সাতক্ষীরায় চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের দাবী চাই নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়ন

মোঃ বদরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : শিক্ষকদের কোচিং ব্যবসা বন্ধে শাস্তির বিধানসহ নীতিমালা প্রণয়নের পরও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এক শ্রেণির শিক্ষকরা নানা কৌশলে তাঁদের এই ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা তা স্বীকারও করছেন। এছাড়া বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ফলাফলের পর এখন শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির। ভর্তি যুদ্ধে টিকে থাকতে শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে। আর এই সুযোগে কোচিং ব্যবসায়ীরা মেতে উঠেছে নতুন এক মৌসুমী ব্যবসায়। কোচিং সেন্টারে শুধু লেখা পড়া নয়! ফরম পূরণ ছাড়াও ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তৈরি করা কিছু সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও ভর্তি নির্দেশিকা বিক্রি হচ্ছে। ফলে কোচিং ব্যবসায়ীদের মৌসুমি ব্যবসা ভালোই চলছে। আর এসব কোচিং সেন্টার গুলোয় ক্লাস নিচ্ছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। শিক্ষকদের কোচিং ব্যবসা বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিমালায় বলা হয়েছে কোনো শিক্ষক তাঁর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে পারবেন না। তবে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একদিনে সর্বোচ্চ ১০ জনকে কোচিং করাতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিতে হবে। এই নীতিমালা ভঙ্গকারীর চাকরিচ্যুতসহ বিভিন্ন শাস্তির বিধানও রয়েছে এ নীতিমালায়। তার পরেও এ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি সাতক্ষীরায়। সাতক্ষীরা অধিকাংশ কলেজ ও স্কুলের শিক্ষকরাই এই কোচিং ব্যবসার সঙ্গে বেশি জড়িত। তাঁরা ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং-এ বাধ্য করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সাতক্ষীরাসহ সারাদেশে প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য অনেকটা মহামারীর রূপ ধারণ করায় সরকার ২০১২ সালের জুন মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়ে নীতিমালা জারি করে। ওই নীতিমালা জারির পর শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য এখন অনেকটা বৈধ হয়ে গেছে। তবে নীতিমালায় কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর ব্যাপারে যে নির্দেশনা রয়েছে, তার অপপ্রয়োগ হচ্ছে।
এছাড়া গাইড ও নোটবই এবং প্রাইভেট

টিউশন ও কোচিং বন্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে কঠোর বিধান রেখে দেশে প্রথমবারের মতো যে খসড়া শিক্ষা আইন প্রণয়ন করা হয়, সেখানে এ আইন লংঘনে ধারা বিশেষে সর্বনিন্ম ১০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও সর্বনিন্ম ৬ মাস থেকে এক বছর জেল অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। দেশে যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে এ ধরনের একটি আইন প্রণয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, জ্ঞান বিতরণের কাজটি এখন পরিণত হয়েছে বাণিজ্যের প্রধান উপকরণে। ফলে মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিবোধের উন্নয়ন না ঘটিয়ে শুধু আইন দিয়ে অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে সংশয় রয়েছে। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। কিন্তু আমাদের শিক্ষক শ্রেণির অসাধু পন্থা অবলম্বনের ফলে শিক্ষার্থীদের একটি মেরুদন্ডহীন জাতি হিসাবে গড়ে উঠেছে। আমরা স্বপ্ন দেখছি একটি উন্নত জাতি গড়ার। যারা আমাদের উপহার দেবে দুর্নীতি, নীপিড়ন, শোষণমুক্ত একটি সমাজ। সম্মৃদ্ধি বয়ে আনবে আমাদের দেশ ও জাতির জন্য। জ্ঞানের আলোয় সমাজকে আলোকিত করার মহৎ দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষকসমাজ অর্থ লোভে মত্ত হয়ে স্বীয় মর্যাদা ও সম্মান ভূলুণ্ঠিত করছেন, বিষয়টি দুঃখজনক। ন্যায়-নীতি ও সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে স্কুলে স্কুলে যে কোচিংরাজত্ব কায়েম করেছেন।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, “কোচিং বাণিজ্যের বিষয়টি আমার কাছে এখনও অভিযোগ হিসাবে আসে নাই। তবে নীতিমালা ভঙ্গ করে যদি কেউ অনিয়ম করে থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া কোন শিক্ষক যদি এ নীতিমালা ভঙ্গ করে কোচিং পরিচালনা করে তাহলে তাকে প্রথম সতর্ক করে পরবর্তীতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর লিয়াকত পারভেজ বলেন, “কোচিং নীতিমালা বর্তমান সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ। এই নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীরা স্বল্প পয়সায় (প্রতি বিষয়ে মাত্র ২শ টাকায়) শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। সুতরাং অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উচিত এ নীতিমালার বাস্তবায়ন করতে সর্বাত্বক সহযোগিতা করা। এছাড়া যে সকল শিক্ষকরা এটি ভঙ্গ করে কোচিং পরিচালনা করছে আমরা তাদেরকে সতর্ক করেছি এর পরেও যদি কোন শিক্ষক এ নীতিমাল ভঙ্গ করে কোচিং পরিচালনা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

জেলা শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, “কোচিং নীতিমালা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জেলা শিক্ষা অফিসারকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি আছে। প্রতি ২ মাস পর পর এ কমিটির মিটিং ও তদারকি করে থাকে। নীতিমালার যাতে সঠিক বাস্তবায়ন হয় সে জন্য আমরা সকলে মিলে সর্বাত্বক চেষ্টা করবো।”

বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা চাই সরকারের এই কোচিং নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়ন। তাহলে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যায় সফল হবে এবং একটি কার্যকর ,উন্নত ও সম্মৃদ্ধশীল বাংলাদেশ গড়তে পারবো।



মন্তব্য চালু নেই