‘কলকাতার মদ্যপ বদমাশরা’

বিতর্কিত নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন বৃহস্পতিবার ফেসবুকের পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি কলকাতার একটি নাটকে তাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ করেছেন। প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে নাটকটি রচিত হয়েছে।

নিচে তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘শুনলাম কোনও এক দেবাশীষ ঘোষ দস্তিদার একটা নাটক করছেন কলকাতায়, নাটকের নাম ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়’। ওই নাটকে মাঝে মাঝে সুনীলের স্ত্রী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ও নাকি অভিনয় করেন। মোটেও রাস্তার নাটক নয়, ডাকসাইটে অভিনেতারাও অভিনয় করেন। শংকর চক্রবর্তী নাকি সুনীল চরিত্রে অভিনয় করেন। সে নাটকে তসলিমা নামে এক চরিত্র আছে। একটা বেটে এবং বেঢপ দেখতে মহিলাকে খুব কুৎসিত মেকাপ করিয়ে নাকি তসলিমা চরিত্রে অভিনয় করানো হচ্ছে। তসলিমার কাজ মদ খাওয়া আর সুনীলের গায়ে ঢলে পড়া। তসলিমার বেহায়াপনা বা বেলেল্লাপনা দেখানোর কসরৎ। মজার ঘটনা এই, কলকাতার মদ্যপ বদমাশরা আমার নামে কুৎসা রটাতে গেলে প্রথম যেটা করে, সেটা হলো আমাকে একজন মদ্যপ বানায়। মদ আমি খাই না বললেই চলে। কালেভদ্রে খুব লাইক-মাইণ্ডেড বন্ধু বান্ধব নিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিলে এবং খুব ভালো লাল ওয়াইন হলে, বিশেষ করে বোর্দোর লাল ওয়াইন, আমি কয়েক চুমুক, অথবা এক গ্লাস পান করি, খুব বেশি হলে দু’গ্লাস, ব্যস। ওটুকুই আমার মদের দৌড়। মদের নেশা আমার কোনওকালেই হয়নি। একটারই নেশা ছিল আমার, সিগারেটের নেশা। সেটি অবশ্য অনেককাল কাটিয়ে উঠেছি।

ট্রেণ্ডটা শুরু করেছিলেন সমরেশ মজুমদার। আমার ‘দ্বিখণ্ডিত’ বা ‘ক’ বইটি বেরোবার পর বাংলাদেশে আমাকে ঘৃণা করার যে বীভৎস জোয়ার শুরু হয়েছিল, তা দেখেই তিনি বুঝে ফেলেছিলেন, বাংলাদেশে আদর পেতে হলে এবং নিজের বই-বিক্রি বাড়াতে হলে আমার বিরুদ্ধে জঘন্য জঘন্য কথা বলতে হবে। তাই করলেন। তাঁর মিথ্যের ঝুড়ি একদিন উপুড় করে ধরলেন। দেশ পত্রিকায় অনেকদিন ঘুরে ঘুরে নাকি শেষ পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে তাঁর কুৎসা-কাব্যটি তিনি ছাপাতে পেরেছিলেন। শুনেছি মদ্যপ বদমাশটা লিখেছেন, আমি নাকি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ঢাকার নর্দমায় পড়ে থাকতাম, তিনি আমাকে নর্দমায় মাতাল অবস্থায় নাকি অনেকদিন পড়ে থাকতে দেখেছেন।

সত্যিটা হলো, ঢাকায় মজুমদারের সঙ্গে আমার একদিনই দেখা হয়েছে, যেদিন তিনি প্রথম এসেছিলেন ঢাকায়। তখন কেউ তাঁকে চেনে না। অনেকে নামে চিনলেও চট করে চেহারা চেনে না। তিনি ঢাকা ক্লাবে উঠেছেন খবর পেয়ে বিভিন্ন খবরের কাগজে ফোন করে প্রখ্যাত লেখক সমরেশ মজুমদারের সাক্ষাৎকার নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। সেদিন আমিই নিয়ে গিয়েছিলাম তাঁকে বাংলা একাডেমির বইমেলায়, পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম দেশের কয়েকজন লেখকের সঙ্গে। কোথায় তিনি উপকারের উপকার স্বীকার করবেন, তা নয়, রীতিমত কৃতঘ্ন বনে গেলেন অল্প ক’দিনে।

এরপর আরেক মদ্যপ বাদল বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চাটুকার, সেদিন দেশ পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটালেন। এই কৃপণ মদ্যপ আমার অতিথিবৎসল চরিত্রের সুযোগ নিয়ে, আমাকে দিয়ে তাঁর জন্য কত যে দামি মদ কিনিয়েছেন! বাদল বসু্ও লিখেছেন, আমাকে নাকি বিরানব্বই সালে শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবে ‘নেশায় চুর’ দেখেছেন। ঘটনা হল, নেশায় চুর তিনি এবং তাঁর বন্ধুরা ছিলেন। মদ্যপান করতে তখনও আমি জানতাম না। বাদল বসু আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে বা মিথ্যে কথা বলে সুনীলের চাটুকার গোষ্ঠিকে খুশি করতে চাইছেন। রাগটা তো আছেই ভেতরে, সুনীলের মুখোশখানা একটুখানি খুলেছিলাম বলে রাগ। সুনীল যে মেয়েদের যৌন হেনস্থা করেন, তা কথা প্রসঙ্গে একদিন আমি জানিয়ে দিয়েছিলাম, সে কারণে রাগ।

ওপরের ঘটনাগুলোয় একটিই পজিটিভ জিনিস আমি পাচ্ছি, যৌন হেনস্থাকে আজকাল পুরুষেরা আর গৌরবের কাজ বলে মনে করছে না। তাই সুনীল যৌন হেনস্থা করতেন, এই সত্যটি জানিয়েছিলাম বলে সুনীল ভালো এবং আমি খারাপ —- তা প্রচার করতে সুনীল গোষ্ঠী এমনই উন্মাদ হয়ে উঠেছে যে পত্র পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে লেখালেখিই শুধু করছে না, মঞ্চে মঞ্চে নাটকও করছে।’



মন্তব্য চালু নেই