রতিশ্রুতি , ব্যবসা , উদ্যোক্তা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে আসছেন । এসব প্রকল্পের আওতায় কেবলমাত্র সাতক্ষীরা অফিসের সদস্য সংখ্যা সাড়ে চার হাজার । তাদের কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ নিয়ে তাদের অনুকূলে ২ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে । সাতক্ষীরা শহরে আরডিপির নামে ১৪ কাঠা জমি রয়েছে যার দাম চার কোটি টাকা ।
এছাড়া ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় অফিসে বাকী টাকা জমা দেওয়া হয়েছে । তিনি আরও বলেন জেলার আটটি অফিসের অনুকূলে সাড়ে চার হাজার সদস্য রয়েছেন । তাদের বিনিয়োগকৃত টাকার অংক কিছু কম বেশি ৪৫ কোটি টাকা । ঢাকার ৩২ পুরানা পল্টনের প্রধান অফিস দেশের ৭১ টি শাখা অফিস সরাসরি পরিচালনা করে আসছে বলে জানানো হয় । রোকনুজ্জামান জানান তার সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এম. ইবরাহীম খলিল ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক উজ্জ্বল ।
তারা সরাসরি শাখা অফিসের টাকা নিয়ে থাকেন । ইসলামী ব্যাংক , আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকে রয়েছে তাদের লেনদেন ।
গ্রাহকরা বলছেন তারা নিয়মিত মুনাফার টাকা পাচ্ছেন না । মুল টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না । তাদের মধ্যে সর্বনিম্ন ১ লাখ থেকে ২১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীও রয়েছেন । তারা দৈনিক , মাসিক কিস্তিতে টাকা দিয়ে সঞ্চয় করেছেন । সুলতানপুরের মাসুদুর রহমান জানান তিনি এক লাখ টাকা জমা রেখেও তার মুনাফা পাচ্ছেন না । বকচরার ওলিউর রহমান এক লাখ ৩৩ হাজার টাকা , শহরের মুন্সিপাড়ার রেজাউল করিম ৫ লাখ টাকা , কালিগঞ্জের তেতুলিয়ার নাসিমা খাতুন বিভিন্ন গ্রাহকের পক্ষে এক কোটি টাকা , পলাশপোলের জাহাঙ্গীর আলম পাঁচ লাখ টাকা , নলকুড়ার খোন্দকার আনিসুর রহমান ২ লাখ টাকা , বরেয়ার আরতি সরকার ৬০ হাজার টাকা , বটিয়াঘাটার হালিমা খাতুন দুই লাখ টাকা , কেড়াগাছির আবদুল হামিদ তার নিজের ও স্বজনদেরসহ ২১ লাখ টাকা , কাজীরহাটের জাকির হোসেন এক লাখ টাকা , চালতেতলার নজরুল ইসলাম দেড় লাখ টাকা , কুকরালির আজহারুল ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেও কোনো মুনাফা পাচ্ছেন না । এমনকি মুল টাকাও ফিরে পাচ্ছেন না । কামালনগর গ্রামের বৃদ্ধ ভিখারী রাবেয়া খাতুন জানান তার দুই প্রতিবন্ধী মেয়ে কমলা ও মর্জিনার নামে দুটি বইতে তিনি ভিক্ষা করে যোগাড় করা ৩০ হাজার টাকা রেখে তাও ফেরত পাচ্ছেন না । তারা এখন টাকা ফেরত পেতে নানা স্থানে দেন দরবার করছেন ।
বুধবার দুপুরে গ্রাহকরা শহরের ইটাগাছা হাটের মোড়ে আরডিপি অফিস ঘেরাও করলে খবর পেয়ে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করে অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে । এর আগে অফিসের ম্যানেজার জুলকার নাইনসহ ১৪ জন পালিয়ে যান। এদিকে আশাশুনি , পারুলিয়া , পাটকেলঘাটা , শ্যামনগর , কালিগঞ্জ , কলারোয়া আরডিপি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে গেছেন । তাদের অফিসগুলিতে তালা ঝুলছে । শত শত গ্রাহক টাকার জন্য তাদের খুঁজে হয়রানি হচ্ছেন । পরে তারা সাতক্ষীরা থানায় যেয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ আকারে তুলে ধরে এর প্রতিকার দাবি করেন ।
এলাকাবাসী জানান ২০১১ সাল থেকে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আরডিপি তাদের অফিস খোলে । তারা জানান সাতক্ষীরা সদর অফিস ভাড়া মাসিক ১৫ হাজার টাকা ও ১৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারির মাসিক বেতন প্রায় দুই লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয় । এ ছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলা অফিসগুলিতেও প্রতিমাসে দুই লাখ টাকারও বেশি ব্যয় হয় পরিচালনা খরচ হিসাবে ।
এসব ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মাসুদা পারভিন বলেন আরডিপি সাতক্ষীরায় নিবন্ধিত সংস্থা নয় । তা সত্ত্বেও তারা টাকা বিনিয়োগ করে জানতে পেরে তিনি তাদের কাছে বারবার চিঠি দিলেও কোনো জবাব মেলেনি । বিষয়টি সম্পর্কে মন্ত্রনালয়কে অবহিত করা হয়েছে । তিনি বলেন এ ব্যাপারে সতর্কীকরন নোটীশ দিয়ে জনগনকে সেখানে টাকা বিনিয়োগ না করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে ।
মন্তব্য চালু নেই