আবারো তিন জেলে অপহরন ॥ কাঠ পাচারে উজাড় সুন্দরবন ॥ বেপরোয়া বনদস্যু

মোঃ বদরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : তিন জেলে অহরনের মধ্যে দিয়ে সুন্দরবনে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বনদস্যু এবং ভিন্ন কৌশলে বন কর্মকর্তারা পাঁচার করছে বন সম্পদ। সূত্র মতে শ্যামনগরে কৈখালী তিন জেলে বাওয়ালী বনদস্যু রেজা বাহিনীর হাতে অপহরণ হয়েছে। অপহরনকৃত ব্যক্তিরা হচ্ছে, পশ্চিম কৈখালী গ্রামের ইয়াকুব শেখের পুত্র ইয়াসিন শেখ (২৫), মাহমুদ আলী গাজীর পুত্র মোস্তাক (১৮), মোঃ লিয়াকাত হোসেনের পুত্র আনছার আলী। জেলেদের তথ্য মতে বুধবার রাতে কালিন্দি নদী সংলগ্ন উলুখালী নামক স্থানে শাহ জাহান, জহির ও মাহমুদের ট্রলারে মৎস্য আহরন করছিল এসব জেলেরা। রাত্র আনুমানিক ৮টার দিকে বনদস্যু রেজা বাহিনী অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ট্রলার থেকে তিন জনকে অপহরন করে নিয়ে যায় এবং নৌকা প্রতি ৭ হাজার টাকা করে মুক্তিপন দাবী করে। যে জেলেরা জিম্মি হয়েছে তাদেরকে নিজেদের সহযোগি জানিয়ে নানা অপকর্ম করতে বাধ্য করছে রেজা বাহিনী এমন অভিযোগ রয়েছে জেলেদের মধ্যে। এছাড়া রেজা বাহিনীর অন্যতম আয়ের উৎস হরিণ শিকার ও চামড়া পাঁচার। সুন্দরবন থেকে প্রতিদিন অসংখ্য হরিণ ফাঁদ ও বন্দুকের মাধ্যমে শিকার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। চাঁমড়া ও মাংস পাঁচার কার্য পরিচালনা চক্রটি বেশ প্রভাবশালী হওয়ায় বরাবরই প্রশাসনের ধরা ছোয়ার বাইরে আছে। অভিযোগ আছে অসাধু বন কর্মকর্তারা এসব কাজে বনদস্যুদের সাহায্য করে থাকে। কালিঞ্চী গ্রামের বনদস্যু রেজা ও তার বাহিনীর সদস্যরা বেশিভাগই কালিঞ্চী ও পার্শ্ববর্তী মীরগাং, টেংরা খালী, ভেটখালী ও কৈখালীর বাসিন্দা যারা অপকর্ম করেও নিজ পরিবারের সাথে সাধারন মানুষের মত জীবন যাপন ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে সকল সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। স্থানীয় কিছু অর্থ লোভী ব্যক্তি এদের বিকাশ এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে। ভেটখালী বাজারে এমন একজন বিকাশ এজেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। ডাঙায় ও জঙ্গলে উভয় স্থানে বনদস্যুদের এহেন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানার সাবেক ওসি আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের সময় পুলিশের অভিযানের কারনে বনদস্যুদের তৎপরতা কিছুটা থেমে থাকলেও আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এব্যাপারে শ্যামনগর থানার বর্তমান ওসি এনামুল হক বলেন অপহরনের বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ দায়ের করেনি, তবে পুলিশি অভিযান আগের মতই অব্যহত আছে। অন্যদিকে সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন কৈখালী ফরেষ্ট স্টেশনের ট্যাংরা খালী টইল ফাড়ীর কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম উৎকোচ নিয়ে সুন্দরবনের মূল্যবান কাঠ পাঁচারে সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মুন্সিগঞ্জের মীরগাং এলাকার মৃত ভাদ্দুরী শেখের পুত্র সেলিম শেখ, বেলায়েত গাজীর পুত্র রহমান, ময়জুদ্দিন গাজী সহ একটি চক্রের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে চলছে কাঠ পাঁচারের এই মহাযজ্ঞ। প্রত্যেকের অধীনে আট থেকে দশ জন করে সদস্য মাথা পিছু প্রতিদিন ২শ টাকা হারে গাছ কাটার কাজ করে থাকেন বলে জানাযায়। এসব মূল্যবান কাঠ ট্যাংরা খালী হয়ে ময়েজউদ্দীনের মোড় থেকে পার্শ্বেখালী হয়ে শ্যামনগর সহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হচ্ছে। এব্যাপারে টেংরাখালী ফাড়ীর কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করলেও কর্মকর্তার সাথে কথা বলার কিছুক্ষনের মধ্যে পাঁচার চক্রের হোতা সেলিম শেখ সংশ্লিষ্ট রিপোটারকে ফোনে পরিচয় জানতে চান এবং নিজেকে তরুণলীগ নেতা হিসাবে পরিচয় দেন। সুন্দবন ধব্বংসের এহেন কার্যক্রমে এলাকার সচেতন মানুষ আজ নির্বাক, অনেকের প্রশ্ন সুন্দরবন উজাড় করার মিশন নিয়ে কি কাজ করছে কর্মকর্তারা ? যাদের দায়িত্ব সুন্দরবনকে রক্ষা করে সেখানে উপকূলীয় এলাকার মানুষের জিবীকা নির্বাহ করার অভয়অরন্যে পরিনত করা, সেখানে জেলে অপহরন করে চলেছে চাঁদাবাজী আর বনের মূল্যবান কাঠ উজাড় করে চলছে পাঁচার। সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলবাসী ও এলাকার সচেতন মানুষের জোর দাবী পৃথিবী’র বিখ্যাত একমাত্র ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনকে রক্ষায় ও নিরীহ জেলেদের নিরাপত্তায় প্রশাসন এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক যা বনদস্যু ও কাঠ পাঁচারকারী ও অসাধু কর্মকর্তাদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।



মন্তব্য চালু নেই