কুমিল্লায় প্রবাসী হত্যায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
কুমিল্লায় শামসুল হুদা ওরফে শামসু নামে এক প্রবাসীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পর হত্যার দায়ে অপহরণ চক্রের এক নারী সদস্যসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বুধবার কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক নূরনাহার বেগম শিউলী এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মানিকপুর গ্রামের মৃত তোতা মিয়ার ছেলে লিপন ওরফে রিপন মজুমদার ওরফে রিপন (৩২), একই উপজেলার আটগ্রাম মোল্লাবাড়ির ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মো. সাহাব উদ্দিন (২২) এবং নারী সদস্য আদর্শ সদর উপজেলার চাঁন্দপুর বৌবাজার এলাকার মফিজুল ইসলামের মেয়ে ও মো. খোকনের স্ত্রী তাছলিমা আক্তার ওরফে সালমা (২৬)।
মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের লতিব শিকদার গ্রামের মৃত পেয়ার আহমেদের ছেলে শামসুল হুদা ওরফে শামসু সিঙ্গাপুরে আসা যাওয়া করে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। তার স্ত্রী মমতাজ আক্তার কলিকে নিয়ে কুমিল্লা মহানগরীর দক্ষিণ চর্থার একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন।
২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর শামসু সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে ওই বাসায় ওঠেন। এর দুদিন পর ১২ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে বাসার বাইরে গিয়ে তিনি আর ফিরে আসেননি। এরপর তাকে অপহরণ করা হয়েছে এমন খবর দিয়ে একাধিক বিকাশ নম্বর দিয়ে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হয়। এরপর অপহরণকারীরা আরও মুক্তিপণ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে তাকে হত্যা করে মরদেহ নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকার ৪নং সেকশনের একটি বাসায় লুকিয়ে রাখে।
এদিকে ওই প্রবাসী শামসুর কোনো খোঁজখবর না পেয়ে রহিমা বেগম বাদী হয়ে ১৩ ডিসেম্বর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি জিডি (নং-৭৭৭) করেন। পরে তার ভাই মো. জসিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ জিডি ও মামলার সূত্র ধরে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে প্রথমে অপহরণ চক্রের নারী সদস্য তাছলিমা আক্তার ওরফে সালমাকে আটক করে জিজ্ঞাবাবাদ করে।
তার দেয়া তথ্যানুযায়ী অপহরণ চক্রের অপর দুই সদস্য রিপন ও সাহাব উদ্দিনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের দেখানো মতে নগরীর হাউজিং এস্টেটের ৪নং সেকশানের ‘বিবত’ নামে একটি বাসার ৫ম তলা থেকে নির্খোজের চারদিন পর ১৬ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে প্রবাসী শামসুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জসীম উদ্দীন দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৩ আসামির বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১০ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এ মামলায় ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার জনাকীর্ণ আদালতে তিনজনকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেন বিচারক।
বাদীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা রেখা এবং বিবাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট নাঈমা সুলতানা মুন্নী। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রিপন মজুমদার ওরফে রিপন পলাতক এবং অপর দুই আসামি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
মন্তব্য চালু নেই