সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ৭ ফেব্রুয়ারি

প্রার্থীদের প্রচারণায় উজ্জীবিত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা

দীর্ঘ দশ বছর পর আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল। কাউন্সিলকে ঘিরে প্রার্থীদের প্রচারণায় দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বেশ উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। বিরাজ করছে উৎসবমূখর পরিবেশ।

সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিল সফল করতে ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে সাংগঠনিক সব প্রস্তুতি। চলছে স্টেজ সাজানোর কাজ। জেলা শহরের সড়কগুলোতে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীদের ছবি ও শুভেচ্ছা সম্বলিত ব্যানার, পোস্টার ও সাইনবোর্ড। তৈরী হচ্ছে তোরণ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিল সফল করতে ও আগামী ৩ বছরের জন্য নেতৃত্ব নির্বাচনের লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এই কমিটি ইতোমধ্যে জেলা কাউন্সিলে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য ৩০৪ জন কাউন্সিলরের তালিকা চূড়ান্ত করেছে।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এম মহিদুল হক জানান, ২০০৫ সালের ৮ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর আবারও কাউন্সিলকে ঘিরে নেতা-কর্মীরা বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। কাউন্সিলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক মনসুর আহম্মেদ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক শেখ সাইদ উদ্দিন ও যুগ্ম সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

তিনি জানান, ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ কাউন্সিলের উদ্বোধন করবেন। কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল হক।

এদিকে, মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী সভাপতি-সম্পাদক প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে গণসংযোগ করে। যাচ্ছেন জেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। চাচ্ছেন দোয়া ও সমর্থন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারের কাউন্সিলে সভাপতি পদে লড়াই হবে হাড্ডা-হাড্ডি। সভাপতি প্রার্থী শেখ মুজিবুর রহমান সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক এমপি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হন। বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকা ও নিজের নির্বাচনী এলাকার বাইরে কম নজর থাকায় দলীয় কর্মসূচিতে তার অংশগ্রহণ ছিল কম। এরপরেও তিনি মন্দের ভাল বলে মনে করছেন বেশির ভাগ কাউন্সিলর।

অপর সভাপতি প্রার্থী মনসুর আহম্মেদ জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ১৯৯৮ সালে সাতক্ষীরার দেবহাটা-কালিগঞ্জের ভূমিহীন আন্দোলনের সময় তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু ওই আন্দোলনের সময় তিনি ভূমিহীনদের বিপক্ষে এবং ভূমিদস্যুদের পক্ষ নেয়ার চরমভাবে বিতর্কিত হন। এ কারণে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হয়ে তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। অবশ্য দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তিনি জেলা পরিষদ প্রশাসকের পদ পান গত সরকারের আমলে। তবে জেলা পরিষদ প্রশাসক হিসেবে তিনি তেমন সফলতা দেখাতে পারেননি। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, যাদের কারণে তিনি ৯৮ সালের ভূমিহীন আন্দোলনে বিতর্কিত হয়েছিলেন তারা এখনও তার আশপাশেই রয়েছেন। ফলে এবারের কাউন্সিলে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন দলের অনেকেই।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নজরুল ইসলাম সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের সফল চেয়ারম্যান হিসেবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন সরকারের গত টার্মে। তবে, তার আপন ছোট ভাই মাওলানা হাবিবুর রহমান জেলা জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতা হওয়ায় তাকে নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। এরপরও তিনি দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে বেশ তৎপর ছিলেন। মাঠের নেতা হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। তার বিকল্প নেতৃত্ব এখনও গড়ে উঠেনি বলে মনে করেন বেশির ভাগ নেতা-কর্মী।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু সুযোগ থাকলেও সংকটকালে মাঠে না নেমে নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।

সাধারণ সম্পাদক পদের অপর প্রার্থী শেখ সাহিদ উদ্দিন সাবেক ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত রাজনীতি ছেড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন তিনি। সাধারণ নেতা-কর্মীদের মতে, দলীয় কর্মকান্ডে তাকে মাঠে দেখা যায়না। বিগত দিনে দলীয় মিছিল-মিটিং-এ তার অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে।

কাউন্সিলররা আগামী তিন বছরের জন্য নেতৃত্ব নির্বাচনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। ভাবছেন দলের সংকট মুহূর্তে নেতাদের ভূমিকার কথাও।

সার্বিক বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু আহমেদ বলেন, আমরা আশা করছি উৎসবমূখর পরিবেশে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

আগামীতে কারা জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসতে পারেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কাউন্সিলররাই তা নির্বাচন করবে। অবশ্যই কাউন্সিলররা ত্যাগী পরীক্ষিত ও সৎ নেতৃত্বে নির্বাচনে ভুল করবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই