শরণার্থী আর অবৈধ অভিবাসীরা যে দেশে যেমন আচরণ পায়

সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী দুইটি নৌকাডুবিতে জাতিসংঘের হিসেবে নিহত হয়েছে অন্তত ৮শ জন। উন্নত জীবনের আশায় প্রতিবছর হাজার হাজার অভিবাসী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যায়। আর এসব অভিবাসীবাহী নৌকাডুবির ফলে শতশত নিহতের খবরও প্রতিবছরই পাওয়া যায়। অাবার অভিবাসী হওয়ার ঘটনা এশিয়াতেও কম নয়।

মিয়ারমান থেকে বাংলাদেশে কিংবা শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতে প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যক অভিবাসী হয়ে আসে। কিন্তু একবার ইউরোপের উপকূলে পৌঁছে যাওয়ার পর অভিবাসীদের সাথে কেমন আচরণ করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো? কিংবা কেমন আচরণ পায় মিয়ানমার আর শ্রীলঙ্কার অভিবাসীরা? তা নিয়েই এই প্রতিবেদন।

বাংলাদেশ: পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে নাফ নদী পেরিয়ে প্রতিবছর প্রচুরসংখ্যক রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আসে। সেখানকার স্থানীয় সরকার ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর দ্বারা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হয় তারা। তাই নিরাপদ আশ্রয় ও জীবনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে পাড়ি জমান তারা। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রবেশের অনুমতি দিলেও বিষয়টি নিয়ে সবসময়ই মায়ানমার সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

বাংলাদেশে এখন ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই শরণার্থী ক্যাম্পের বাইরে বাস করে। সরকারের অভিযোগ এরা সাধারণ জনগোষ্ঠীর সাথে মিশে গিয়ে অপরাধ সংগঠিত করছে। তাছাড়া বাংলাদেশের মত একটি গরীব দেশের পক্ষে এত বিশাল সংখ্যক শরণার্থীকে ভারণ পোষণ, চিকিৎসা সেবাসহ মৌলিক চাহিদা মোটানো আর সম্ভব হচ্ছে না। আবার এদেরকে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ আছে।

migrants-11

ভারত: ১৯৮৩ সালে শ্রীলঙ্কা সরকার ও তামিল বিদোহীদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রচুর মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতে আসতে থাকে। গৃহযুদ্ধ পারবর্তী সময়ে এই হার অবশ্য কিছুটা কমেছে। ছোট ছোট কাঠের নৗকায় করে জীবনের ঝাঁকি নিয়ে শ্রীলঙ্কা থেকে তারা পাশ্ববর্তী তামিল নাড়ু রাজ্যে আসতো। তবে অন্যান্য দেশের মত অভিবাসীদের সাথে অতটা নিষ্ঠুর আচরণ করেনি ভারত।

তামিল নাড়ু রাজ্যে ভারত সরকার এইসব অবৈধ অভিবাসীদের জন্য একশ’র বেশি শরণার্থী ক্যাম্প খুলেছিলো। তামিল নাড়ুতে আসার পরই তাদেরকে বক্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো। বিদ্রাহের সাথে জড়িত নয়, এমনটা নিশ্চিত হওয়া গেলেই তাদেরকে থাকার জন্য জায়গা এবং কমিউনিটিতে কাজের সুযোগ করে দেয়া হতো। ২০০৯ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় এ গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি হয়।

ক্রিসমাস আইল্যান্ড: ইরাক, ইরান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চীন, সোমালিয়া, সুদান, মিয়ানমার এবং ভিয়েতনাম থেকে অভিবাসীবাহী নৌকাগুলো মূলত ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন বন্দর থেকে অষ্ট্রেলীয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্গত প্রায় ৩৪৫ কিলোমিটার আয়তনের ক্রিসমাস আইল্যন্ডে আসে। এদের অধিকাংশেরই কোন পাসপোর্ট থাকে না। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বর্তমান সরকার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই অষ্ট্রেলিয়া দেশটিতে কোন ধরনের শরনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। সরকারের প্রথঞম থেকেই শরনার্থীবাহী কোন নৌকা উপকূলে অঅসলে তাদের সেখান থেকেই ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।

migrants-10

ক্রিসমাস আইল্যান্ডে দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য একটি ডিটেনশান ক্যাম্প খোলা হয়েছে। এছাড়া পাপুয়া নিউগিনি ও প্যাসিফিক আইল্যান্ড নেশন অব নাউরুকে এসব রাজৗনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের কাগজপত্র প্রক্রিয়াধীন থাকা পর্যন্ত থাকার জন্য খরচ দেয় অষ্ট্রেলিয়া। এদের মধ্যে যাদের জাতীয়তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়, তাদেরকে সেসব দেশে ফেরত পাঠায় অষ্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ। সমুদ্রপথে যারা অষ্ট্রেলিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থনা করেন, তাদের কমই মুল্যায়ন করে অষ্ট্রেলিয়া।

বরং বিমান বা অন্যপথে যায়া অষ্ট্রেলিয়ায় এসে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থনা করে, তাদের ব্যাপারে অষ্ট্রেলিয়া বেশি ইতিবাচক। তারপরও এদেরকে বেশ কিছুদিন ডিটেনশন সেন্টারে (বিনা বিচারে আটকে রাখা হয় যেখানে) থাকতে হয়। ডিটেনশান সেন্টার থেকে যারা মুক্তি পান, তারা অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন ছোট বা মাঝারি মেয়াদে কাজের সুযোগ পান। তবে তারা সরকারী হাইজিংয়ে বসবাস করার সুযোগ পান না। তাদেরকে নিজেদের খরচেই থাকতেই হয়। তবে ফ্রি মেডিকেল সুবিধাসহ অনৗ্যান্য কিছু সুবিধা তারা ভোগ করতে পারেন।

migrants-12

অষ্ট্রেলিয়া: আফগানিস্তান, ইরান, শ্রীলঙ্কা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ থেকে সমুদ্রপথে অষ্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমায় প্রচুর সংখ্যক মানুষ। অষ্ট্রেলিয়া ১৯৫১ সালের জাতিসংঘ শরনার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। দেশটি এখনো রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী বা শরনার্থীদের বৈধচোখে দেখেনা। কিন্তু এসব আশ্রয়প্রর্থীদের অস্থায়ীভাবে থাকার জন্য দেশটি ১৩ টি ডিটেনশন সেন্টার পরিচালনা করে।

মালয়েশিয়া: মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সুদান অধিকাংশই জাতিসংঘ শরনার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর সহায়তায় তৃতীয় কোন দেশে স্থায় হতে চায়, অন্যরা মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়া হয়ে অষ্ট্রেলীয় উপকূলে ভিড়তে চায়। ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডের মত মালয়েশিয়ায় এ ধরনের আম্রয়প্রার্থীদের কোন জায়গা নেই। মালয়েশিয়া এই ধরনের আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রেফতার করে জেল দেয় বা ডিটেনশান সেন্টারে আটকে রাখে। মালয়েশিয়ায় কোন শরনার্থী ক্যাম্প নেই। মালয়েশিয়ায় এসব আশ্রয়প্রার্থনা কারীদের সন্তানদের নূন্যতম শিক্ষার সুযোগও দেয়া হয় না। তাছাড়া দেশটিতে তারা বৈধভাবে কাজ করারও উপযুক্ত নয়।

বিজনেস ইনসাইডার অবলম্বনে



মন্তব্য চালু নেই