ঈদকে সামনে রেখে সীমান্তে চলছে জমজমাট চোরাচালান বাণিজ্য

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে ঈদকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে চোরাচালান বাণিজ্য। সরকারের কোটিকোটি টাকা রাজস্ব ফাকি দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন অবাধে পাচাঁর করা হচ্ছে চুনাপাথর,বল্ডার পাথর,নুরি পাথর,গরু,ঘোড়া,কাঠ,গাছ,মদ,গাঁজা,হেরুইন ও নাসির উদ্দিন বিড়িসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। আর পাচাঁরকৃত মালামাল থেকে বিজিবি ক্যাম্পের নামে হচ্ছে চাঁদাবাজি। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০গজ দূরে দুই দেশের লোকজন অবস্থান করার আইনগত নিয়ম থাকলেও এখানে তা কেউ মানছে না। ফলে পুরো সীমান্ত এলাকা চোরাচালানী ও চাঁদাবাজদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। গতকাল বুধবার সরেজমিন চাঁনপুর, বুরুঙ্গাছড়া, টেকেরঘাট ও লাকমা সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়,ভারত থেকে ওপেন চুনাপাথর ও বল্ডার পাথর দাপটের সাথে পাচাঁর করছে চোরাচালানীরা। কিন্তু দেখার কেউ নেই।

এব্যাপারে বড়ছড়া,চাঁরাগাঁও শুল্কষ্টেশনের ব্যবসায়ীরাসহ স্থানীয়রা জানায়,গতকাল মঙ্গলবার রাতভর টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সামনে দিয়ে ভারত থেকে চোরাচালানী জম্মত আলী, রফিকুল,সোনালী,নজরুল,আজর আলী,নজর আলী,কাঁচা মিয়া গং প্রায় ৭লক্ষ টাকা মূল্যের ৩শত টন চুনাপাথর পাচাঁর করে। এবং আজ বুধবার সকালে ইঞ্জিনের নৌকা যোগে ওই চুনাপাথর বিভিন্ন জায়গায় পাঠায়। পাচাঁরকৃত প্রতিট্রলি চুনাপাথর থেকে টেকেরঘাট ক্যাম্পের নামে ১৫০টাকা ও বালিয়াঘাট ক্যাম্পের নামে ২০০টাকা হারে চাঁদা নিয়েছে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি মামলা আসাসী বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী জিয়াউর রহমান জিয়া ও সোনালী মিয়া।

অন্যদিকে বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের লাকমা এলাকা দিয়ে ভারত থেকে চোরাচালানী রতন মহলদার,মানিক মহলদার,মোক্তার মহলদার,তিতু মিয়া,আয়নাল হক গং অর্ধশতাধিক লোক দিয়ে প্রতিদিন লক্ষলক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবাধে চুনাপাথর,নুরি পাথর,বল্ডার পাথর ও মদ,গাজা,হেরোইন পাঁচার করছে। আর পাচাঁরকৃত মালামালের মধ্যে প্রতিট্রলি পাথর থেকে বালিয়াঘাট ক্যাম্পের নামে ১৫০টাকা ও টেকেরঘাট ক্যাম্পের নামের ১২০টাকা ও মদ,গাঁজা হেরোইন থেকে সাপ্তাহিক ১০হাজার টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। একই ভাবে টেকেরঘাট ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী বুরুংগাছড়া এলাকা দিয়ে অবাদে মদ,গাঁজা,হেরুইন ও চুনাপাথর পাচাঁর করছে চোরাচালানীরা। পাচাঁরকৃত প্রতিট্রলি চুনাপাথর ১৫০টাকা ও মদ,গাঁজার জন্য সাপ্তাহিক ৮হাজার টাকা করে টেকেরঘাট ক্যাম্পের নামে চাঁদা নিচ্ছে রজনী লাইন গ্রামের বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী চোরাচালানী মরা সিদ্দিক।

