কলারোয়ায় কোচিং চালালে এমপিও বাতিল, জেল-জরিমানার বিধান মানছে না কেহ?
জুলফিকার আলী, কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধিঃ নোটবই-গাইড বই প্রকাশ ও পড়ানো এবং কোচিং সেন্টার পরিচালনা করলে জেল-জরিমানার বিধান রেখে শিক্ষা আইনের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার। অথচ কলারোয়ায় এ আইন মানছেনা কেহ?। যে যার মতো করে কেচিং ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে এখানে। মনে হয় সরকার তাদের,আইনও মানে না তারা।
এই কেচিং সেন্টার গুলোর শিক্ষক মনে করেন তারা আইন তৈরী করেন। তাই তাদের এই ব্যবসায় কেহ বন্ধ করতে পারবে না। আর এই কাজ গুলো হচ্ছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ১৫/২০ কোচিং সেন্টারে। স্কুলে ভাল পাঠদান না করে কিছু শিক্ষক কোচিং সেন্টার খুলে প্রতিটি শিশুর কাছ থেকে প্রতি মাসে লুপি নিচ্ছে ৫শত থেকে ১২শ’টাকা, কোথাও কোথাও ১৫শ’থেকে ২হাজার টাকা নিয়ে কোচিং সেন্টারে পড়ানো হচ্ছে।
প্রতি মাসে এই সকল শিক্ষকরা লাখ লাখ টাকা এই অবৈধ কোচিং সেন্টার থেকে তুলছে। এদিকে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করলে এমপিও (বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ) বাতিল এবং নোটবইয়ের জন্য অর্থদণ্ডসহ ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিধান রেখে ওই আইনের খসড়ার ওপর মতামত চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া খসড়া আইনে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দিলে অর্থদণ্ড বা কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
শিক্ষানীতি-২০১০’র আলোকে শিক্ষা আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে খসড়ায় শিক্ষার চারটি স্তর রাখা হয়েছে। খসড়ায় প্রাক-প্রাথমিক (৪ বছর থেকে ৬ বছর), প্রাথমিক (প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম), মাধ্যমিক (নবম থেকে দ্বাদশ) এবং উচ্চশিক্ষা (দ্বাদশ শ্রেণি থেকে স্নাতক ও তদুর্ধ্ব) স্তরের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকসহ প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক এবং এই শিক্ষা শিশুর অধিকার হিসেবে গণ্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নোট ও গাইড বইয়ের বিষয়ে খসড়ায় বলা আছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে পাণ্ডুলিপির অনুমোদন নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বা প্রকাশক কেবলমাত্র সহায়ক শিক্ষা উপকরণ বা সহায়ক পুস্তক বা ডিজিটাল শিখন-শেখানো সামগ্রী প্রকাশ করতে পারবেন। কোনো ধরনের নোটবই বা গাইড বই প্রকাশ করলে অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা ৬ মাসের কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া এনসিটিবির অনুমোদনহীন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই অনুসরণ করলে কিংবা কোচিং বাণিজ্য জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে এমপিও (বেতন ভাতাদির সরকারি অংশ) স্থগিত, কর্তন বা বাতিল করা হতে পারে। শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকার প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এই ধারা লঙ্ঘন করলে তিনি অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা ৬ মাসের জেল বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। শারীরিক ও মানসিক শাস্তির বিষয়ে বলা আছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালীন মানসিক বা শারীরিক শাস্তি দেওয়া যাবে না। এটি লঙ্ঘন করলে তিনি অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা তিন মাসের কারাদন্ডে দণ্ডিত হবেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে নির্ধারিত পাঠ্যবই না পয়ের বাইরে পড়ালে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা ৬ মাসের জেল বা উভয় দণ্ড রাখা হয়েছে খসড়ায়। প্রাথমিক ও ইবতেদায়িতে সাধারণ ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল অনুমোদন ছাড়া চালালে তিন লাখ টাকা জরিমানা বা ৬ মাসের জেল বা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে।
নিয়োগের জন্য বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা বলা হয়েছে। আর প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য থাকবে কমিটি। মাধ্যমিক স্তরেও বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা সংস্কৃতির পরিপন্থি বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আগাত হানে এমন কার্যক্রম পরিচালনা করলে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা ৬ মাসেসর জেল বা উভয় দণ্ড হবে। খসড়ার উচ্চশিক্ষার অংশে বলা হয়েছে, কলেজ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনার জন্য অনুমতি নিতে হবে।
অন্যথায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা ৫ বছর জেল বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। অনুমতি ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালালে বা শাখা ক্যাম্পাস, স্ট্যাডি সেন্টার বা টিউটোরিয়াল কেন্দ্র স্থাপন করলে ৫ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে। উচ্চ শিক্ষাস্তরে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী বিধি দ্বারা নিয়োগ করতে হবে।
এছাড়া উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, ডিপ্লোমা, জীবনব্যাপী শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা, বিশেষ চাহিদামূলক শিক্ষা (প্রতিবন্ধী বা অটিস্টিক এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য) ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। খসড়ায় ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’ গঠনের কথা বলা হয়েছে, যা সংবিধিবদ্ধ স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের সব নাগরিকের শিক্ষা অধিকার সংরক্ষণ, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণে সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার তত্ত্বাবধান ও শিক্ষার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারকে পরামর্শ ও সহযোগিতা দেবে।
ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর বেতন-ভাতা ফি পরিচালনা কমিটি নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট বোর্ড থেকে অনুমোদন নেবে, অন্যথায় অতিরিক্ত ফি গ্রহণ করলে ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা ১ বছর জেল বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। প্রিয় পাঠক আগামী সংখ্যায় প্রতিটি কোচিং সেন্টার ও কোচিং চালানো স্কুলের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
মন্তব্য চালু নেই