নিভৃত পল্লীর সেই ছেলেটি এখন জাতীয় দলের অধিনায়ক
২৩-২৮ মে মিরপুর ইনডোরে হবে সেন্ট্রাল এশিয়ান জোনের পুরুষ ভলিবলের অলিম্পিক বাছাইপর্ব। দীর্ঘদিন পর দেশের মাটিতে বড় মাপের টুর্নামেন্ট পেয়ে খেলোয়াড়েরা দারুণ খুশি। বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক সাঈদ আল জাবির এটিকে দেখছেন নিজেদের প্রমাণের বড় সুযোগ হিসেবে। দেশের মাটিতে এতবড় আয়োজন বাংলাদেশ ভলিবল টিমকে দেখাবে মহা অনুপ্রেরণা। উম্মোচিত হবে নতুন সম্ভবনার দ্বার।
জাতীয় দলের এই অধিনায়ককে নিয়ে আজ উপস্থাপন করা হয়েছে একটি বিশেষ সাক্ষাতকার। তবে সাক্ষাতকারের মূল পূর্বে যাওয়ার আগে পাঠকদের কিছু তথ্য জেনে রাখা দরকার কে এই অধিনায়ক সাঈদ আল জাবির? কিবা তার পরিচয়।
দেশের দক্ষিণ জনপদের সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলাধীন নিভৃত পল্লী সোনাবাড়ীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সাঈদ আল জাবির। তিনি খুবই সাধারণ একটি পরিবারের সন্তান। দুই ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছোট। সেই ছোট্ট থেকেই ছিল তার ভলিবলের নেশা। হাটি হাটি পা পা করে অনেক চেষ্টা ও ত্যাগ সাধনা পর এক সময় হয়ে গেলেন জাতীয় দলের খেলোয়াড়। আজ সেই স্বপ্নের ভলিবল টিমে তিনিই অধিনায়ক।
জাতীয় দলের অধিনায়ক সাঈদ আল জাবির এই আসরকে নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে বিশেষ সাক্ষাতকার দিয়েছেন। তার সেই সাক্ষাতকার ও আওয়ার নিউজ বিডি’র ক্রীড়া প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতার কিছু অংশ নিচে দেওয়া হলো।
প্রায় পাঁচ বছর পর বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ভলিবল টুর্নামেন্ট। কী অনুভূতি আপনাদের?
সাঈদ আল জাবির: আমরা দারুণ রোমাঞ্চিত। এত দিন পর দেশের মাটিতে এমন টুর্নামেন্টে খেলার জন্য খেলোয়াড়েরা উন্মুখ।
এই পাঁচ বছরে বাইরে কোথায় কোথায় খেলেছেন?
জাবির: ২০১০ সালের পর ঘাসের মাঠে কোথাও খেলিনি। ইনডোরে খেলেছি। ২০১২ সালে চীনে, গত বছর থাইল্যান্ডে এশিয়ান বিচ গেমস ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়ান গেমসে বিচ ভলিবলে খেলেছি। সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে রিও অলিম্পিকের বিচ ভলিবলের বাছাইপর্ব খেলতে গিয়েছিলাম মালদ্বীপে। নেপালে ২০১১ সালে আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্ট ওয়ার্কার্স কাপে খেলেছি।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট বেশি খেলার সুযোগ পায় না বলে আক্ষেপ হয় না?
জাবির: আমরা যারা খেলি তারা জানি গ্রামাঞ্চলে ভলিবল কত জনপ্রিয়। ঢাকার বাইরে খ্যাপ খেলতে গেলে বুঝি সেটা। ঘরোয়া ভলিবল খেলছি, কিন্তু আন্তর্জাতিক হচ্ছে না বলে খুব খারাপ লাগে।
টুর্নামেন্টের প্রতিপক্ষ দলগুলো সম্পর্কে কতটা জানেন আপনারা?
