তাহিরপুরে ডুবছে মাটিয়ান হাওর, কৃষকের কান্না, দীর্ঘ শ্বাসে ভারী হচ্ছে আকাশ-বাতাশ

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় মাটিয়ান হাওরের আলমখালি বাঁধ বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানির চাপে বাঁধ ভেঙ্গে তীব্র গতিতে হাওরে প্রবেশ করছে পানি। নিমিষের মধ্যেই বিশাল হাওর পানিতে থৈ থৈ করছে। অথছ সোমবার পর্যন্ত সবুজের সমারোহে পরিনত ছিল এই হাওরটি।

এ দিন সকালে এই বাঁধের অবস্থা খারাপের খবর পেয়ে ছুঠে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান,তাহিরপুর থানার ওসি,উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও হাওর পাড়ের কৃষকগন। বাঁধ রক্ষার জন্য সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে বাঁধ কে ঝুকিঁ মুক্ত করেন।

কিন্তু শেষ রক্ষা আর হল না সোমবার মধ্য রাতেই প্রচুর পরিমানে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানির চাপে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। জানা যায়,মাটিয়ান হাওরটি উপজেলা প্রধান বোরো উৎপাদন সমৃদ্ধ হাওর। এ হাওরে সাড়ে ৩হাজার হেক্টরে অধিক বোরো ধানের চাষাবাদ করেছে ১০টি গ্রামের হাজার হাজার কৃষকগন। পানিতে হাওরটি ডুবে যাওয়ায় এ হাওরের কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পরেছে।

আর একমাত্র জীবন বাঁচার সম্পদ,কষ্টে ফলানো সোনার ফসল পানিতে ডুবে যাওয়া দৃশ্য দেখে তাদের চোখের পানি একারকার হচ্ছে পাহাড়ী ঢলের পানির সাথে। আর তাদের আর্তনাধ,আহাজারিতে এক হ্নদয় বিদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে হাওর পাড়ে। এছাড়াও উপজেলার এ পর্যন্ত মহালীয়া,লোবার হাওর,বলদার হাওর,কলমার হাওর সহ ১২টি হাওরের কাচাঁ,আধা পাকা বোরো ধান একবারেই পানিতে তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান ১০হাজারের হেক্টরের অধিক হবে বলে জানায় হাওর পাড়ের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকগন। স্থানীয় কৃষকগন জানান,উপজেলার প্রতিটি বাঁধের যখন খারাপ অবস্থা খবর পেয়েছেন তখনেই বাঁধ রক্ষায় ফাঠল ও দেবে যাওয়া অংশে সংস্কারের কাজ করেছে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল সহ হাওর পাড়ে কৃষকগন দিন-রাত সেচ্চা শ্রমে।

আর কাউকে আমাদের পাশে পাই নি। উপজেলা চেয়ারম্যানের মত সবাই যদি দূর্যোগ মুর্হুতে হাওরের বাঁধ রক্ষা আমাদের পাশে এসে দাড়াঁত তাহলে কিছুটা হলেও আরো রক্ষা করা যেত। তারা আরো জানায়,এই ফসল ফলাতে আমরা এনজিও,ব্যাংক ও মহাজনের কাছ থেকে ছড়া সুদে নেওয়া ঋন নেওয়ায় পরিশোধ ও ছেলে মেয়েদের পড়া শুনা ও জীবন কিভাবে বাঁচাব এ নিয়ে হতাশায় মধ্যে আছি। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে হাওরের বেরী বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার সরকারি নির্দেশ থাকলেও ৪০ভাগ কাজও শেষ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার ও পিআইসিরা।

নিজেদের খেয়াল খুশিমতো বাঁধের উপর থাকা গাছ-পালা কেটে পরিস্কার না করে,বাঁধের দুই পাশ থেকে মাটি উত্তোলন করে কোন রকম দায়সারা ভাবে বাঁধ নির্মান করে। নিদির্ষ্ট দূরত্ব থেকে মাটি এনে,বস্তায় মাটি ভরে,বাঁশ দিয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এখানে তা কেউ শুনেনি। অনেক হাওর পাড়ে বাঁধ নির্মান না করে পানি বাড়ার সাথে সাথে তড়িগড়ি করে নামমাত্র মাটি দেয় কর্মকর্তা কর্মচারী,ঠিকাদার ও পিআইসির প্রতিনিধিরা।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম জানান-হাওরের বাঁধ গুলো খুবেই যুঁকিপূর্ন অবস্থায় ছিল এবং এখনও আছে। হাওরের আলমখালি বাঁধ ভেঙ্গে মাটিয়ান হাওরের সর্ম্পূন বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান আরো বেড়ে যাবে।

উপজেলার অন্যতম বৃহত্তর অন্য শনির হাওরটিও খুবেই যুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন-সঠিক ভাবে বাঁধ নির্মাণ না করার কারণে একের পর এক হাওর ডুবছে। মাটিয়ান হাওরের আলমখালী বাঁধটি রক্ষায় আমি সহ সবাই সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাঁধে সেচ্ছ শ্রমে কাজ করেছি সবাইকে সাথে নিয়ে। এর পরও হাজার হাজার কৃষকের একমাত্র বোরো ফসল রক্ষায় বাঁেধ এ পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাউকে দেখা যায় নি।

কিন্তু শেষ রক্ষা আর হল না মধ্য রাতেই এই বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় মাটিয়ান হাওরের সব বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে বাঁধ নির্মান অনিয়মকারীদের কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন জানান,জেলার আমাদের রক্ষানাবেক্ষনকৃত ছোট বড় ৪৬টি হাওরের মধ্যে ১৯টি হাওর ডুবে গেছে। এতে প্রায় ২০হাজার হেক্টরের অধিক জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ২৪ঘন্টায় ৫০মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পাহাড়ী ঢলে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৬সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই