প্রশাসন ও ব্যাংকের দুই তদন্ত কমিটির কৃষি ব্যাংক পরিদর্শন ॥ বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি কৃষি ব্যাংক থেকে উপজেলা পরিষদের সঞ্চয়ী হিসাবের চেক জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার সকালে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি সরেজমিন কৃষি ব্যাংক পরিদর্শন ও কর্মকর্তাদের বক্তব্য গ্রহন করেছেন। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদের সার্টলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর আল কামাল নয়নকে সাময়িক বরখাস্ত করার খবর প্রকাশ হওয়ায় বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। তার সম্পর্কে অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনিরুল ইসলাম জানান, তদন্ত কমিটির অপর ২সদস্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ খায়রুল ইসলাম ও উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ এহিয়াতুজ্জামান মঙ্গলবার সকালে কৃষি ব্যাংক বালিয়াকান্দি শাখায় চেক জালিয়াতি করে অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে তদন্তে যাই। ওই দিনে দায়িত্বরত কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম, ক্যাশিয়ারদের সাথে কথা বলাসহ লিখিত বক্তব্য গ্রহন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান, অফিস সুপার মনিরুজ্জামান, সার্টলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর আল কামাল নয়নের লিখিত বক্তব্য গ্রহন করা হয়েছে। তিনি আশা করেন, মেয়াদের মধ্যেই সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

কৃষি ব্যাংক বালিয়াকান্দি শাখার ব্যবস্থাপক এ,এস,এম জাকারিয়া জানান, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ২ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। রাজবাড়ী আঞ্চলিক নিরীক্ষা কার্যালয়ের উর্ধতন মুখ্য কর্মকর্তা মোঃ সানাউল্লাহ ও কর্মকর্তা মোঃ আনিসুর রহমান মঙ্গলবার কৃষি ব্যাংকে সরেজমিন তদন্ত করেছেন। তদন্ত পুর্বক অভিযুক্ত হলে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটিও কৃষি ব্যাংকে এসে বক্তব্য গ্রহন করেছেন।
জানাগেছে, উপজেলা পরিষদের চেক বই উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়। অফিস সুপার নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর গ্রহন শেষে ফাইলটি প্রদান করেন উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সার্টলিপিকার- কাম- কম্পিউটার অপারেটর আল কামাল ওরফে নয়নের নিকট। আর এ ফাইলটি উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর শেষে অফিস সুপারের নিকট আসলেই ধরা পড়ে একটি চেকের পাতা গায়েবের ঘটনা। বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসানের সাথে অফিস সুপার মনিরুজ্জামান পরামর্শ করে এবং ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে গত ৬ মে বালিয়াকান্দি থানায় ২০২ নম্বর জিডি করে।

বালিয়াকান্দি কৃষি ব্যাংক থেকে ওই চেক দিয়ে ৭৭ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে জনৈক রফিকুল ইসলাম। চেকে হাতের লেখাটি কার উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সার্টলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর আল কামাল নয়নের । আবার ব্যাংক থেকে নয়নই নিজহাতে টাকা উত্তোলন করেছে বলে বিশ্বস্থ সুত্রে জানাগেছে। তবে কে এই রফিকুল ইসলাম । তার কোন অস্তিত্ব পাওয়া না গেলেও চেকের পিছনে দেওয়া মোবাইল নং-০১৭১৪-৬৫২২২৭ কক্সবাজারের হোটেল সীগালের এক কর্মচারীর। তবে রফিকুল ইসলাম নামের চেকটির বিপরীতে আল কামাল নয়ন টাকা উত্তোলন করে। তাহলে ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম চেকটিতে রফিকুল ইসলামের দু,টি স্বাক্ষর থাকলেও কেন নয়নের স্বাক্ষর গ্রহন করেনি। এ বিষয়টির হেতু কি? তিনি কি এ চেক জালিয়াতির সাথে জড়িত না দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন এ প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। চেক জালিয়াতির প্রকাশ পেলে গত ৭ মে কৃষি ব্যাংক বালিয়াকান্দি শাখার উপজেলা পরিষদের সঞ্চয়ী হিসাব ৪৬৭৪ নম্বরে উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সার্টলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর আল কামাল নয়নের ভাই সোনাপুর মীর মশাররফ হোসেন কলেজের প্রভাষক আল বাসেত খোকন ৭৭ হাজার টাকা জমা প্রদান করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান জানান, সোমবার বিকালে উপজেলা পরিষদের সার্টলিপিকার- কাম- কম্পিউটার অপারেটর আল কামাল ওরফে নয়নকে সাময়িক বরখাস্ত করে পত্র প্রদান করা হয়েছে।

তবে নয়নকে সাময়িক বরখাস্তের খবর প্রচারিত হওয়ার পর বেরিয়ে আসছে নানা অজানা তথ্য। অনুসন্ধানে গিয়ে কৃষি ব্যাংকের নানা অনিয়মের ঘটনার আলামত পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি পরবর্তীতে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।



মন্তব্য চালু নেই