হলুদ বৃষ্টিতে চমকালো গ্রামবাসী

বৃষ্টির রঙের সাথে পরিচয় নেই, এমন কেউ আছে কি? নিত্যদেখা চিরাচরিত সেই রূপ ছেড়ে ভিন্নরূপের বৃষ্টি দেখলে কার না চোখ কপালে ওঠে। তেমনই ঘটনা ঘটল পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে। হলুদ রঙের বৃষ্টি দেখে চমকে ওঠল পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উপনগরীর পাশের গ্রামের মানুষ।

গ্রামটির নাম মেশেড়া। মঙ্গলবার সকালে হঠাৎই শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। গাঢ় হলুদ রঙের বৃষ্টির পানির ফোঁটা দেখে চমকে ওঠেন গ্রামের মানুষ। সকাল ৯টা নাগাদ আচমকা এই হলুদ রঙের বৃষ্টির ফোঁটা দেখে চাঞ্চল্য ছড়ায় গ্রামময়। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

পুরো ৭ মিনিট ধরে ঝরে হলুদ রঙের বৃষ্টি। বৃষ্টির জেরে গাছের পাতা, বাড়ির উঠোন, ছাদে হলুদ রঙের ছোপ পড়ে যায়। মুহূর্তেই হলুদ বৃষ্টি দেখতে ভিড় জমে যায় মেশেড়ায়।

আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীদের মতে, কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র লাগোয়া ওই এলাকায় বাতাসে ব্যাপক দূষণের জেরেই এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। প্রাথমিকভাবে অনুমান, এ ক্ষেত্রে অ্যাসিড মিশ্রিত থাকায় বৃষ্টির পানির রং হলুদ।

সাধারণত, কলকারখানা থেকে বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইড নির্গত হয়। বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে জলীয় বাস্পের সঙ্গে বিক্রিয়ায় সালফিউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। পানির সঙ্গে ওই অ্যাসিড মিশে বৃষ্টির মাধ্যমে নেমে এলে তাকে অ্যাসিড বৃষ্টি বলা হয়। অ্যাসিড বৃষ্টিতে ফসল, গাছপালার ক্ষতি হয়। ওই বৃষ্টির পানি মানুষের গায়ে লাগলে চামড়া পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

দেখা যায়, লাউ, বেগুন, কলা, টমেটো গাছের পাতায়, বাড়ির উঠোনে, ছাদে হলুদ রঙের প্রচুর ছোপ ফুটে উঠেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, তিনি দেখতে পান মাটিতে যেখানে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে, সেখানেই হলুদ ছোপ পড়ে যাচ্ছে। তাই ঘাবড়ে গিয়ে প্রতিবেশীদের ডাকেন তিনি।

একজন প্রৌঢ়া বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই উড়ে এসে পড়ে জানি। তাতে গাছের পাতা, বাড়ির ছাদে কালো আস্তরণ পড়ে যায়। কিন্তু আগে এ রকম হলুদ রঙের বৃষ্টি হতে কোনও দিন দেখিনি। তাই কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’

কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২ কিলোমিটার দূরে মেসেড়া গ্রাম। স্থানীয় একজন স্কুল শিক্ষক বলেন, ‘তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকায় আমরা ছাই দূষণের বিষয়ে জানতাম। কিন্তু এ দিন যে হলুদ রঙের রাসায়নিক বৃষ্টি হয়েছে, তা দূষণের জেরেই হয়েছে বলে আমাদের অনুমান। তাই এ নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়ে গেল।’

স্থানীয় দূষণ বিরোধী প্রতিরোধ কমিটির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত ছাইয়ের কয়লাগুড়োর সঙ্গে থাকা সালফার, কার্বন, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি রাসায়নিক পদার্থ জলীয় বাস্পের সঙ্গে অ্যাসিড জাতীয় তরল উৎপন্ন হয়ে রঙিন বৃষ্টির ফোঁটার মত পড়তে থাকে। এ দিনের ঘটনাও সেই কারণেই ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।’

কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ‘তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার ছাইয়ে সালফার জাতীয় পদার্থ খুব বেশি পরিমাণে থাকে না। তাই ছাই দূষণ থেকে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, এই অভিযোগ ঠিক নয়। দূষণ রোধে আধুনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’



মন্তব্য চালু নেই