এছাড়া গত ৬ই জুন বুধবার মধ্যরাত থেকে ৭ই জুন বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত চাঁরাগাঁও বিজিবি ক্যাম্প এলাকার জঙ্গলবাড়ি-মাইজহাটি ও চাঁরাগাঁও পয়েন্ট দিয়ে চোরাচালানী মনাফ মিয়া, আয়নাল মিয়া,বাবুল মিয়া ও আবু বাক্কার গং ভারত থেকে প্রায় সাড়ে ৩লক্ষ টাকা মূল্যের দেড়শ টন চুনাপাথর ওপেন পাচাঁর করে। পরে বিজিবি অভিযান চালিয়ে ২৫টন পাথর আটক করলেও বাকি চুনাপাথর ছেড়ে দেয়। ভারত থেকে অবৈধ ভাবে প্রতিট্রলি চুনাপাথর পাচাঁরের জন্য চাঁরাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের নামে ১৫০টাকা ও বীরেন্দ্র নগর বিজিবি ক্যাম্পের নামে ১২০টাকা চাঁদা উত্তোলন করছে বিজিবি ক্যাম্পের সোর্স পরিচয়ধারী কলাগাঁও গ্রামের চোরাচালানী তোতা মিয়া ও চাঁরাগাঁও জিরো পয়েন্টের চোরাচালানী মাতাল জলিল মিয়া। এছাড়াও এই সীমান্তের জঙ্গলবাড়ি এলাকার চোরাচালানী ছাবেদ আলী,লতু মিয়া ও ময়না মিয়ার বসতবাড়ির ভিতর থেকে ৬টি ভারতীয় চোরাই গরু আটক করে বিজিবি। পরে গরুগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে ১লক্ষ ৩০হাজার টাকায় বিক্রি করা হলেও চোরাচালানীদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি।

অন্যদিকে চাঁনপুর বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নয়াছড়া এলাকা দিয়ে ভারত থেকে অবাধে চুনাপাথর পাচাঁর করছে চোরাচালানী লাল মিয়া,কালাম মিয়া,আলামিন,আলমগীর,হযরত আলী ও আব্দুল আলী গং। এজন্য বিজিবি ক্যাম্পের নামে প্রতিট্রলি চুনাপাথর থেকে ২৫০টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করছে মদ চোরাচালান মামলার জেলখাটা আসামী বিজিবি সোর্স পরিচয়ধারী আবু বক্কর। লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী,বারেকটিলা ও পুরান লাউড় এলাকা দিয়ে ঘোড়া,গাছ,মদ,গাজা ও নাসির উদ্দিন বিড়ি পাচাঁর করা হচ্ছে।

এব্যাপারে চাঁরাগাঁও শুল্কস্টেশনের ব্যবসায়ী ময়না মিয়া,সজিব আহমেদ,আব্দুল হাই বলেন,বিজিবিকে উৎকোচ দিয়ে চোরাচালানীরা ওপেন সবকিছু পাচাঁর করেছে। ফলে কোটিকোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বড়ছড়া শুল্কস্টেশনের ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া,দিলশাদ মিয়া,আকবর আলী বলেন,বিজিবির নাকের ঢগার উপর দিয়ে প্রতিদিন লক্ষলক্ষ টাকার চুনাপাথরসহ মাদকদ্রব্য ওপেন পাচাঁর হচ্ছে। তাহিরপুর সীমান্তের চোরাচালান প্রতিরোধ ও চোরাচালানীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিজিবির পরিবর্তে স্পেশাল বাহিনী গঠনের প্রয়োজন।

এব্যাপারে জানতে টেকেরঘাট বিজিবির কোম্পানীর কমান্ডারের সরকারী মোবাইল নাম্বারে বারবার কল করলেও কেউ রিসিভ করেনি। চাঁরাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের সরকারী মোবাইল নাম্বারে কল করলে ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে লাইন কেটে দেয়। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক নাসির উদ্দিন বলেন,দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার এক সৈনিক হাতে ব্যাথা পেয়েছে,আমার লোকের জানমালের হেফাজত করতে গিয়ে যদি সামান্য কিছু চোরাচালান হয় তাতে আমার কিছু করার নেই।



মন্তব্য চালু নেই