বাদীর পরিবারকেই বার বার হয়রানি, কেন?

কলেজছাত্রী তনু হত্যা মামলার তদন্তকালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা বার বারই তাদের কার্যালয়ে ডেকে নিচ্ছেন বাদীর পরিবারের সদস্যদের। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদও করছেন। কিন্তু তদন্তের কোনো কূলকিনারা হচ্ছে না।
মঙ্গলবার আবারো তনুর পরিবারের সদস্যদের সিআইডির কুমিল্লা কার্যালয়ে তলব করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, ভাই আনোয়ার হোসেন এবং তনুর খালতো বোন লাইজু সেখানে উপস্থিত হন। সিআইডি কর্মকর্তারা তাদের দীর্ঘক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
দীর্ঘ দেড় মাসেও তনুর হতাকাণ্ডের কোনো রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করেনয় তনুর বাবা ও মা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা বাদী পক্ষ হয়েও বার বার আমাদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্যদিকে প্রকৃত আসামিদের তেমন কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছেনা বলেও অভিযোগ করেন তারা।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, বার বার সিআইডি কার্যালয়ে তলব করে এনে দীর্ঘক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
তনুর বাবা বাবা ইয়ার হোসেন দাবি করে বলেন, ‘আমার মেয়ে যে বাসায় প্রাইভেট পড়াতে যেতো সে বাসার লোকজনই তাকে হত্যা করে থাকতে পারে। এসময় তিনি সার্জেন্ট জাহিদ ও সৈনিক জাহিদের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘এদের ভালো করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।’
এর আগেও গত ২ এপ্রিল তনুর বাবা-মাসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে তলব করা হয়েছিল কুমিল্লার সিআইডি কার্যালয়ে। ওইদিন সাত ঘণ্টা ধরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার একটি জঙ্গল থেকে তনুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। তাকে হত্যা করে মৃতদেহ ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পরদিন তনুর বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
৩১ মার্চ সন্ধ্যায় জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) থেকে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তারাই তদন্ত করছে।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে অনুমান করলেও তনুর প্রথম ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে দাবি করা হয়। ঠিক কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু না বলায় প্রতিবেদন নিয়েও সমালোচনা হয়েছে।
অবশ্য ৩০ মার্চ দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে মরদেহ তুলে নমুনা নেয়া হয়েছে। ১৯ এপ্রিল তনু হত্যার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম কুমিল্লার সিআইডি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। সে সময় বলেন, ‘তনু হত্যা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর সাথে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। যদিও চিকিৎসকদের প্রতিবেদনে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলা হয়নি।’
তনু হত্যাকাণ্ডের তদন্তে র্যাব ও পুলিশসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নামে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে সারাদেশে চলে বিক্ষোভ। তবে হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন পরে সেনা সদর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তারাও তনুর ঘটনায় অত্যন্ত মর্মাহত। এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেয়া হয়।
এদিকে, তনু হত্যা মামলা প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করলেও কয়েক দিনের মধ্যেই হস্তান্তর করা হয় জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি)। এরপর ডিবি থেকে কোনো প্রতিবেদন দেয়ার আগেই ফের হাত বদল করে সিআইডিতে দেয়া হয় মামলার তদন্তের ভার। এতো ঘন ঘন হাত বদলের ফলে তনুর পরিবার সে সময়ই মামলার সঠিক তদন্ত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।
মন্তব্য চালু নেই