ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাস্টার্ড বললেন অর্থমন্ত্রী

সিলেটে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ দেখালেন অর্থমন্ত্রীও। বললেন, ‘ওরা বাস্টার্ড। ওদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছি। কোনভাবেই ছাড় নয়।’ এর আগে ছাত্রলীগের একাধিক বিতর্কিত ঘটনায় নিজ নির্বাচনী এলাকা সিলেটেও বিব্রত হন অর্থমন্ত্রী। এমনকি মন্ত্রীর সমাবেশস্থলেও ভাঙচুর করা হয়েছিল। এসব ঘটনার পর নতুন দুটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে ছাত্রলীগকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু সামপ্রতিক সময়ে ফের বেসামাল হয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ। পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগের সখ্য ভাবের কারণে নগরজুড়ে নানা বিতর্কিত কাজ করেই চলেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা।

ওই ছাত্রলীগের হাত থেকে রেহাই পেলেন না ছাত্রলীগের এককালের নেতা ও বর্তমান প্রগতিশীল নেতা রজতকান্তি গুপ্ত। তিনি সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক। এর আগে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ খুনের দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও গণজাগরণের কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছিল ছাত্রলীগ কর্মীরা। রজতকান্তি গুপ্তের হামলার ঘটনায় সিলেটের প্রগতিমনাদের আন্দোলন মোড় নিয়েছে এই ঘটনাকে ঘিরে। দীর্ঘ এক সপ্তাহ ধরে ওরা তাদের সহকর্মী অনন্ত বিজয় দাশের খুনের ঘটনায় আন্দোলনে ছিলেন। এই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন রজত কান্তি গুপ্তের।

বৃহস্পতিবার রাতে তার ওপর হামলার ঘটনার পর গতকাল বিকালে সিলেট প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে। ছাত্রলীগের এ আচরণে সামাজিক নেটওয়ার্কে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন বিভিন্ন মহল। সিলেটের ছাত্রলীগের ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ। গতকাল সকালে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ সিলেটের সাংস্কৃতিক কর্মীরা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিকালে অর্থমন্ত্রী নিজেই ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রজতকান্তি গুপ্তকে দেখতে যান। এ সময় তিনি হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের বাস্টার্ড বলে আখ্যায়িত করেন। ওদের গ্রেপ্তারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সাংবাদিকদের জানান অর্থমন্ত্রী।

গতকাল সিলেটের প্রগতিমনা সংগঠনের নেতারা কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে বলেন, কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের চত্বর থাকবে সাংস্কৃতিক কর্মীদের দখলে। কিন্তু ছাত্রলীগের কাশ্মির গ্রুপের কর্মীরা ওই স্থান দখলে নিয়েছে। তারা এখানে আড্ডা গড়ে তোলেছে। আর কুকর্মের আখড়ায় পরিণত করেছে ওই এলাকা।

স্থানীয় দোকানিরা জানান, ছাত্রলীগ কর্মী পারভেজ হচ্ছে ওখানকার ছাত্রলীগের নেতা। তার নেতৃত্বে রিকাবীবাজার এলাকায় চাঁদাবাজি চলছে। ফুটপাথ, দোকান থেকে শুরু করে অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান করতে গেলেও তাদের চাঁদা দিতে হয়। চাঁদাবাজির ঘটনায় গত এপ্রিল মাসের ৪ তারিখে এ ব্যক্তি খুন হয়েছে। এ খুনের ঘটনায় পারভেজ গ্রুপ জড়িত রয়েছে বলে পুলিশ ইতিমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে। এরপরও পুলিশ খুনিদের ধরতে অভিযান চালায়নি। তারা জানান, ছাত্রলীগের পারভেজ গ্রুপের কারণে অতিষ্ঠ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সেটি একাধিকবার লামাবাজার ফাঁড়ির পুলিশ ও কোতোয়ালি থানা পুলিশ অবগত করা হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উল্টো ফাঁড়ি ইনচার্জ রবিউলকে ওদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দেখা যায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, পুলিশের সঙ্গে সখ্যর কারণে অডিটোরিয়াম এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল ছাত্রলীগ। এদিকে, প্রায় দুই মাস আগে নগরীর জিন্দাবাজারের জল্লাপাড় এলাকায় আড্ডাস্থল ছিল ছাত্রলীগের পারভেজ গ্রুপের। ওই সময় ছাত্রলীগের মীর্জা জাঙ্গাল গ্রুপের কর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকে পারভেজ ও সহযোগীরা অডিটোরিয়াম এলাকায় অবস্থান নেয়। ছাত্রলীগের এরকম আচরণে ক্ষুব্ধ সিলেটের প্রগতিমনারা। ক্ষোভ বিরাজ করছে গণজাগরণ মঞ্চের নেতাদের মধ্যেও। ফেসবুকে সিলেটের টাইম লাইনে ছাত্রলীগ সম্পর্কে এরকম মন্তব্য করেন গণজাগরণের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবুও।

তিনি বলেন, ‘রজতকান্তি গুপ্ত গণজাগরণ মঞ্চ সিলেটের একজন সংগঠক। সিলেট নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। গণজাগরণ মঞ্চ কিংবা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যারা রুষ্ট/ক্ষতিগ্রস্ত তারা তার ওপর হামলা চালাতেই পারে। তাই এই সময়ে যখন দিন-দুপুরে কুপিয়ে খুন করা হচ্ছে, তখন রজত দার উপর হামলা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে, ভয়ংকর বিষয় হলো, যারা হামলা চালিয়েছে তাদের পরিচয় জামায়াত-শিবির কিংবা মৌলবাদী গোষ্ঠী নয়। হামলাকারীরা ছাত্রলীগের ক্যাডার। সিলেটে ছাত্রলীগ এখন অধ্যাপক জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে কথা বলে। গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক/নাট্যকর্মীদের উপর হামলা করে। শিবির আর ছাত্রলীগকে খুব একটা আলাদা করা যাচ্ছে না।



মন্তব্য চালু নেই