হাওরে ফসলহানি: শ্রমের হাটে অভাবী মানুষ
সুজন মিয়ার বয়স ১৫ কি ১৬। পঞ্চম শ্রেণি পাস করে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। বাবার সঙ্গে কৃষিকাজেই সময় দেয় সে। এ সময়টায় প্রতিবছরের মতো হাওরে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল। কিন্তু এই সুজন এখন সুনামগঞ্জ শহরের স্টেশন সড়কের কালীবাড়ি মোড়ে। এখানে শ্রম বিক্রির জন্য জড়ো হয় তার মতো অভাবী মানুষেরা।
সুজনের বাড়ি সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের বেতগঞ্জ গ্রামে। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে সে তৃতীয়। গ্রামের পাশে দেখার হাওরে তাদের তিন একর জমিতে বোরো ধান ছিল। এখন সব পানির নিচে। ধান নেই, ঘরে খাবার নেই। পাঁচ দিন ধরে সে শহরে, কাজ খুঁজছে।
কাল বৃহস্পতিবার সকালে কথা হয় ওর সঙ্গে। বলল, ‘বাবার শরীর খারাপ, ঘরে আটজন মানুষ। বড় ভাইও কাজ খুঁজতেছে। আমিও শহরে কাজের লাগি আইছি। কিন্তু কাজ করছি মাত্র দুই দিন। এখানে মানুষ বেশি। কাজ পাওয়া যায় কম।’ তার দুঃখ, ছোট হওয়ার তার মজুরিও কম।
শুধু সুজন নয়, হাওরে ফসলহানির পর সুনামগঞ্জে শ্রমের হাটে অভাবী মানুষের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। কালীবাড়ি মোড়ে দেড় শ থেকে দুই শ নারী-পুরুষের ভিড়। সবাই এসেছে শ্রম বিক্রির জন্য।
সদর উপজেলার শেখেরগাঁও গ্রামের উজ্জ্বল মিয়ার (২৪) পরনে প্যান্ট-শার্ট। কখনো শ্রমিকের কাজ করেননি। জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় হাতে টাকাপয়সা নেই। তাই শ্রমিকের কাজে নেমেছেন। উজ্জ্বল বলেন, ‘কী আর করব, বাঁচতে অইলে তো কাজ করতে অইব। সবাই তো শহরে আইতেছে। কেউ কেউ কাজ পায়। আবার ১০টা-১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা কইরা কাজ না পাইয়া বাড়িত ফিইরা যায়।’
সুনামগঞ্জ শহরের এই শ্রমের হাটে সুজন, উজ্জ্বল, ইসলামপুরের রুহেনা বেগম, হাজেরা বেগমের আসা নতুন হলেও প্রায় ১০ বছর ধরে আসেন কালীপুর গ্রামের আব্বাস উদ্দিন। তিনি জানান, বৈশাখ মাসে এখানে কখনো এত মানুষ আসেনি। বড়জোর প্রতিদিন ২০-২৫ জন হয়। এবার হাওরের ফসলহানির পর থেকে মানুষের ভিড় বাড়ছে। সদর উপজেলা গৌরারং ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মজর আলী (৪০) বলেন, ‘কাজ-কাম না পাইয়া অনেক মানুষ সুনামগঞ্জ ছাড়ে। এরা কাজের লাগি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, ভোলাগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব যার। বাসস্ট্যান্ডে রাইত অইলে দেখা যায়।’
সুনামগঞ্জের পরিবহন ব্যবসায়ী হোসেন আহমদ জানালেন, ১০-১৫ দিন থেকে হাওর এলাকার ফসলহারা মানুষজন কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছেন। এ কারণে তাঁদের যাত্রীসংখ্যা বেড়ে গেছে।
মন্তব্য চালু নেই