ডিসিসি নির্বাচন
জাপায় দ্বন্দ্ব, জামানত হারাতে পারেন প্রার্থীরা
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টির মধ্যে আবারো দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব। ফলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। এমন অবস্থা বিরাজমান থাকলে সিটি নির্বাচনে জাপা সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা জামানত হারাবেন বলে মনে করছেন পার্টির শীর্ষ নেতারাই। তবে এমনটা মানতে নারাজ পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু। তার সোজাসাপটা কথা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে জাপার মেয়র প্রার্থী দু’জন। আর তাদের পক্ষেই কাজ করছেন পার্টির সব নেতা।
ডিসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে লড়াইয়ের জন্য জাপার পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দুই সিটিতে দু’জন মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দক্ষিণে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী মিলন এবং উত্তরে বাহাউদ্দিন বাবুল। মেয়র প্রার্থী হিসেবে তাদের নাম ঘোষণাকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় দ্বন্দ্ব। পার্টি ঘোষিত কোনো প্রার্থীকেই মেনে নিতে পারেননি অনেকে। ফলে নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দু’ভাগে। শুধু তাই নয়, যার ফলশ্রুতিতে সম্প্রতি চট্টগ্রামে পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুর বাসায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
ক্ষোভ ও দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ এখন মাঠেও। দক্ষিণের প্রার্থী মিলনকে কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও কাজী ফিরোজ রশিদের সমর্থকরা সহযোগিতা করছেন না বলে অভিযোগ। যদিও মিলন এরমধ্যেই তার প্রচার ও প্রচারণা শুরু করেছেন। অপরদিকে দক্ষিণের বাহাউদ্দিন বাবুলকেও প্রচার প্রচারণায় কোনো সহযোগিতা করা হচ্ছে না পার্টি থেকে। ফলে তিনি তার গুটিকয়েক সমর্থক নিয়েই চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণা।
তবে দক্ষিণের চেয়ে উত্তরের অবস্থা আরো বেশি নাজুক। এ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির মধ্যে বিরোধ অনেকটাই প্রকাশ্যে। উত্তরের মেয়র প্রার্থী বাহাউদ্দিন বাবুলকে মেনে নিতে পারেননি পার্টির অনেক প্রেসিডিয়ামই। ফলে উত্তরের জন্য এরশাদের ঘোষিত প্রার্থী বাবুলের পক্ষ ছেড়ে জাপার অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম ও তৃণমূল নেতাই এখন চেয়ারম্যানের বহিষ্কৃত উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজের পক্ষে কাজ করছেন।
ইতোমধ্যে ববির নির্বাচন বিষয়ক আহ্বায়ক করা হয়েছে জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ পারভেজ সোহেল রানাকে। এমনকি ববি যেদিন নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করেন সেদিন উত্তরের অধিকাংশ থানার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র সমাজের অনেক সাবেক ছাত্র নেতা ও জাপার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। শুধু সোহেলই নয় তার মতো অনেক প্রেসিডিয়াম, যুগ্ম-মহাসচিব, উপদেষ্টাও ববির পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা যায়।
জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, ডিসিসি নির্বাচনে উত্তরের জন্য ববি হাজ্জাজকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করার কথা ছিল। সে অনুযায়ী ছকও আঁকা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই ববির পরিবর্তে বাবুলের নাম ঘোষণা করেন এরশাদ। এরপর থেকেই পার্টিতে দেখা দেয় অসন্তোষ। বাবুলকে মেনে নিতে না পেরে ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা মিছিলও করে। আর এতে এক শ্রমিক নেতাকে এরশাদের সামনেই প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সাল চিশতী প্রকাশ্যে গুলি করে মারার হুমকি দেন। অপরদিকে ববি হাজ্জাজ নিজেকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পর তাকে উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে দেন পার্টির চেয়ারম্যান। তবে তাকে সরিয়ে দেয়ার পেছনে মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু ও চিশতী মূখ্য ভূমিকা পালন করেন বলে অনেক নেতার অভিযোগ।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, উত্তরের জন্য যাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে তার কোনো জনপ্রিয়তাই নেই। এছাড়াও উত্তরের তৃণমূল পর্যায়ের কোনো নেতাকর্মীই তাকে চেনে না। এমনকি পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের সঙ্গেও তার তেমন একটা ভালো সম্পর্ক নেই। সরকারকে খুশি করতেই এরশাদ উত্তরে এমন দূর্বল প্রার্থী ঘোষণা করেছেন বলে জানান তিনি।
আরেক প্রেসিডিয়াম বলেন, ‘ববিকে বাদ দিয়ে বাবুলকে প্রার্থী ঘোষণার বিষয়টি কোনোভাবেই নেতাকর্মীরা মানতে পারছে না। ফলে বাবুলের কোনো জনসংযোগে জাপার উত্তরের নেতাকর্মীরা সঙ্গে নেই। তিনি একা একা বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে কোনো প্রেসিডিয়ামের তেমন যোগাযোগও নেই।’
এদিকে মেয়র ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো প্রকার প্রশ্নের সম্মুখিন না হতে হয় সে জন্য পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ চিকিৎসার নাম করে সিঙ্গাপুরে সময় কাটিয়ে এলেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘বাহাউদ্দিন বাবুলের কি যোগ্যতা আছে যে তাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে হবে? তাকে তো মাঠে কেউ চেনেই না। আর বাস্তবতা হলো মাঠে তার কোনো জনপ্রিয়তাই নেই।’
বাবুল তেমন ভোট পাবেন না দাবি করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে তার জামানতই বাতিল হয়ে যাবে।’
পার্টির একজন প্রবীন নেতা বলেন, ‘স্যার তো প্রতিবারই ভুল করেন। কারণ তার পাশে যারা থাকেন তারা তাকে ভুল বুঝিয়ে দুর্বল প্রার্থী ঘোষণা করতে বাধ্য করেন। ফলশ্রুতিতে পার্টিতে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং জাপা প্রতি সিটি নির্বাচনেই হেরেই চলেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিবারই চেয়ারম্যান টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন এবং দলকে মানুষের হাসির পাত্র বানিয়ে দেন। যারা তার সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেন না তারাই বিভক্ত হয়ে পড়েন।’ ঢাকা সিটিতে জাপার মেয়র প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তারা কতটুকু ভোট পাবেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এ নেতা।
জাপার একটি সূত্র জানায়, সরকারের কারণেই দুই সিটিতে অত্যন্ত দুর্বলমানের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছেন এরশাদ। কেননা আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই ডিসিসিতে মেয়র পদ হারাতে চায় না। তাই এরশাদকে দুর্বল প্রার্থী ঘোষণা করতে বাধ্য করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। আর এর পেছনে পার্টির মহাসচিব ও সংসদীয় বিরোধী নেত্রী রওশন এরশাদ কাজ করেছেন বলেও জানায় সূত্রটি।
এ ব্যাপারে পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘জাপার মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই। যাদের মেয়র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে তাদের সঙ্গে পার্টির সবাই কাজ করছেন। মিলন ও বাবুল ছাড়া জাপার আর কোনো প্রার্থী নেই।’
তবে এরশাদ ঘোষিত প্রার্থী ছাড়া অন্যদের পক্ষে যেসব প্রেসিডিয়াম ও নেতা কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ‘কোনো নেতা বা প্রেসিডিয়ামই জাপা ছাড়া অন্য কোনো মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে না।’
মন্তব্য চালু নেই