সাতক্ষীরায় গণহারে চলছে গ্রেফতার ও জামিন
সাতক্ষীরায় পুলিশের বিশেষ অভিযান চলমান। চলমান এ অভিযানে প্রতিদিনই গ্রেফতার হচ্ছে নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। কিন্তু পুলিশ এসব আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আনতে না পারায় আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছেন তারা।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, জেলাব্যাপী অভিযান চালিয়ে গত জুলাই মাসে এক হাজার দুইশ ৫৯ জন, আগস্ট মাসে এক হাজার একশ ৭১ জন ও সেপ্টেম্বর মাসে এক হাজার ৩৬ জনসহ মোট তিন হাজার চারশ ৬৬ জন নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলার আসামিকে গ্রেফতারের পর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তবে জেলার ৮টি থানায় গ্রেফতার হওয়া আসামিদের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জর্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওসমান গণি।
তিনি জানান, পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আনতে পারে না পুলিশ। যার ফলে এসব আসামি আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। অধিকাংশ আসামির মামলার কোনো উপাদানই থাকে না। তাছাড়া অনেক সময় নিরীহ মানুষকে গ্রেফতার করে টাকা নেয় পুলিশ।
তিনি আরো বলেন, মামলার উপাদান না থাকার জন্য আসামিরা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। অনেককে কারাগারেই যেতে হয় না। এসব কারণে গ্রেফতার হওয়া আসামি আর জেলখানায় থাকা আসামির সংখ্যা মিল থাকার কথা নয়।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান জানান, রোববার পর্যন্ত কারাগারে বন্দির সংখ্যা ৯৭১ জন। এরা বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও আদালতে চলমান মামলার আসামি।
তিনি জানান, চার মাস আগেই কারাগারে বন্দির সংখ্যা ছিল ১৭শ থেকে ১৮শ। বর্তমানে সেই সংখ্যা কমে এসেছে।
তিনি আরো জানান, জেলা কারাগারের ধারণক্ষমতা মাত্র চারশ। এর মধ্যে পুরুষ ৩৬০। নারী ৪০। তবে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি থাকলেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর সাতক্ষীরায় শুরু হয় জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব। রক্তের খেলায় মেতে ওঠা জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা কখনো প্রকাশ্যে আবার কখনো রাতের আঁধারে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে ১৬ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে। ২০১৩ সালে বছর জুড়ে চলা এ তাণ্ডবে শতাধিক মানুষের ঘর-বাড়ি, দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয় তাণ্ডবে অংশগ্রহণকারীরা।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যর্থতার দায়ে তৎকালীন পুলিশ সুপার মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেনকে পুলিশ হেড কোয়াটারে ক্লোজড করা হয়।
বছরের শেষের দিকে ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ নতুন পুলিশ সুপার হিসেবে চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির যোগদান করেন। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর থেকে নতুন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে শুরু হয় সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের বিশেষ অভিযান। তার বদলির পর বর্তমান পুলিশ সুপার মো. আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বেও চলছে জেলা পুলিশের বিশেষ এ অভিযান।
মন্তব্য চালু নেই