সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আ.লীগের বিশাল সমাবেশ

কতিপয় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের সৈকতে হাজারো জনতা

জাহাঙ্গীর আলম লিটন, সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে: গ্রামের মানুষ হাস-মুরগি-গরু-ছাগল বিক্রি করলে, ব্যবসায়ীরা হালখাতা করলে, চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে রাখলে তাদের বাড়িতে গিয়ে আটক করার ভয় দেখিয়ে হয়রানি করে কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তারা শান্তিপ্রিয় মানুষকে অশান্ত করে তুলছে। এমনই অভিযোগের সুরে কলারোয়া থানার ওসিসহ কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে সাধারণ মানুষ। আর এমন-ই চিত্র ফুটে উঠলো সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে হাজারো জনগণের মাঝে।
কলারোয়া উপজেলার ৬নং সোনাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামকে আটকের প্রতিবাদে ও তার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে উপস্থিত সাধারণ জনতা অভিযোগ-অনুযোগ করেন এমনই ভাবে। উদাহরণ স্বরূপ- অতিসম্প্রতি ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে রাতের ঘুষের টাকা সকালে ফেরত দিতে বাধ্য হওয়ার ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার ক্লোজডের বিষয়টিও যোগ করেন তারা।

উপজেলা আ.লীগ ও ১৪দল ওই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বক্তাদের ও উপস্থিত জনগণের ভাষা একই সুরে মিলিত হয় কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার বিপক্ষের মোহনায়। অভিযোগের সেই সৈকতে কলারোয়ার বর্তমান শান্ত জনপদকে অশান্ত করার চক্রান্ত ভেসে ওঠে। চক্রান্তকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে পুলিশের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা সাধারণ জনগণকে হয়রানী ও নাজেহাল করারও মন্তব্য উঠে আসে।

বিশাল ওই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সাংসদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।

জেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, জেলা আ.লীগ নেতা আরাফাত হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসান সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। উপজেলা আ.লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও উপজেলা ১৪দলের নেতৃবৃন্দও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে কয়েক হজার মানুষের স্বত:স্ফুর্ত অংশ গ্রহণ ছিল লক্ষণীয়।

বক্তারা আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেপ্তার সোনাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তির দাবি জানান। প্রকৃত দোষিদের শাস্তি দাবি করে তারা বলেন, সাধারণ মানুষকে সাজানো মামলায় ফাসিয়ে হয়রানীর চেষ্টা কর হলে সোচ্চার প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের অনৈতিক দৌরত্মে শান্তিপ্রিয় মানুষ নিজের ঘরে শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকলেও তাকে ধরে নিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। আর সাধারণ জনগণের পাশে থাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও হয়রানির করা হচ্ছে। বক্তারা আরো বলেন, সম্প্রতি কলারোয়ায় পুলিশের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে উপজেলার সোনাবাড়িয়ায় সর্বস্তরের মানুষের সমাবেশে স্থানীয় সাংসদসহ জেলা-উপজেলা আ.লীগ, ১৪দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ কারণেই পুলিশ অতিউৎসাহিত হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুলকে ওই মামলায় আসামি করে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।

কলারোয়ায় আইনশৃংখলা বিষয়ক মাসিক সভায় উপস্থিতির একাংশ।

এদিকে, এর আগে উপজেলা অডিটোরিয়ামে মাসিক আইন শৃংখলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিতিদের সূত্রে জানা গেছে, কলারোয়ার শান্তিপ্রিয় মানুষের শান্তি বিঘিœত হওয়ায় কমিটির কয়েকজন সদস্যের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখিন হন কলারোয়া থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ। ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের আটকের বিষয়ে তিনি জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সভায় কয়েকজন সদস্য প্রত্যক্ষ দোষিদের ব্যতিরেখে এলাকার সাধারণ মানুষকে হয়রানী করার অভিযোগ করেন।
সভায় কমিটির সদস্য হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যানরাও নিজেদের হয়রানীর আশংকার কথা ব্যক্ত করেন বলে জানা গেছে।
ওই সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়ের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সাংসদ এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।
উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, ওসি এমদাদুল হক শেখ, কলারোয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি শিক্ষক দীপক শেঠ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার গোলাম মোস্তফা, ইউপি চেয়ারম্যান প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, সামছুদ্দীন আল মাসুদ বাবু, রবিউল হাসান, বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আরাফাত হোসেন প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন।
এসময় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, বিজিবি প্রতিনিধি, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, সুশিল সমাজের নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত রোববার চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে উপজেলা পরিষদ মোড়ে যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে মানববন্ধন করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সেখানে গ্রেপ্তার ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দোষ উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, চেয়ারম্যান মনিরুল মাসখানেক আগে পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার বানিজ্যের বিরুদ্ধে এক সমাবেশ করেন। সেই ঘটনার জের ধরে তাকে এই মামলায় আসামী করা হয়েছে। অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানানো হয় ওই মানববন্ধনে।

উল্লেখ্য, সোনবাড়িয়ার বারিকের মোড়ে এক তরুণীর আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে শনিবার গভীর রাতে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম মনিরুল ইসলামসহ ৪জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই ঘটনার বিষয়ে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক শেখ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, শুক্রবার প্রেমিক মাগুরা এলাকার পলাশ ও প্রেমিকা সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের বারেকের মোড় এলাকার মৃত. নূর মোহাম্মদের মেয়ে আফরোজা খাতুন একসাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। এসময় স্থানীয় বখাটে ছেলেরা তাদের আটক করে ইউপি চেয়ারম্যানের হাতে সোপর্দ করে।
পরে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রামপুলিশ মারফত দড়ি দিয়ে বেঁধে তরুন-তরুনীকে বাজারে মধ্যে ঘোরায়। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে আফরোজা খাতুন আত্মহত্যা করে।
এ ঘটনায় শনিবার মেয়েটির ভাই ইব্রাহিম হোসেন বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে আসামিকে করে কলারোয়া থানায় একটি এজাহার দেন। এরপর মধ্যরাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাতক্ষীরা আদালতের সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটার তামিম ইকবাল সোহাগ সাংবাদিকদের জানান, বোরবার চেয়ারম্যানকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। আগামি ১৫ ডিসেম্বর তার জামিন শুনানীর কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক সাংবাদিকদের জানান, ওই তরুন-তরুনীকে পরিষদে এনে তাদেরকে বেধে বাজারো ঘুরিয়েছেন চেয়ারম্যান। এঘটনায় তরুনীর ভাই বাদী হয়ে সাত জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় তাকেসহ আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই