কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড কুমিল্লা

কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড কুমিল্লা নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। কুমিল্লা মহানগরীর বিভিন্ন গাছ পালা, টিনের ঘরের টিন উল্টে গেছে। গাছের নিচে চাপা পড়ে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এদিকে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সোমবার বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল কুমিল্লা।

সোমবারও দুপুর পর্যন্ত জেলার অনেক স্থানে এখনও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। এছাড়াও কুমিল্লার হোমনা, মুরাদনগর, মেঘনা, দাউদকান্দি, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, বরুড়া, নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, চান্দিনাসহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রামাঞ্চলের কালবৈশাখী ঝড়ে স্কুল, মাদ্রাসা, বিদ্যুৎ খুটি, দোকান পাট, বাড়ি ঘরে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ফলে স্কুল বন্ধ ঘোষণাও করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাছ পড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও ডিসের তারের উপর গাছ ভেঙ্গে পাড়ায় বিদ্যুৎ ও ডিস লাইন বন্ধ রয়েছে অনেক এলাকায়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে প্রচণ্ড ঝড় শুরু হয়। এ সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় গোটা কুমিল্লা জেলা। কুমিল্লা নগরীর অনেকগুলো বিলবোর্ড পড়ে যায়। রাজগঞ্জ এলাকায় কয়েকটি দোকানের চালা উল্টে যায়। ধর্মসাগর পাড় এলাকায় কয়েকটি গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।

ঝড়ে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লার ময়নামতি এলাকায় গাছ পড়ে আবদুর রশিদ (৭৫) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হয?েছেন। তিনি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ঝুমুর গ্রামের বাসিন্দা। জেলার দাউদকা্িন্দতেও কিছু কাচা পাকা ঘর ভেঙ্গে যায়।

এদিকে গতকাল রবিবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতলী গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ভেঙে পড়েছে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি। এ ছাড়া বাজারের ১৫টি দোকানসহ প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, রবিবার রাতে কাল বৈশাখী ঝড়ে উপজেলার জিংলাতলী গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ির টিনের চাল উড়ে যায়। জিংলাতলী ইউনিয়ন পরিষদ গোডাউন বাজারের ১৫টি দোকান ঘরের চাল উড়ে যায় এবং মালামালের ক্ষতি হয়। বিদ্যুতের ১০টি খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতলী, রতনপুর, ধীতপুর, গৌরীপুর, আটিপাড়া, তিনচিটা, ইছাপুরসহ ১৩টি গ্রামের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর বড় বড় গাছ ভেঙে পড়ায় দুই ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৩ এর জিএম মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় ওইসব গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা কাজ করছেন। আশা রাখি বিকেলের মধ্যে বিদ্যুত সংযোগ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের কুমিল্লার প্রধান প্রকৌশলী এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, আমরা সোমবার দুপুর পর্যন্ত অনেকগুলো লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছি। বাকী গুলোর কাজ চলছে।

রবিবার রাতে হোমনা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত কাল বৈশাখীর ঝড় ও তুফানে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার কালমিনা হাই স্কুলের দু’টি টিন শেড ভবনের টিনের ছাদ উড়ে যাওয়াসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কাঁচা পাকা শতাধিক ঘর বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। গাছ পালা ভেঙ্গে সড়কে পড়ে গিয়ে অনেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিড়ে ও খুঁটি ভেঙ্গে গিয়ে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মো. আক্তার হোসেন, জানান, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের ২০ টির ও বেশি খুটি ভেঙ্গে গেছে, অনেক স্থানে তার ছিড়ে গেছে এবং অর্ধ শতাধিক বাড়ির মিটার জ¦লে গেছে। তিতাস উপজেলার মেইন লাইনের তারও ছিড়ে গেছে। উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়তো এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। কালমিনা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল হোসেন জানান, এমনিতেই স্কুলে শ্রেণি কক্ষের সংকট তারপর তুফানে স্কুলের দু’টি ভবন ভেঙ্গে যাওয়ায় শ্রেণি কক্ষের অভাবে গতকালসোমবার স্কুলে আসা অনেক শিক্ষার্থীকে কাশ না করেই বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। স্কুলের জন্য দ্রুত একটি ঘর নির্মান করতে না পারলে স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।



মন্তব্য চালু নেই