জাবির: মালদ্বীপ-নেপালের সঙ্গে এর আগে খেলেছি। গতকাল (পরশু) প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি আফগানিস্তানের সঙ্গে। যদিও হেরেছি, কিন্তু ওদের স্কিল আমাদের চেয়ে যে ভালো তা বলব না। রানিংয়ে ওরা ভালো। তুর্কমেনিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তানের সঙ্গে খেলিনি। চেষ্টা করছি ওদের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে একটা ধারণা নেওয়ার। এই দেশগুলোর ভিডিও ফুটেজ আমাদের সংগ্রহে আছে।
এত বড় টুর্নামেন্টে এক মাসের প্রস্তুতি কি যথেষ্ট?
জাবির: কমপক্ষে ৬ মাস দরকার ছিল। অন্তত ৬-৭টি প্র্যকটিস ম্যাচ খেলতে পারলে ভালো হতো।
এটা তো রিও অলিম্পিকের প্রাক-বাছাই টুর্নামেন্ট। অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশের জন্য অসম্ভব ব্যাপার। আপনাদের লক্ষ্যটা আসলে কী?
জাবির: আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইরানে ৩১ জুলাই-৮ আগস্ট অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলা। আরেকটা লক্ষ্যও আছে।
সেটা কী?
জাবির: এই টুর্নামেন্টের পর হয়তো বাংলাদেশের কিছু খেলোয়াড় বাইরে যাওয়ার সুযোগ পেতে পারে। কারণ ঢাকায় আসবেন আন্তর্জাতিক ভলিবল ফেডারেশনের সহসভাপতি। এশিয়ান ভলিবল কনফেডারেশনের প্রতিনিধি, ইরান ফেডারেশনের সভাপতি, ভারতের সভাপতি। আমাদের ফেডারেশন কর্মকর্তারা চেষ্টা করছেন এসব দেশে খেলোয়াড়দের খেলার সুযোগ করে দিতে। আমার জেলা সাতক্ষীরার মেয়ে সাবিনা মালদ্বীপে ফুটবল খেলতে গেছে, কিন্তু আমরা ভলিবল খেলতে কোথাও যেতে পারি না। মালদ্বীপের অনেক বন্ধু বলেছে, এখানে ভালো করলে আমাদেরও সুযোগ আসবে। আমরা আশাবাদী যে এই টুর্নামেন্ট সেই দুয়ার খুলে দেবে।
সার্ভিসেস দল ছাড়া অন্যদের ভলিবলে না আসার কারণ কী?
জাবির: মোহামেডান, আবাহনী, শেখ জামাল, শেখ রাসেল ফুটবল-ক্রিকেট নিয়েই ব্যস্ত। আমরা চাই এরাও ভলিবলে আসুক। তাহলে খেলোয়াড়েরা আর্থিক নিরাপত্তা পাবে। আমরা শুনেছি বাফুফের সভাপতি সালাউদ্দিন স্যার ক্লাব ফুটবলে যত টাকা পেতেন ভলিবলের ইয়াদ আলী স্যারও নাকি তেমনটা পেতেন। আমাদের কাছে এসব গল্প মনে হয়। অন্যদের আগ্রহ নেই বলে ভলিবলে এখন শুধু সার্ভিসেস দলগুলোই আছে।
১ কোটি টাকা বাজেটের টুর্নামেন্টে আপনাদের জন্য কোনো পুরস্কারের ঘোষণা নেই?
জাবির: আমাদের সভাপতি ঘোষণা দিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন হলে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। প্রতি ম্যাচ জিতলে ২ লাখ টাকা দেবেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। এটা আমাদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা।
আপনি ভলিবলে কীভাবে এলেন?
জাবির: ছোটবেলা থেকেই ভলিবল খেলি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছি সম্প্রতি। চাকরি-বাকরি না করে ভলিবলটাই খেলছি। চাকরি হয়তো আর্থিক নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু ভালোবাসার খেলাটাকে ছেড়ে যেতে পারছি না।
মন্তব্য চালু নেই