বেকায়দায় ভারতের চার ক্ষমতাধর নারী

ইস্তফার সিরিয়ালে ভারতের চার ক্ষমতাধর নারী। এরা হচ্ছেন- রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপির প্রভাবশালী নেতা বসুন্ধরা রাজে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও মহারাষ্ট্রের মহিলা ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী প্রয়াত বিজেপি নেতা গোপীনাথ মুন্ডের মেয়ে পঙ্কজা মুন্ডে। বলা যায়, ভারতীয় রাজনীতিতে এ সময়ে এই চার নারীই আলোচনায়।

জানা যায়, ললিত কাণ্ডে বলি হতে যাচ্ছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপির প্রভাবশালী নেতা বসুন্ধরা রাজে। বাঁচার কোনো পথ আর নেই তার। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ললিত মোদির অভিবাসনসংক্রান্ত আবেদনপত্রের দলিল উপস্থাপন করে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের কফিনেই পেরেক ঠোকে কংগ্রেস।

অবশ্য এই ললিত পর্বটি শুরুই হয় সুষমা স্বরাজকে দিয়ে। অভিযোগ, ললিত যাতে তার অসুস্থ স্ত্রীর সঙ্গে পর্তুগালে চিকিৎসার জন্য যেতে পারেন, সেজন্য তাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন সুষমা। তার পরপরই প্রকাশ পায়, চার বছর আগে একইভাবে ললিত মোদির যাবতীয় অভিবাসনসংক্রান্ত ছাড়পত্রকে সমর্থন জানিয়েছিলেন বসুন্ধরা রাজে। এখানেই শেষ নয়। তিনি শর্ত দেন, এই সব কথা যেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানতে না পারেন।

ছিলেন দু’জন- সুষমা স্বরাজ ও বসুন্ধরা রাজে। এলেন আরো দুজন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এবং মহারাষ্ট্রের মহিলা ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী পঙ্কজা মুন্ডে! নির্বাচন কমিশনে শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে ভুয়া তথ্য দেওয়ার অভিযোগে স্মৃতির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাটি বুধবার শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন আদালত। আর পঙ্কজার বিরুদ্ধে অভিযোগ, কোনো দরপত্র ছাড়া একই দিনে ২৪টি সংস্থাকে শিশুদের স্কুলের জন্য ২০৬ কোটি টাকার জিনিসপত্র কেনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি।

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ প্রশ্ন করেন, কে আগে যাবেন? তিনজনের ইস্তফার দাবি নিয়ে কংগ্রেস কোনো রকম আপস করবে না। এক-এক করে সবাইকে ইস্তফা দিতে হবে। একেবারে টিভি সিরিয়ালের মতো। আজকের (বুধবারের সংবাদ সম্মেলনের) পর বসুন্ধরার ইস্তফার দাবি থাকল পয়লা নম্বরে। দুই নম্বরে থাকলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তিন নম্বরে স্মৃতি ইরানি। আর পঙ্কজা? জয়রাম জানান, ওই ব্যাপারে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় শোরগোল তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য নেতৃত্বকে।

এই চারজনের কার অবস্থা কতটা খারাপ বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও বসুন্ধরাও যে কতটা বেকায়দায়, সেটা বোঝা গিয়েছে, লন্ডন সফর বাতিলের ঘোষণায়। তিন দিন পরে তার লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল শিল্পমহলের সঙ্গে বৈঠক করতে। কিন্তু বুধবার রাতেই সেই সফর বাতিল করা হয়েছে।

এখন প্রশ্ন, বিজেপি কি বসুন্ধরাকে সরানোর ব্যাপারে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবে? বিজেপি শীর্ষ সূত্রের মতে, তিনটি কারণে তারা আপাতত অপেক্ষা করতে চায়। প্রথমত, এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফলাও করে বলেছিলেন, তার সরকার দুর্নীতি-অনিয়মের মতো বিষয়গুলি অভিধান থেকে মুছে দিয়েছে। এমনকি, রাজনাথ সিংহ ও রবিশঙ্কর প্রসাদ মিলে জোর গলায় বোঝাতে চান, তারা ইউপিএ সরকারের মতো দুর্নীতি করেন না। তাদের মন্ত্রীরা কথায় কথায় ইস্তফাও দেন না। এর পরে এখনই বসুন্ধরাকে সরালে নিজেদের কথাকেই অস্বীকার করতে হয়। দ্বিতীয়ত, বসুন্ধরাকে এখনই সরিয়ে দেওয়া হলেও বিরোধীরা শান্ত হয়ে বসে থাকবে না। সংসদে যে ধুন্ধুমার হবে, তার ইঙ্গিত এর মধ্যেই মিলতে শুরু করেছে। বরং এর পরে তারা একে একে সুষমা স্বরাজ, স্মৃতি ইরানির ইস্তফার দাবি জোরালো করবে। তৃতীয়ত, জোর করে বসুন্ধরাকে সরাতে গেলে তিনি বিদ্রোহী হয়ে যাবেন, এই আশঙ্কাও আছে। রাজস্থানে বিজেপি ভেঙে গেলে তার খেসারত দিতে হবে দলকেও।

সেজন্য তারা এখন বল ঠেলে দিয়েছেন বসুন্ধরার কোর্টেই। দল চাইছে যে বসুন্ধরা এত দিন নথি নেই বলে নিজের অপসারণ ঠেকিয়ে রেখেছিলেন, সেই বসুন্ধরাই আত্মপক্ষ সমর্থনে এগিয়ে আসুন। তিনিই দলকে জানান, এই নথি ভুয়া কি না?

তথ্যসূত্র : ভারতীয় পত্রপত্রিকা



মন্তব্য চালু নেই