স্বাধীনতার ৪৫ বছরে ও পাননি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

কবিরাজি, ঝাড়, ফুক দিয়ে সংসার চলে মুক্তিযোদ্ধা গফ্ফারের সংসার

একরামুল কবীর, ষ্টাফ করেসপন্ডেন্ট, সাতক্ষীরা : মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহন করেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি আব্দুল গফ্ফার। আব্দুল গফ্ফার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের মৃত সাকাউদ্দীনের ছেলে।

তিনি জানান, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুবিবুর রহমানে আহবানে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করার জন্য ভাদিয়ালী হাকিমপুর মুক্তিফৌজ অপরেশন ক্যাম্পে ভর্তি হই। ৮ নং সেক্টরে ১ মাস অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার হঠাৎগঞ্জ,বালিয়াডাঙ্গা,হাওয়ালখালী,কাকডাঙ্গা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বীরত্বের পাকহানাদার বাহীনির সাথে যুদ্ধ করি।

তিনি আরো জানান, বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই করার সময় আমার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। ভাদিয়ালী হাকিমপুর অপারেশন ক্যাম্পে আমার মুক্তিফৌজ নং ১২১৭। বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাচাই কারার কথা আমি জানতে পারিনি। তা ছাড়া রাজনৈতিক পট পরিবর্তন সহ বিভিন্ন কারনে ৭১ এর বহু বীর সৈনিকেরা অবহেলায় পড়ে আছে। অনেকের নাম এখনও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ভূক্ত হয়নি। তাদের মত আমি ও একজন স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছি।

আব্দুল গফ্ফার যে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন সে ব্যাপারে তার অনেক প্রমান রয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বর্ষিয়ান নেতা, প্রাক্তন এম সি এ প্রয়াত মমতাজ উদ্দীন আহমেদ আঃ গফ্ফার কে একটি সদন পত্র দিয়েছিলেন। এছাড়া যুদ্ধ কালীন তার ৩ জন সহযোদ্ধা, ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলেন সদন সহ বাংলাদেশ সরকারের দেশ রক্ষা বিভাগের সনদ পত্র আছে।

মুক্তিযদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি ছিলাম একজন গেরিলা যোদ্ধা, যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাস খানেক পর ১৭ জন সহযোগী নিয়ে সাতক্ষীরার ভোমরা হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পের পাশে গিয়ে ১৭ টি কলা গাছ কেটে মাথায় হেলমেট এবং খাকি পোষাক পরিয়ে দেয়। ১৭ টি কচ্ছপের পিঠে মোমবাতি জ¦ালিয়ে রাইফেলের গুলিতে কাপড় পেচিয়ে আগুন জ¦ালিয়ে দিয়ে দ্রুত অন্য স্থানে অবস্থান নেই। কিছুক্ষন পর গুলি গরম হয়ে ফুটতে থাকে। কচ্ছপ গুলো চলা ফেরা করতে থাকে। এ আবস্থায় পাক হানাদার বাহিনী সেগুলো লক্ষ্য করে অবিরাম গুলি করতে থাকে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার ৪ মাস পর কলারোয়া থানার বালিয়াডাঙ্গা এলাকায় হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। ঐ স্থানে হানাদার বাহিনীর গুলিতে বহু মুক্তিসেনা শহীদ হন। আমার পাশে শুয়ে যুদ্ধ করছিল শহীদ জাকারিয়া। গোলাগুলি একটু থামলে সামনের অবস্থা দেখার জন্য মাথা উচু করার সাথে সাথে একটি বুলেট এসে লাগে জাকারিয়ার মাথায়। কিছুক্ষন পরেই আমার পায়ের উপর জাকারিয়ার মৃত্যু হয়।

অবস্থা বেগতিক দেখে আমি ক্রুলিং করে মাঠের অন্য প্রান্ত কাওনডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে উঠি। এ সময় আমার সমস্ত শরীরে ২০ / ২৫ টির জোঁক রক্ত খাচ্ছিল। ঐ সময় গ্রামের মহিলারা আমার শরীরে লবন পানি দিয়ে জোঁক গুলো ছাড়িয়ে দেয়।

এর কিছুদিন পর আমি ১০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে বোয়ালিয়ার মাঠে একটি আখ ক্ষেতে হানাদার বাহিনীর ৫ সদস্যের উপর হামলা করি। তাদের মধ্যে ৪ জনকে মেরে ফেলি। ১ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করে কমান্ডার ক্যাপ্টেন শফিউল্লাহর নিকটে নিয়ে আসি। পরে তার মৃত্যূ হয়।

দুই ছেলে এক মেয়ের সংসার তার। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে ক্ষৃদ্র ব্যবসায়ী। ছোট ছেলে বেকার। জীবন জীবিকার তাগিদে এলাকায় ঝাড় ফুক,কবিারাজি করে সংসার নির্বাহ করছেন আব্দুল গফ্ফার।

তিনি তার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তালিকা ভুক্তির জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রিয় কমান্ড কাউন্সিলে আবেদন করেছেন।



মন্তব্য চালু নেই