নিজ বাড়িতে ১৮ বছর শিকলবন্দি: মুক্তি মিলবে পুত্রের চাকরিতে!
মানসিক অসুস্থতায় হারাতে হয়েছে পুলিশের চাকরি। বাধ্যতামূলক অবসরের পর প্রায় ১৮ বছর ধরে নিজ বাড়িতেই শিকলবন্দি রয়েছেন সাবেক কনস্টেবল মোক্তার মোল্লা। ছাড়া পেলে কোথাও হারিয়ে যাবেন—এমন আশঙ্কাতেই পরিবারের সদস্যরা আটকে রেখেছেন তাঁকে। অর্থাভাবে মেলেনি তাঁর যথাযথ চিকিৎসা। সম্প্রতি পুলিশ বিভাগে একমাত্র পুত্রের চাকরির সুবাদে পরিবারটিতে এসেছে আনন্দের ঝিলিক। আর পুত্রের উপার্জনে এবার চিকিৎসার পাশাপাশি মোক্তারের শিকলমুক্তি ঘটতে পারে বলে মনে করছে সবাই।
রাজবাড়ী সদরের বসন্তপুর ইউনিয়নে মহারজপুর মধ্যপাড়ায় বসবাস সাবেক পুলিশ কনস্টেবল মোক্তার মোল্লার। একমাত্র ছেলে তৈয়বুর রহমান শিবলী সোমবার নিয়োগ পেয়েছেন পুলিশ বিভাগে। এতে পাঁচ সদস্যের পরিবারটি ভাসছে আনন্দে। আর সবার প্রত্যাশা, এবার চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে এবং মুক্তি ঘটবে মোক্তারের।
গতকাল সকালে বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি পিলারের সঙ্গে শিকলবন্দি অবস্থায় চাদর গায়ে জড়িয়ে বসে আছেন সাবেক পুলিশ কনস্টেবল মোক্তার মোল্লা।
ছেলে তৈয়বুর রহমান শিবলী জানান, মোক্তার মোল্লা ১৯৭৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে যোগদান করেন। অসুস্থ হয়ে মানসিক রোগীতে পরিণত হলে ১৯৯৭ সালের ১ অক্টোবর তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। বাড়িতে ফিরে তিনি একপর্যায়ে কাউকেই চিনতে পারছিলেন না, এদিক-সেদিক চলে যাচ্ছিলেন। আর তাই বাধ্য হয়েই তাঁকে শিকলবন্দি করতে হয়। প্রায় ১৮ বছর ধরে এভাবেই আছেন তিনি।
শিবলী ফরিদপুরের মধুখালীর আইন উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে বিএ পড়ছেন। বড় বোন মুক্তা খাতুন পড়েন ফরিদপুরের সারদা সুন্দরী কলেজের বিএ ক্লাসে। ছোট বোন মহুয়া খাতুন পঞ্চম শ্রেণিতে। চরম আর্থিক সংকটে পড়া পরিবারটিতে শিবলী অসহায় হয়ে পড়েছিলেন চাকরি না পেয়ে। মা তাসলিমা বেগম নানাভাবে সংসার চালিয়ে যাচ্ছিলেন এবং সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছিলেন। কিন্তু মোক্তার মোল্লার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারছিলেন না। এমন অসহায় পরিস্থিতিতে শিবলী দেখা করেন রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জিহাদুল কবিরের সঙ্গে। তিনি পরিবারটির দুর্দশার চিত্র জেনে শিবলীকে পোষ্য কোটায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির আবেদন করতে বলেন। সেই মোতাবেক গত ১০ ডিসেম্বর পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শিবলী উত্তীর্ণ হন। সোমবার জানতে পারেন পুলিশে চাকরি হয়েছে তাঁর।
চাকরি পেয়ে উল্লসিত শিবলী বলেন, ‘বাবা সততার সঙ্গে চাকরি করেছেন, আমিও তা করতে চাই। আর নিজের উপার্জন দিয়ে বাবার উন্নত চিকিৎসা করাতে চাই। বাবা আর শিকলবন্দি থাকুক, তা চাই না।’
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বলেন, ‘পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় ৬৭ জন চাকরি পেয়েছে। তাদের মধ্যে পোষ্য কোটায় তৈয়বুর রহমান শিবলী অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে। সে কারণেই তার চাকরি হয়েছে।’কালের কণ্ঠ
মন্তব্য চালু নেই