শেষ ধাপের ভোটের অপেক্ষা

ইউনিয়ন পরিষদের ষষ্ঠ ও শেষ ধাপের ভোট শুরু হতে অপেক্ষা আর কয়েক ঘণ্টার। শনিবার (৪ জুন) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী সরঞ্জাম, নির্বাচনী কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যরা শুক্রবার (৩ জুন) বিকেল নাগাদ কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছাতে শুরু করবেন। প্রার্থী ও ভোটাররা অপেক্ষায় ভোট শুরুর।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শেষ ধাপে শনিবার ভোট হচ্ছে ৪৬ জেলার ৯২ উপজেলার ৭১০ ইউপিতে। এসব ইউপির সাড়ে ছয় হাজার কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখের কিছু বেশি। এক লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় লাখের মতো সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন ভোটের দায়িত্বে।

স্থানীয় সরকার পরিষদের এটি নবম নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের দেয়া সময় অনুযায়ী, প্রার্থীরা প্রচারণা শেষ করেছেন বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে।

এ ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৩৩ হাজার প্রার্থী। চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ২২৩, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫ হাজারের বেশি প্রার্থী ভোটের এ লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে ৬ ধাপে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার তৃণমূলের সাড়ে চার হাজার ইউপিতে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচন শুরু হয়। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রার্থীসহ অন্তত ১০৮ জনের প্রাণহানির খবর দিয়েছে গণমাধ্যম। নির্বাচনি সহিংসতায় আহতের সংখ্যা সহস্রাধিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গোলযোগ ও অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগও আছে।

তৃণমূলের জনপ্রিয় ভোটের এ লড়াইয়ে সহিংসতায় প্রাণহানি ও অনিয়মের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে নির্বাচন আয়োজক সংস্থার বিরুদ্ধে। প্রতি ধাপের নির্বাচন শেষে অনিয়ম, সহিংসতা নিয়ে দায়সারা জবাব নিয়ে দায়িত্ব এড়িয়েছে কমিশন। সংস্থাটির আশা শেষ ধাপের ভোটগ্রহণ আগের ৫ ধাপের চেয়ে ‘ভালো হবে’।

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সহিংসতা রোধ ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দেয়া হয়েছে। আশা করি, ভালো নির্বাচন হবে শেষ ধাপে।’

বিশৃঙ্খলা এড়াতে ইসির অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ভোটে অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বাঁশখালীর সব ইউপির ভোট স্থগিত করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না।’

ইউপি নির্বাচনে ইতিহাসে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ভোট হচ্ছে। অনিয়ম-সহিংসতা নিয়ে ভোটের শুরু থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে। ক্ষমতাসীনরা সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে দাবি করলেও বিএনপি বলছে ‘তামাশার ভোট’ হচ্ছে।

তৃণমূলের এ নির্বাচনে দেশের ১৫টিরও বেশি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে। এ পর্যন্ত ৫ ধাপের বেসরকারি ফলাফলে আওয়ামী লীগের ২ হাজার ২৬৭, বিএনপির ৩১০ প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৬৯৬ জন।

প্রথম ধাপের ফলাফলে আওয়ামী লীগের ৪৯৪ ও বিএনপির ৫০ প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১০৯ ইউপিতে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ৫৪ প্রার্থী।

দ্বিতীয় ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪১৯ ও ধানের শীষের ৬৩ প্রার্থী জয় পেয়েছেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১১৭ ইউপিতে। আওয়ামী লীগের ৩৪ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

তৃতীয় ধাপের ভোটে আওয়ামী লীগ থেকে ৩৬৬, বিএনপির ৬০ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ২৯ প্রার্থী। অনান্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১৩৯ ইউপিতে।

চতুর্থ ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪০৫ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আরও ৩৫ চেয়ারম্যান। এ ধাপে বিএনপির ৭০ ও ১৬১ স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন।

পঞ্চম ধাপে আওয়ামী লীগের ৩৯২ এবং বিএনপির ৬৭ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের আরও ৩৯ প্রার্থী। অন্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র ১৮০ প্রার্থী জয় পেয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, প্রথম ধাপে ৭৪ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৭৮ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৭৬ শতাংশ, চতুর্থ ধাপে ৭৭ শতাংশ ও পঞ্চম ধাপে ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।

এদিকে ষষ্ঠ ও শেষ ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে আওয়ামী লীগের আরো ২৮ প্রার্থী। এক উপজেলায় ভোট স্থগিত হওয়ায় বাকি ২৭ জন এখন বিনা ভোটে জয়ীর তালিকায়।

এসব ইউপি হচ্ছে- শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের রামভদ্রপুর, চরকুমারী, রাঙামাটির কাউখালীর ফটিকছড়ি, মাদারীপুরের শিবচরের ভদ্রাসন, ভোলার দৌলতপুরের ভবানিপুর, চরফ্যাশনের চর কুকরিমুকরি, বগেরহাটের মোল্লাহাটের গাংনি, বগুড়া সদরের ফাঁপোর, শাহজাহানপুরের আশেকপুর, পিরোজপুর সদরের শংকরপাশা, পাবনা সদরের গয়েশপুর, নরসিংদীর পলাশের জিনারদা, চরসিন্দুর, নাটোরের বাগাতিপাড়ার দয়ারামপুর, ঢাকার সাভারের তেঁতুলঝোড়া, টাঙ্গাইলের কালিহাতির দশকিয়া, চাঁদপুরের মতলব উত্তরের গজরা, কালাকান্দা, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের করেরহাট, ১৪ নম্বর হাইতকান্দি, ১১ নম্বর মঘাদিয়া, ১০ নম্বর মিঠানালা, বাঁশখালীর সরল, সাতকানিয়ার সোনাকানি, ধর্মপুর, কুমিল্লা সদরের বাগমারা, বেলঘর (দক্ষিণ) এবং মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর।



মন্তব্য চালু নেই