কলারোয়ায় জমে উঠেছে ধানদিয়ার বিজয় মেলা
কামরুল হাসান, কলারোয়া: সাতক্ষীরার কলারোয়ার জয়নগরে জমে উঠেছে বিজয় মেলা। উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন কমান্ড’র কার্যালয় নির্মানসহ দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যানার্থে শুরু হওয়া এ বিজয় মেলা গ্রামীণ জনপদে অন্যরকম সাড়া ফেলে দিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ধানদিয়া চৌরাস্তা বাজার সংলগ্ন বেগম খালেদা জিয়া কলেজের পাশে অনাবাদি জমির উপর গত ১৩ দিন আগে শুরু হওয়া এ মেলা ঘিরে এলাকায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেলায় প্রতিদিন বিকালে নতুন প্রজন্মের জন্য শুরু হয় ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতিসহ বিভন্ন বিষয়ে আলোচনা সভা।
সভায় সাতক্ষীরা, কলরোয়া, তালা, পাটকেলঘাটা, কেশবপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বিশিষ্ট সুধিজনরা পর্যায়ক্রমে উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন। কলেজ মাঠের উত্তর সীমানা দিয়ে দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত চলছে মসাব্যাপী কৃষি মেলা। মেলায় আগতদের দেশের কৃষি প্রধান অঞ্চলের সাথে পরিচিতি করার জন্য বসানো হয়েছে বড় আকৃতির মানচিত্র। এছাড়া সমন্বিত চাষ প্রদ্ধতি প্রদর্শন, সনাতন কৃষি উপকরণের পাশাপাশি চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপরও রয়েছে আকর্ষণীয় প্রদর্শনী।
বেগম খালেদা জিয়া কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করে। উপজেলা কৃষি বিভাগ এসব উৎসায়ী শিক্ষার্থীদের কৃষি নিয়ে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করে আসছে। কৃষি মেলায় কৃষকদের উৎপাদিত কৃষি ফসল প্রদর্শনের জন্য প্রতিদিন আছে বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা। কৃষি মেলার এসব ষ্টল থেকে বিষ মুক্ত ফসল উৎপাদনে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
এলাকার পিছিয়ে পড়া নারীদের আয়বর্ধক কাজে উৎসার্হিত করার জন্য মেলার একটি ষ্টল থেকে হস্তশিল্প, নকশিকাঁথা সেলাই, বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষসহ বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রদান করা হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে ভিন্নধর্মী এ মেলা এলাকার মানুষকে দেশকে এগিয়ে নেয়ার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছে। অনুপ্রাণিত করেছে গ্রামীণ নারীদের। এ মেলা থেকে শিক্ষা গ্রহণসহ সুস্থ সাংস্কৃতির চর্চা ও মানুষের মনে এনে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। মাদক ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সন্ধ্যার সাথে সাথে আলোক উজ্জ্বল মঞ্চে বসে লালন ভক্তদের সমন্বয়ে বাউল সঙ্গীত ও দেশাত্ববোধক গান। এছাড়া মেলায় শিশুসহ সব বয়সের নারী পুরুষের জন্য নাগরদোলা, পুতুলনাচ ও সার্কাস প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও আছে। মেলাবিষয়ে আলাপকালে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার সাংবাদিকদের জানান, গত ২০১২ সাল থেকে এসব এলাকায় নাশকতা সৃষ্টিকারিদের ভয়ে কোন কালচারাল অনুষ্ঠান হয় না। সাহস করে এবার তিনি প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বিজয় মেলা আয়োজন করেছেন। মেলার ষ্টল, সঙ্গীত থেকে আসা অর্থ দিয়ে তিনি কৃষি মেলায় অংশ গ্রহণকারী কৃষকদের পুরস্কার, পিছিয়ে পড়া গ্রামের নারীদের আর্থিক সাহায়তা দিয়ে আসছেন। মেলা শেষে অতিরিক্ত টাকা হাতে থাকলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বসার জন্য একটি অফিস ঘর নির্মাণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন স্থানীয় প্রতিপক্ষরা সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ মেলাটি বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জয়নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাষ্টার আজিজুর রহমান জানান, তার প্রতিপক্ষরা ভালো কাজ করতে দিতে পছন্দ করেনা। প্রতিটি কাজে বাধা সৃষ্টি করাসহ এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে ফায়দা লুটে নেয়ার চেষ্টায় তারা মরিয়া।
এলাকাবাসি তাদেরকে ঘৃণা ভরে ছুড়ে ফেলবে বলে তিনি মনে করেন। স্থানীয় সরসকাটি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তার এলাকায় বিজয় মেলা চলছে। মেলায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে না। জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আল মাসুদ সাংবাদিকদের জানান, গত ১৩ দিন আগে দৈনিক কালের চিত্র সম্পাদক বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহম্মেদ মেলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
এর পর প্রতিদিনই সরকার দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের রাজনীতিকসহ সরকারি পদস্থ কর্মকর্তারা এ মেলায় আসছেন। চলতি সপ্তাতে সাংসদ এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ’র আসার কথা রয়েছে। এলাকায় কালচারাল অনুষ্ঠান না হলে জামায়াত-শিবির গ্রামের সহজ সরল মানুষের মগজ ধোলাই করে জঙ্গী বানাবে। বর্তমানে তার এলাকার মানুষ নাশকতা সৃষ্টিকারিদের ভয় কাটিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। তিনি তার এলাকায় সুস্থ সাংস্কৃতিক ধারা অব্যাহত রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
মন্তব্য চালু নেই