বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গণে এক আলোকিত মুখ কলারোয়ার রাজেশ, জাতীয় ভলিবল দলের অধিনায়ক
যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয়-বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কের নাম কী? সকলেই টেস্ট ও ওডিআই দলের অধিনায়কের নাম বলবেন এক কথায়। কারণ ক্রিকেট আমাদের দেশে এখন অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। সাতক্ষীরার ছেলে সৌম্য ও মুস্তাফিজকে এখন চেনেন না-এমন লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর।
ক্রিকেট-ফুটবলের পাশাপাশি এখনও শীত মৌসুমে আমাদের দেশের গ্রামীণ জনপদে আর একটি খেলা দেখা যায়। আর সেটি হলো ভলিবল। কাউকে এখন যদি বলতে বলা হয়-বাংলাদেশ জাতীয় ভলিবল দলের অধিনায়ক কে? উত্তরটা বলতে পারবেন-এমন মানুষ নিতান্তই হাতে গোণা। আর এই জাতীয় ভলিবল দলের অধিনায়কও সাতক্ষীরার ছেলে। নাম তাঁর সাঈদ আল জাবীর রাজেশ। বাড়ি কলারোয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী সোনাবাড়িয়া গ্রামে। বাবার নাম আব্দুল গফ্ফার।
দেশের হয়ে গত এক বছর সময় ধরে সফলতার সাথে জাতীয় ভলিবল দলের অধিনায়কত্ব করে যাচ্ছেন রাজেশ।
মঙ্গলবার দুপুরে আকস্মিকভাবে রাজেশের সাথে এ প্রতিবেদকের দেখা হয়। সেসময় ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় উঠে আসে-একজন গ্রামের রাজেশের দেশের একজন হয়ে ওঠার কথা। দুপুর দেড়টার দিকে কলারোয়া প্রেসক্লাবের সামনে একজন দীর্ঘদেহী (৬ ফুট ২ ইঞ্চি) যুবকের সাথে কথা বলতে দেখা যায় কলারোয়ার সফল ক্রীড়া সংগঠক শেখ শাহাজাহান আলি শাহিনের। পাশেই রয়েছেন আর ক্রীড়া সংগঠক মাসউদ পারভেজ মিলন। শাহিন বললেন, যুবকটিকে চিনি কী-না। শাহিনের দেয়া পরিচয়ের মাধমে জানা গেলো সুঠাম ও সুদর্শন যুবকটিই বাংলাদেশ জাতীয় ভলিবল দলের অধিনায়ক। তাঁর নাম সাঈদ আল জাবীর রাজেশ।
একান্ত আলাপকালে সাঈদ আল জাবীর রাজেশ জানান, ছোট বেলা থেকে তিনি গ্রামের মাঠে ভলিবল খেলতে দেখতেন তাঁর বাবা আব্দুল গফফারকে। সেই থেকে তাঁর মধ্যে ভলিবল খেলার প্রবণতা তৈরি হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রীধারী রাজেশ স্কুল জীবনে সোনাবাড়িয়া প্রাইমারি ও হাইস্কুল এবং কলেজ জীবনে শেখ আমানুল্লাহ ডিগ্রী কলেজে পড়াশোনা করেছেন। তিনি বলেন, কলারোয়া ও সাতক্ষীরায় অনেক ভলিবল টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন।
২০০৩ সালে জাতীয় যুব ভলিবল প্রতিযোগিতায় সাতক্ষীরা জেলা দলের হয়ে তিনি ঢাকায় খেলতে যান। এসময় তিনি সেখানে ভলিবল কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি লাভ করেন। সেসময় তিনি ক্রিকেটও খেলতেন। পরিণত ক্রিকেটার হওয়ার জন্য ২০০৪ সালে তিনি ঢাকা আবাহনী ক্লাবে ভর্তি হন এবং কিছুদিন ক্রিকেট প্রাকটিসও করেন। তবে ভলিবল তিনি সমান তালে চালিয়ে যেতে থাকেন।
রাজেশ জানান, ২০০৮ সালে তিনি ভলিবলে জাতীয় দলে ডাক পান। অধিনায়কত্ব লাভ করেন গত বছর(২০১৪)। তাঁর নেতৃত্বাধীন জাতীয় দলের স্কোয়াডে রয়েছেন ২১ জন খেলোয়াড়। এক পশ্নের জবাবে রাজেশ জানান, তিনি ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশে জাতীয় দলের হয়ে খেলায় অংশ নিয়েছেন।
সাউথ এশিয়ান গেমস’র জন্য বর্তমানে ভলিবল দলের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চলছে। এছাড়া আগামী নভেম্বরে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় দল ভারতের চেন্নাই সফর করবে। সেখানে তাঁরা সাউথ এশিয়ান গেমস’র জন্য প্রি-কম্পিটিশান ম্যাচ খেলবেন। রাজেশ জানান, আগামী বছরের শুরুতে(জানুয়ারি) ভারতের শিলং ও গোয়াহাটিতে সাউথ এশিয়ান গেমস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেজন্য জাতীয় ভলিবল দলের চলছে জোর প্রস্তুতি। হাতে সময়ও তেমন নেই। বাড়িতে আরও কয়েকদিন থাকতে পারলে বেশ ভালো লাগতো কিন্তু দায়িত্ব থাকায় শীঘ্রই ফিরতে হচ্ছে ঢাকায়।
রাজেশ অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভলিবল খেলার পাশাপাশি তিনি তিতাস গ্যাস’র একটি সম্মানজনক পদে চাকুরিরত রয়েছেন।
আলাপচারিতোর শেষ পর্যায়ে রাজেশ বলেন, ভলিবল এশিয়ার একটি জনপ্রিয় খেলা। গ্রামে এই খেলাটি হয়। তবে তা আরও ছড়িয়ে দিতে হবে। আয়োজন করা দরকার ভলিবলের প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন টুর্নামেন্ট। যেখান থেকে বেরিয়ে আসবে নতুন নতুন প্রতিভার অনেকেই। তাদের হাত ধরেই এদেশের ভলিবল আরও শক্তি অর্জন করবে। ক্রীড়াঙ্গণে সাতক্ষীরা অনেক এগিয়ে। আরও এগিয়ে নিতে ক্রীড়া সংগঠকদের বেশি বেশি দায়িত্ব নেওয়ার বিনীত আহবান জানান সাঈদ আল জাবীর রাজেশ।
মন্তব্য চালু নেই