তালায় টি.আর.এম প্রকল্পে চলছে অবৈধ দখল করে ঘের করার মহোৎসব
এসকে রায়হান, তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: তালা উপজেলার শালিখা টিআরএম প্রকল্পের জমি অবৈধভাবে দখল করে চলছে ঘের করার মহোৎসব । সরেজমিন পরিদর্শনকালে স্হানীয় সূত্রে জানা যায় , তালার খেশরা ও জালালপুর ইউনিয়ন সংলগ্ন টিআরএম (Tidal river management) প্রকল্পের মধ্যে কতিপয় সুবিধাভোগী মহল কর্তৃক নেট , পাটা দিয়ে লীজ ঘের করায় পানির গতিপথ বাধা গ্রস্হ হয় । ফলে সব জমিতে সমানভাবে পলি পৌছাতে পারছে না বলে অভিযোগে জানা গেছে । সূত্রটি জানায় , সুযোগ সন্ধানী অর্থলোভী কতিপয় কিছু ব্যক্তি কিছু নেতাদের ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে প্রকল্পের মধ্যে নেট পাটা দিয়ে লীজ ঘের করে প্রকল্পটি ব্যাহত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে । নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন , সাতপাকিয়া গ্রামের শাহিন সরদার , রবিউল ইসলাম মুক্তি , বালিয়া গ্রামের রাশেদ সানা , মুড়াগাছার সাফায়েত সরদার , জাহিদুর রহমান শেখ , মোস্ত মোড়ল , তরিকুল শেখ , তেঘরিয়া গ্রামের সুশংকর ঘোষ , সুকুমার পাল , অসীম পাল , শালিখা গ্রামের লোকমান গাজীসহ ২০/২৫ জন অবৈধভাবে নেট-পাটা দিয়ে ঘিরে নিয়ে ঘের করছে । ফলে পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বাঁধা সৃষ্টি করছে । এ ব্যাপারে শেখ জাহিদুর রহমান ও রাশেদ সানার সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন , আমাদের টিআরএম প্রকল্পের মধ্যে কোন ঘের নেই । রবিউল ইসলাম মুক্তিকে ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেননি । এদিকে নেট-পাটা দিয়ে ঘিরে নেয়ার কারনে এলাকার পাঁচ শতাধিক মৎসজীবি মানুষ তাদের ঠেলা জাল , খেপনা জাল ইত্যাদি উপায়ে মাছ ধরতে ব্যর্থ হয়ে মানবেতর জীবণ-যাপন করছেন ।
উল্লেখ্য যে , গত বছরের ১৫ অক্টোবর এর প্রতিকার চেয়ে খেশরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাজীব হোসেন রাজু এলাকার দু্ই শতাধিক মানুষের স্বাক্ষরিত পিটিশন জেলা প্রশাসক-সাতক্ষীরা , পুলিশ সুপার-সাতক্ষীরা , পানি উন্নয়ন বোর্ড-সাতক্ষীরা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-তালা বরাবর জমা দেন । কিন্তু এর কোন সমাধান এখনো পর্য্ন্ত হয়নি ।
সে সময় তালা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফরিদ হোসেন বলেছিলেন , পানি উন্নয়ন বোর্ড এগিয়ে এলে এ ব্যাপারে নেট-পাটা ছুটিয়ে দিতে আমার দিক থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে । কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড নীরব কেন , এ প্রশ্ন আজ সবার মনে ।
নীরবতার কারণ জানতে সাতক্ষীরা জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকরী প্রকেীশলী খায়রুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন , এ প্রকল্প আমাদের হাতে নয় , এটা যশোরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে । তবে উনি এটা স্বীকার করেন যে , টিআরএম প্রকল্পের এলাকায় কোন ভাবে বাঁধা সৃষ্টি করে পানি প্রবাহ বন্ধ করা অবশ্যই বেআইনী ও দণ্ডনীয় অপরাধ ।
এদিকে বালিয়ার রাশেদ সানার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে , তিনি কলারোয়া উপজেলার ঝাউডাঙ্গা গ্রামের জনৈক আব্দুল হাই’কে বিভিন্ন মালিকের জমি মৎস চাষের জন্য ডিড (ঘের করার জন্য ষ্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি) করে দিচ্ছেন । এ ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন , ডিডের প্রক্রিয়া চলছে , তবে সেটা টিআরএম প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কার্য্করী হবে ।
তিনি (রাশেদ সানা) অনুরোধ করেন , প্রকল্পের অধীনে যাদের জমি আছে , তারা কেন নির্ধারিত হারি পাচ্ছেন না-সে ব্যাপারেও লিখবেন । এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী প্রোকেীশলীর কাছে বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি ।
এখানে উল্লেখ্য যে , সরকারের এ প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১৪ সালে , যা চলবে বর্তমান বছর অর্থাৎ ২০১৭ সাল পর্য্ন্ত । প্রকল্পের এহেন অনিয়ম , দূর্নীতির অবসান হবে কিনা এবং তা কে করবে , তা জানতে চেয়েছেন এলাকার অসংখ্য ভুক্তভুগী মানুষ ।
মন্তব্য চালু নেই