ভারতে ৮০০ জন বাল্মীকি মুসলিম হলেন

মাথার ওপর থেকে ছাদ হারানোর অনিশ্চয়তা ঘুম কেড়ে নিয়েছিল তাঁদের। ক’দিন ধরে দু-চোখের পাতা এক করতে পারছিলেন না। কী করবেন, কোথায় যাবেন বউ-বাচ্চা পরিবার নিয়ে? ছিন্নমূল হওয়ার এই টানাপোড়েনের মধ্যেই কে যেন বলে যায়, একমাত্র ধর্মান্তকরণই পারে তোমাদের বাঁচাতে। সত্য-মিথ্যে যাচাইয়ের মতো মানসিক অবস্থায় ছিলেন না তাঁরা, বাল্মীকিরা। কালক্ষেপ না-করে, রাতারাতি তাঁরা ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম। দু-একজন নয়, একটা গোটা অঞ্চলের কয়েক’শো পরিবার, সবমিলেয়ে ৮০০-র বেশি বাল্মীকি। মঙ্গলবার, আম্বেদকরের ১২৪তম জন্মদিনটিকেই ধর্মান্তকরণের জন্য বেছে নিয়েছিলেন তাঁরা। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য তৈরি হয় ভারতের উত্তরপ্রদেশের রামপুরে।

কেন ঘর হারানোর দুশ্চিন্তা ? নিছকই কি গুজবের ভূত ভর করেছিল ওঁদের ওপর? বাল্মীকিরা বলছেন, ‘না’। দিন কয়েক আগেই পুর কর্তৃপক্ষ এসে তাঁদের সবার বাড়িতে লাল দাগ কেটে যায়। জানতে পারেন, ভেঙে দেওয়া হবে তাঁদের মাথার ছাদ। সেখানে তৈরি হবে শপিং মল। তাঁরা এ-ও জানতে পারেন উত্তরপ্রদেশের প্রভাবশালী মন্ত্রী আজম খানের সম্মতিতেই গোটা ব্যাপারটি ঘটতে চলেছে। তাই দিশেহারা হয়ে পড়ে পরিবারগুলো।

যদিও, রামপুরের জেলাশাসক চন্দ্রপ্রকাশ ত্রিপাঠী ধর্মান্তকরণ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মন্ত্রী আজম খান এ নিয়ে সরাসরি কিছু বলেন নি। তবে, তাঁর হয়ে সাংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব সামলানো ফসাহত আলি খান জানান, ‘দেখুন, সরকারি জমি জবরদখল করে রাখাটা অন্যায়। এবং সেটা কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তাঁরা যে ধর্মেরই হোক না কেন। তাঁর আরও বক্তব্য, ‘রামপুরে যাঁরা সরকারি জমি জবরদখল করে রয়েছেন, তাঁরা অধিকাংশই মুসলিম। ফসাহত এই ধর্মান্তকরণের দায় ঝেরে ফেলে বলেন, এই বাল্মীকি পরিবারদের কেউ-ই প্রতিশ্রুতি দেয়নি, তাঁরা মুসলিম হলেই সরকারি সম্পত্তি জবরদখল করে থাকতে পারবেন। তাঁরা কেন এ কাজ করেছেন, তাঁরা নিজেরাই ভালো বলতে পারবেন।’

মঙ্গলবার দিনভর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকপ্রস্থ নাটক হয়। জানা যায়, ধর্মান্তকরণের জন্য কোনও আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। ছিলেন না ধর্মীয় কোনও গুরুও। মাথায় মুসলিম টুপি পরে, বাল্মীকিরা নিজেদের মুসলিম বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনার জেরে, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রামপুরের বাল্মীকি বস্তিতে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

বাল্মীকি বস্তির এক বাসিন্দা ভীম অনার্যর কথায়, ‘ক’দিন আগে আমাদের এলাকায় পুরসভার এক কর্মী এসেছিলেন। তিনি জানিয়ে যান, যত দ্রুত সম্ভব ঘর খালি করে চলে যেতে হবে।’ অভিযোগ, তাঁরা ওই পুরকর্মীর কাছে অসহায়তা প্রকাশ করলে, তিনিই বাল্মীকিদের পরামর্শ দেন মুসলিমে ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার। ঘর আগলাতে সেই প্রস্তাবে তত্‍‌ক্ষণাত সম্মতি দেন তাঁরা।

ওই বস্তিরই আর এক বাসিন্দা অবিনাশ তপন জানালেন, কিছুদিন আগেই তাঁদের বাল্মীকি বস্তিতে এসেছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক। বাসিন্দারা তাঁর কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করলে, তিনি আশ্বস্তও করেছিলেন। কিন্তু, বাল্মীকিরা চেয়েছিলেন প্রশাসনের তরফে লিখিত আশ্বাস। সেই আশ্বাস না-মেলাতেই ধর্মান্তরিত হওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাঁরা নিয়ে ফেলেন।



মন্তব্য চালু নেই